পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সন্ধ্যা পৰ্যন্ত বনের মধ্যে ঘরবো, রাতু হয় গাছের ওপরে উঠে কাটিয়ে দেণ্ডীয় খাদ্বেগ আন্দাজ করে একটা পখ বেছে নিয়ে তাই ধরে চললাম। ক্রমশ বন নিবিড়ােতর হয়ে উঠেচে, আমাদের মনে হচ্ছিল যে, যে কোনো মহত্তে আমরা ভালক কি বাবেক্ষ সামনে পড়তে পারি। এ বনে সে ব্যাপারটা এমন কিছ: অসম্পভব নয়। অম্বিকা বললে,-এসো একটা রাত বনের মধ্যেই কাটিয়ে দেওয়া যাক। আমারও নিতান্ত অনিচ্ছা ছিল না, কিন্তু শেষ পয্যন্ত দেখা গেল দজনে সামনের দিকে এগিয়েই চলেচি, দিজনেরই ঝোঁক বন পার হয়ে ফাঁকা জায়গায় পড়বার দিকে। বনের মধ্যে কোনো গাছ নেই। যার ফল খাওয়া যায়, একমাত্র আমলকি ছাড়া। সেকালের মনিঋষিরা শোনা যায় বনের মধ্যে কুটির নিন্মাণ করে নাকি বনের ফল খেয়ে জীবনধারণ করতেন। কথাটার মধ্যে কতদর সত্যতা আছে জানি না। আমি অনেক সস্থানের বন ঘরে যে অভিজ্ঞতা লাভ করেচি, তাতে আমার মনে হয়েচে মানষের খাদ্যোপযোগী ফলের গাছ পাৰস্বত্য অরণ্যে কাচিৎ দেখা যায়-তাও আম, কলা, বেল, আনারস, লিচ প্রভৃতি ভালো জাতীয় ফল নয়-হয় আমলকি, কেন্দ প্রভৃতি নিকৃষ্ট শ্রেণীর ফল, বড়জোর বনো রামকলা, বিচি বোঝাই ও মানষের অখাদ্য। মানষের খাদ্যোপযোগী বহিঃপ্রকার ফলবিক্ষের একত্র সমাবেশ মানষের হাতে তৈরী ফলের বাগান ছাড়া আর थाG (था बाद का। আমি সিংডুম ও উড়িষ্যার অরণ্যাঞ্চলে দেখোঁচ শােধ শাল, অর্জন, বন্য আমলকি, কেন্দ, পলাশ ও আসান গাছ ছাড়া অন্য কোনো প্রকার গাছ মাইলের পর মাইল বিস্তীর্ণ অরণ্যের মধ্যে কোথাও নেই-একমাত্র আমলকি ও কোিদ ছাড়া এদের মধ্যে অন্য কোনো গাছে মানষের খাওয়ার উপযন্ত ফল ফলে না-হিমালয়ের ও আসামের আরণ্য প্রদেশেও খাদ্যোপযোগী ফলবিক্ষে বেশি নেই। উড়িষ্যার কোনো কোনো বনে বন্য বিষবক্ষ দেখা যায় বটে-কিন্তু তার ফলের ভেতরটা আঠা ও বিচিতে ভিত্তি, সবাদ কষা ও ঈষৎ তিন্ত, মানর্ষের পক্ষে অখাদ্য। বিশেষ করে আমার বলবার বিষয় এই সাঁওতাল পরগণা, দক্ষিণ বিহার, সিং ভূম ও মধ্যপ্রদেশের অরণ্য প্রদেশ মানষের প্রতি ভয়ানক নিন্ঠর-এখানে বিচিত্র বন্যা পক্ষপ নেই, খাওয়ার উপর্যন্ত বিশেষ কোনো ফল নেই। মনিঋষিরা আর যে কোনো বনেই বাস করন, এই সব স্থানের বনে নিশ্চয়ই বাস করতেন না-করলে অনাহারে মারা পড়তেন। অন্য কোনো দেশের অরণ্যে প্রকৃতি মানষের জন্যে ফলের বাগান সাজিয়ে যদি রেখেই থাকেন—তবে তার সন্ধান আমার জানা নেই। ফলের কথা বাদ দিয়ে এবার বন্য ফলের কথা বলি। বন্য পলেপির বিচিত্ৰ শোভার কথা শোনা যায় বটে, কিন্তু সব অঞ্চলের সব অরণ্যের বেলােয় সে কথা খাটে না। সাধারণত ধরে নিতে হবে সখাদ্য ফলের ন্যায় নয়নানন্দদায়ক পম্পের দর্শনও মানষের তৈরী উদ্যানেই মেলে-প্রকৃতি-রচিত আরণ্য অঞ্চলে মানষের সখে-সবিধার দিক থেকে দেখতে গেলে বড় কৃপণ। অতএব যে কোনো বড় অরণ্যে ঢািকলেই যে বন-পলেপির শোভায় মন মগধ করবে: এ যিনি ভাবেন, তিনি অরণ্য দেখে নিরাশ হবেন। বনের ফলে ফোটে বিশেষ বিশেষ ঋতুতে, তাও দ-এক রকম মাত্র ফলে সেই সেই ঋতুতে দেখা যায়—নানা ধরনের ফলে একসঙ্গে কখনোই দেখা যায় না। সে দেখা যায়। মানষের হাতের ফলের বাগানে। যিনি বহবিধ রঙীন পালে পর বিচিত্র সমাবেশ উদ্যানে ; অন্তত আমি এমন কোনো অরণ্য দেখিনি, যেখানকার বিচিত্র বন্যপাপশোভা ASOO