পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মারিনি—আর বনো বাঘ কখনও দেখিওনি। তার গভজন শনে আর চেহারা দেখে আমার হােত পা কাঁপতে লাগলো। বন্দকে হাত থেকে পড়ে যায়। আর কি। তারপর সেই বাঘ যখন আমার বন্ধীর গলি খেয়ে লাফ মেরে ভীষণ হাঁক দিয়ে দিয়ে সামনে, উঠতে গেল-আমি মাচানের পেছন দিয়ে লাফ দিয়ে মাটিতে পড়বার চেষ্টা করলাম। আমার তখন জ্ঞান নেই, বন্ধিসদ্ধি লোপ পেয়েচে ভয়ে। দৰ-দাবার বাঘ লাফ মারলে দ্য সেকেন্ডের মধ্যে দাবার, আমি পেছন থেকে লাফ দিয়ে মাটিতে পড়বার চেন্টা করলাম। সেই দাই সেকেন্ডের মধ্যে। পারলাম না। শােধ গাছের সঙ্গে বাঁধা। আছি বলে। তখন বন্ধ বললে, যদি তোমায় না বাঁধাতুম, বঝেছ এখন কি হ’ত ? —বাঘ মারা পড়লো শেষ পয্যন্ত ? —নাঃ, সে রাত্রে সেটা পালালো। পরদিন সকালে এক মাইল দরে এক জায়গায় ঘাসের মধ্যে বসে আছে, তখন আবার গলি করা হল। বাঘ চাজ করলে-তখন দাই ভুরার মাঝখানে আর এক গলি। ওই হচ্চে আসল জায়গা, যতক্ষণ ওখানে গলি না। লাগচে, ততক্ষণ বাঘ বা কোনো জন্তু কাব্য হবে না। অন্য যে কোনো জায়গায় গলি লাগিলে, বাঘ জখম হতে পারে বটে, মরবে না। আমি জানতুম মাধোলাল বড় শিকারী না হলেও ইদানীং জানোয়ার মেরেচে। অনেক। আমার বন্ধর মখেই ওর শিকারের অনেক গলপ শানেচি। বললাম—আচ্ছা মাধোলালজি অনেক বনে তো বেড়িয়েচ, কখনো কোনও অদ্ভুত ধরনের জানোয়ার, যার কথা কেউ জানে না—এমন কিছ দেখেচ ? আমার এ প্রশেনর উদ্দেশ্য এমন সন্দের জ্যোৎস্না-রাত্ৰিতে এই বহৎ অরণ্যের প্রান্তে বসে মনে একটি রহস্য ও ভয়ের ভাব নিয়ে আসা। জীবনকে উপভোগ করবার একটা দিক হচ্ছে, যে-সময়ে যে-রাসের বা অনভূতির আবিভােব প্রীতিকর—সে সময়ে সেটি মনে আনবার চেন্টা করতে হবে। দরে বনরেখা জ্যোৎস্নার আলোয় অস্পন্ট দেখালেও টানা, সোজা, কোণাকুণি রেখাটি টেচ ভাবে দািরদিগন্তে যে কোন মায়ালোকের সীমা নিন্দেশ করচে, আকাশচু্যত জ্যোৎস্না-রাত্রির দল যেন ওই বনের অন্তরালে দল পাকিয়ে থাকে-আরও কত অজানা সৌন্দয্য, অজানা ভয়, অজানা। বিপদের দেশ ওটা। আমার সামনে বড় একটা শিলাখণড, তার গা ঘেষে একটা বাঁকা গাছ। গাছটার বড় বড় পাতা, অনেকটা পোপে পাতার মত, পাথরখানার ওপর অনেকগলো শকিনো, পাতা ঝরেও পড়েচে—তার মধ্যে খড় খড় শব্দ কলে এদেশী বড় বহরমপী যাতায়াত করাচে । মাধোলাল আমার কথার উত্তরে বললে-না। বাবজি, তা কখনো দেখিনি। —দেখা ভেবে। তোমার দেখে আশচয্য মনে হয়েছিল, এমন কিছ ? আমি ওকে ছাড়াচিনে, ও না বললে কি হবে ? এমন সন্দের জ্যোৎসনারাত্রে ওর মখে একটা অদ্ভুত ধরনের গলপ না শনলেই চলবে না। আমার। কিন্তু মাধোলাল অনেক আকাশপাতাল ভেবেও কিছ বার করতে পারলে না। অদ্ভুত জানোয়ার কিছ দেখেনি, তবে বাঘ তারপর দ-চারটে মেরেচে, ভালক, শায়েরও -আর হরিণের তো কথাই নেই। বললাম—তবে মাধোলাল, আমার একটা আশচয্য গলপ শািনবে ? মাধোলাল উৎসাহের সঙ্গে বললে-“নিশ্চয়ই, বলন। বানিয়ে বানিয়ে ওকে একটা খাব বড় ও অদ্ভুত ধরনের জানোয়ারের গলাপ করলাম-আরাকান ইয়োমার জঙ্গলে দেখেছিলাম। মাধোলাল বিশ্ববাস করলো। SS6