পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পজাৱী, পত্র পরিবােৱ নিয়ে আজ প্রায় ত্ৰিশ বৎসর লছমীপরে বাস করচেন।. তাঁৱ বাড়ি ছিল নদীয়া জেলার মেহেরপর সাবডিভিসনে, এখনও তার জ্ঞাতিবগ সেখানেই আছে, পৈতৃক বাড়িও আছে, তবে সেখানে এদের যাতায়াত নেই বহনকাল থেকে। আমরা বললাম—এখানে আর কোনো বাঙালী আছেন ? —পাবে দজন বাঙালী ছিলেন সেন্টটের কাছারিতে, এখন আর নেই। —আপনার কোনো অসবিধা হয় না থাকতে ? —এখন আর হয় না, আগে আগে খবই হত। কি করি বলেন, পেটের দায়ে “সবই করতে, হয়। এখানে বছরে চার-পাঁচশো টাকা পাই-বাড়িভাড়া লাগে না, কিছৰ জমি-জায়গীরও দেওয়া আছে স্টেট থেকে। মরে গেলে বড় ছেলেটাকে বসিয়ে দিয়ে যাবো। ওকে সংস্কৃত পড়তে পাঠিয়েচি নবদ্বীপে, ওর মামার বাড়িতে। এক মস্ত অসবিধে মেয়ের বিয়ে দেওয়া, এখান থেকে হয় না। —সময় কাটােন কি করে এখানে ? —নিজের কাজ করি, একটা টোল খালেচি, ছাত্র পড়াই। পাঁচ-ছ-জন ছাত্র আছে — তার জন্য সেন্টট থেকে বত্তি পাই। অম্পিবাকার কাছে ইতিমধ্যে রাজবাড়ি থেকে খবর এল, রাণীমা এইবার পজা সেরে উঠেচেন এখন দেখা হতে পারে। অম্বিকা দেখা করতে গেল এবং আধঘণ্টার মধ্যেই বেশ হাসিমখে ফিরে এল। বললে-রাণীমা বড় ভালো লোক, উনি আমাকে সেটটের কাজ দিতে চেয়েচোন। খাব খাতির করেচেন আমায়। -এইবার চলো বেরিয়ে পড়া যাক। বেলা দটো বাজে, অত বড় বন পার হতে 303 (\DI —আমি জেলা বোন্ডের রাস্তা দিয়ে যাবার কথা বলছিলাম--নিশ্চয়ই তুমি বনের কথায় ভয় পেয়ে গিয়েচ.না ? --রাণীমা বলছিলেন বনে অনেক রকম বিপদ আছে। তবে তুমি না ছাড়ো, অগত্যা বনের পথেই যেতে হয়। লছমীপর ছেড়ে আমরা খানিকটা চড়াই পথে উঠেই একেবারে জঙ্গলের মধ্যে এসে পড়লাম। জঙ্গল খাব নিবিড় নয়, প্রধানত কেন্দ, শাল ও পিয়াল গাছ বেশি বনের গাছের মধ্যে। ঝোপ জিনিসটা বিহারে কোথাও দেখিনি এই জঙ্গল ছাড়া। শরতের শেষ, অনেক রকম বনের ফল ফটে আছে, অধিকাংশই অজানা-বাংলা দেশের পরিচিত বনফল একটাও চোখে পড়লো না কেবল শিউলি ফল ছাড়া। দ-একটা ছাতিম গাছও দেখা গেল, তবে তাদের সংখ্যা নিতান্ত কম। বনের মধ্যে পায়ে চলার একটা পথ কিছদর পয্যন্ত পাওয়া গেল। হঠাৎ এক জায়গায় গিয়ে পথটা তিনটা পথে ভাগ হয়ে তিন দিকে চলে যাওয়াতে আমরা প্রমাদ গণলাম। সঙ্গে গাইড নেওয়া যে কেন উচিত ছিল, তখন খব ভালো বঝলাম। আমাদের চারিধারে শােধ গাছপালা আর বনঝোপ-শােধ বনস্পতির দল আকাশের দিকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে—আমাদের মাথার ওপর বনগাছের ফাঁকে ফাঁকে শরতের নীল আকাশ। কোনো লোকালয় নেই, একটা লোক নেই যে তাকে জিজ্ঞেস করি পথের কথা । মনে একটা অদভুত আনন্দ এল। হঠাৎ কোথা থেকে। ঘরে বসে সে আনন্দ কোনোদিন কখনো পাওয়া যায় না। অম্বিকাও দেখলাম পথের নেশায় মাতাল হয়ে উঠেচে। ও বললে-চলো চোখ বাজে যে পথে হয়, না হয়। ܫ ܬܬ