পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রামখানি ছোট-প্রায় সবই গোয়ালা অধিবাসী গ্রামে। বাড়ির মালিক বললেকোথা থেকে আসর্বােচন অ্যাপনায়া ? —ভাগলপার থেকে। -কিসে? -পায়ে হোটে, বৈদ্যনাথজী যাচি । কথাটা শনে শ্রদ্ধায় লোকটা অভিভূত হয়ে পড়লো। আমাদের বিশেষ অনরোধ করলে আমরা যেন সে-বেলা তার আতিথ্য স্বীকার করি। খাওয়া-দাওয়া সেরে ওবেলা রওনা হলে রাত আটটার মধ্যে আমরা ত্রিকটের পাদদেশে মোহনপর ডাকবাংলোয় পৌছে সেখানে রাত কাটাতে পারি। আমাদের রাজী না হয়ে উপায় ছিল না। অত রৌদ্রে ক্লান্ত শরীর নিয়ে পথ হাঁটা চলবে না এবেলা। লোকটির নাম হরবংশ গোপ। সে বাড়ির সবাইকে ডেকে এনে আমাদের দেখিয়ে বললে-“দেখ, কলিকালে ধৰ্ম্মম নেই কে বলে ? বাবাজীরা ভাগলপার থেকে পাঁওদলে আসচেন বৈদ্যনাথজীর মাথায় জল চড়াতে। অথচ বাবাবা ইংরিজি বিদ্যের জাহাজ-মিস্ত বড় এলেমদার লোক। দেখে শেখ। আমরা দরজনেই সঙ্কুচিত হয়ে পড়লাম-এ প্রশংসা আমাদের প্রাপ্য নয়। তীৰ্থ করতে আমরা যাচ্ছি নে এই সওয়া-শো মাইল হোটে-এই সরল পল্লীবাসীরা সে কথা বাঝবে না। পণ্যের আকর্ষণ ভিন্ন আর কিসের আকর্ষণে আমাদের এতখানি পথ টেনে এনেচে, তা এদের বোঝাতে গেলে আমাদের উন্মাদ ঠাওরাবে। অতএব ভ্যন্ত তীৰ্থযাত্রী সেজে থাকায় জটিলতা নেই ভেবে আমরাও ওদের কথার প্রতিবাদ করে ওদের ভুল ভাঙাবার আগ্রহ দেখলাম না। ওরা তারপর বিনীতভাবে জিজ্ঞেস করলে আমরা কি খাবো। আমরা বললাম—যা হয় খেতে পারি। তার জন্যে ব্যস্ত হতে হবে না। আমাদের খাওয়া না হলেও চলবে। হরিবংশ গোপ সে কথা শনলে না। চাল ডাল বার করে দিলে-আমরা রোধে খাবো। ওইখানে পড়ে গেলাম মশকিলে। পথে বার হয়ে পৰ্য্যন্ত রান্না করে খেতে হয়নি একদিনও । আমরা ওজার-আপত্তি করলাম-ওরা ব্রাহ্মণকে রোধে খাইয়ে জাত মারতে রাজী নয়। মহিষারডি গ্রামখানার অবস্থান বড় চমৎকার। বামে কিছদরে ত্ৰিকট শৈল ; ডাইনে খানিকটা নাবাল জমি, তাতে শািন্ধ বড় বড় পাথর ছড়ানো আর চারা শালের বন-দরে একটা বড় বনের শীষ দেশ দেখা যায়-খাব ফাঁকা জায়গাটা। তা ছাড়া অনেক আকর্ষণ আছে। এ ধরনের সদর প্রাকৃতিক দশ্যে ঐশবযবান গ্রাম রেল সেন্টশনের কাছে থাকলে নিশ্চয়ই সেখানে কলকাতার লোকে বাড়ি না করে ছাড়তো না। গ্রামের যেদিকটা নাবাল জমি, তার বড় ঢালতে চারা শালের বনে খাব বড় তিন-চারখানা শিলাখণ্ডড ঠিক যেন হাতীর মতো উচু ও বড়। অন্তত দাখানা এমন শিলার ওপরে দটি অজািন গাছের চারা ঠিক একেবারে পাথর ঘেষে দাঁড়িয়ে ও দটােতে যথেষ্ট ছায়াদান করচে। বেশ ওঠা যায় পাথরে-সকালে বিকালে, রাত্রে ত্ৰিকট শৈল ও পেছন দিকের মক্ত প্রান্তরের দিকে চোখ রেখে অনেকক্ষণ বসে আপনমনে কাটানো যায়, বই পড়া যায়-বড় সদর নিভৃত শিলাসন। আশেপাশে নিকটে দরে অনেকগলো পলাশবক্ষ। SO(k