পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সকালের হাঁটাই হল আসল। বিকেলে বেশিদর যেতে না যেতে বনের মধ্যে ক্রমশ ঘন ছায়া নেমে অধিকার হয়ে আসতো, তখন কোথাও আশ্রয় না নিলে চলতো না। দাপরে অনেকখানি পথ হোটে একটা সন্দর জায়গা আমরা বেছে নিতুম যেখানে বড় বড় গাছের ছায়া, ঝরনার জল কাছে, বসবার উপযক্ত শিলাখণ্ডড পাতা, পাখীর কাকলীতে বনভূমি মােখর। তারপর মান্দার জায়গাটা ডালপালা ভেঙ্গে পরিস্কার করতো, আমরা কম্পবল পেতে ফেলতুম তিন-চারখানা-কখনো বা জোড়া দিয়ে, কখনো আলাদা আলাদা। কত রকমের গলপ হত, চা চড়তো, আমরা চা খেয়ে খাব খানিকটা বিশ্রাম করে ঝরনার জলে নেয়ে আসতুম—এদিকে মান্দার রান্না চড়িয়েচে, আরও কিছশক্ষণ বসবার পরে মান্দার শালপাতায় আমাদের ভোজ্য পরিবেষণা করতো। খেয়েদেয়ে ঘণ্টাখানেক সবাই ঘামিয়ে নিতো, তারপর আবার উদ্যোগ করে তাঁব উঠিয়ে সবাই মিলে রওনা হওয়া যেতো। কোনো উদ্বেগ নেই, চিন্তা নেই মনে—দর কোনো বক্ষচ্যুড়ায় ময়রের ডাক, বনের ডালপালায় বাতাসের মৰ্ম্মমরি শব্দ, ঝরনার কলতান, প্রচুর অবকাশ ও আনন্দ, এ যেন আমরা আবার আমাদের প্রাচীন অরণ্যজীবনে ফিরে গিয়েচি। বিংশ শতাব্দীর কম্পমবহল দিনগলি থেকে পিছ হেটে দায়িত্বহীন মক্তজীবনের আনন্দে আমাদের মন ভরপাের। তা ছাড়া, এই বিরাট বনপ্রকৃতির নিবিড় সাহচৰ্য্যও আমাদের সকলের মনে কেমন একটা নেশা জাগিয়ে তুলেচে। • আমাদের মধ্যে একজন বললে, তার কোনো এক বন্ধ আলমোড়া থেকে পায়ে হোটে হিমারণ্যের বিচিত্র সৌন্দয্যের মধ্যে ওই পথে গঙ্গোত্রী যমনোন্ত্রী যাবার জন্যে বেরিয়েছিল, সে ফিরে এল না। এখন ওইখানে কোনো জায়গায় থাকে, সাধসন্ন্যাসীর জীবন যাপন করে। হিমালয়ের নেশা তাকে ঘরছাড়া করেচে। একদিন সন্ধ্যাবেলা আমরা একটি ক্ষদ্র গোঁড় বস্তিতে পৌঁছলাম। আমাদের থাকবার উপযন্ত ঘর নেই। সেখানে, ছোট ছোট কুড়ে ঘর, তাদেরই জায়গা কুলোয় না। অবশেষে একটা গোয়াল ঘরে আমাদের জায়গা করে দিলে। কিছদক্ষণ পরে বস্তির লোকজন আমাদের ঘিরে গলপ-গজব করতে এল। একজন বললে—তোরা ভাল্লকের ছানা কিনীবি ? মতো জীব নিয়ে এল। মাত্র দ মাস করে তাদের বয়েস, এই বয়সেই বড় কুকুরের মতো গায়ে গক্তি। ওরা বললে, একটা বাঘের বাচ্চাও ছিল, কিছদিন আগে ডোঙগরগড় থেকে এক সাহেব শিকারী এসেছিল, তার কাছে ওরা সেটা বিক্ৰী করেচে। আমরা ভালকের ছানা কিনিনি, বনের মধ্যে কোথায় কি খাওয়াবো, দলের অনেকেই আপত্তি করলে। বস্তিটাতে ঘর-দশোক লোক বাস করে। আমরা বললাম-তোমরা জিনিসপত্র কেনো কোথা থেকে ? ওরা বললে—এখানে আমরা ভুট্টা আর দেধানার চাষ করি। নন কিনে আনি শধ অমর-কণাটকের বাজার থেকে। তীরন্ধনক আছে, পাখী আর হরিণ শিকার করি। অমর-কণাটকের মেলার সময় হরিণের চামড়া, ভালকের ছানা, পাখীর পালক ইত্যাদি বিক্ৰী করি যাত্রীদের কাছে। তা থেকে কাপড় কিনে আনি। বেশ সহজ ও সরল জীবনযাত্রা। তবে এরা বড় অলস। জীবনযাত্রার অনাড়ম্বর সরলতাই এদের অলস ও শ্রমবিমখ করে তুলেচে। পয়সা দিতে চাইলেও কোনো শ্রমসাধ্য কাজ এরা সহজে করতে রাজী হয় না। পয়সা রোজগার করবার বিশেষ NO SRY