পাতা:দর্পণ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিয়ের বয়স রম্ভার পার হয়ে গেছে, ভালমত পাত্ৰ জোটে নি। চাষীর ঘরের পক্ষে তার বেমানান ও নিন্দনীয় রূপ যৌবনটা অবশ্য তার বড় কারণ নয়। ঘরে ঘরে না থাক, এমন অনেক রূপসী মেয়ে আছে অনেক চাষীর ঘরে, চাষী সমাজে যাকে ভাল পাত্র বলা চলে সেরকম পাত্রেরও তাদের অভাব ঘটে নি। বীরেশ্বরের প্রকৃতি আর পছন্দ ওসব লোকের মত হলে কবেই হয় তো রম্ভারও বিয়ে হয়ে যেত। কিন্তু কতকগুলি বিচিত্ৰ মানুষ ও ঘটনার সংস্পর্শে বীরেশ্বর জীবনে কতগুলি অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে। চেতনার যে পরম রসায়ন সকল বিরোধী শক্তির সঙ্গে হার মানার আপোষ করে কোনমতে বেঁচে থাকার সন্তোষ নষ্ট করে দেয় তারই ছিটেফোটা সঞ্চারিত হয়েছে তার শোণিতে। তাই রক্তের যে উষ্ণতা তাকে সাধারণ নিয়মে নিছক একজন হিংস্ৰ প্ৰকৃতির কলহপ্ৰিবণ দাঙ্গাবাজ মানুষে পরিণত করে দিত। সেই উষ্ণতা আগুন হতে শিখেছে। তার মনের অনুমতি নিয়ে, মন যখন সায় দিয়েছে যে না, এ অন্যায় সত্যই সহ করা যায় না। ভালমন্দ পছন্দ-অপছন্দের একটা বিচারবুদ্ধি আছে বীরেশ্বরের, যা প্ৰায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির সামিল, অবশ্য চাষাড়ে পৰ্য্যায়ের। গায়ের প্রধান, বামুন আর জাতভাইরা মেয়ের জন্য তাকে জাতে ঠেলবার চেষ্টা করে, সে একরকম ব্যক্তিগত জোরজবরদস্তিতে সে চেষ্টা ৰাতিল করে দেয় । বলে, “জাতের বদলে সবাইকে না পারি, দু’একটাকে ফাসাবই তোমাদের, মা কালীর দিব্যি। ফ্ৰাসি যেতে হবে ? ঘাবো৷ ” একবার সে দাঙ্গা করে খুনের দায়ে জেলে যেতে বসেছিল, ঘটনাচক্রে দু’বছর জেল খেটেই রেহাই পায়। আরও কয়েকবার স্বদেশী বাবুদের সংসৰ্গ দোষের জন্য পুলিশ তাকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। এসব সকলের মনে আছে। বয়স বাড়লেও স্বভাব তার শুধরেছে। কিনা সন্দেহ । জাত R