পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেজে গিয়েচে-কাল পরশ কোথায় খাবো, কোথায় ঘামবো কিছই ঠিক নেই। পথে বেরলে শরীরটাকে আগে ঠিক রাখতে হবে। সারারাত্রি ট্রেন চললো। আমরা সবাই শহয়ে পড়লাম-কখন যে ঘােম এসেছে, আর কিছই জানি না। ফিরিওয়ালার চীৎকারে ঘােম ভেঙে দেখি ভোর হয়ে গিয়েচে । একটা বড় সেন্টশনে ট্রেন দড়িয়ে আছে-আর সামনের রাস্তা দিয়ে লম্বা মোটরের, সারি ক্রমাগত সেন্টশনের দিকে আসচে। তার আগে কখনো টাটানগর দেখিনি—এ বনজঙ্গলের দেশে এত মোটর গাড়ির ভিড় যখন, এ টাটানগর না হয়ে যায় না। আমার নিদ্ৰিত সঙ্গীদের ঘােম তখনও ভাঙেনি। আমি হাঁক দিয়ে বললাম-ও প্রমোদবাব, ও কিরণ-ঘামতেই এসেচ কি শধ পয়সা খরচ করে ? উঠে টাটানগর দেখ-টাটানগর এসেচে পরিমল উঠে চোখ মাছতে মছতে বললে—কি স্টেশন এটা ? -টাটানগর। - PGRIT 35 AVST ? —অভাব কি। ওদের সব ঘাম ভাঙিয়ে দাও-চা ডাকি। প্রমোদবাবা প্ল্যাটফৰ্ম্মে নেমে বললে-আরো এ টাটানগর কোথায়! লেখা আছে সিনি জংশন। আমরা সবাই অবাক, এ কি, এত বড় জায়গা-এত মোটরের ভিড় সিনি জংশনে! কখনও তো নামও শনিনি। দ-চারজন লোককে ডেকে জিজ্ঞেস করে জানা গেল এত মোটরের ভিড়ের কারণ, সেরাইকেলার রাজার ছেলের বিয়ে-সিনি জংশন থেকে সেরাইকেলা মাইল পনেরোকুড়ি পথ-এসব মোটর বরযাত্রী নিয়ে আসচে সেরাইকেলা থেকে। আমরা চা খেয়ে ট্রেনে উঠে বসলাম। ট্রেন ছেড়ে দিল। আমার বন্ধীরা সব জানালার কাছে বসেচে। প্রমোদবাব কেবল চে’চিয়ে বলেন —ও বিভূতিবাব, এমন চমৎকার একটা পাহাড় গেল দেখতে পেলেন না। ওদিকে কিরণ চোচিয়ে ওঠে—কি সন্দির নদী একটা ! দেখােন দেখান—এই জানলায় আসন-চট করে বেঙ্গল নাগপাের রেলপথের গৈলকেরা সেন্টশন থেকে মনোহরপর পয্যন্ত দল ধারের অরণ্যপব্বতের দশ্য অতুলনীয়। গৈলকেরা স্টেশনে এসে পাহাড় জঙ্গলের দশ্য দেখে প্রমোদবাবা তো একেবারে নিবাক ! পরিমলবাব সেন্টশনের প্ল্যাটফৰ্ম্ম থেকে সামনের পাহাড়ের একটা ফটো তুলে নিলেন। তারপর রেলপথের দাধারেই অপব্ব দশ্য—জানালা থেকে চোখ ফেরাতে পারিনে। গৈলকেরা স্টেশনে বড় বড় পোপে গোটকতক কেনা হয়েছিল-কিরণ সেগলো ছাড়িয়ে ভালো করে কেটে দিলে। বসন্ত কাল, বনে বনে রক্তপলাশের সমারোহ, সারেঙ্গ টানেলের মাখে ধাতুপ ফলের বন, শালবনে কচি সবাজপত্রের সম্পভার, প্রচুর সােয্যালোক, বনের মাথার ওপরে নীল আকাশ, মাঝে মাঝে বনের মধ্যে পাববত্য নদী শীর্ণ ধারায় সাঁপিল। গতিতে বয়ে চলেচে, কোথাও একটা বড় নিজজন পথ রেললাইনের দিক থেকে গভীর বনের মধ্যে অদশ্য হয়ে গেল, কোথাও প্রকান্ড কোয়াত্তজ পাথরের পাহাড়টা বনের মধ্যে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে, কোথাও একটা অদ্ভুতদৰ্শন বিশাল শিলাখণ্ডড বনের মধ্যে পড়ে আছে —প্রমোদবােব আর কিরণের খশি দেখে কে! পরিমল বেচারী তো ফটাে নেবার জন্যে ছটফট করচে, আর কেবল মাখে বলচে, ওঃ, এইখানে যদি ট্রেনটা একটি দাঁড়াতো! ওখানে যদি ট্রেনটা একটি দাঁড়াতো! 99SR