পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেলা দটাের সময় ঝােসাগড়া স্টেশনে গাড়ি দাঁড়ালো! এখানে আমরা চা খেয়ে নিলাম। প্রমোদবাব টাইমটেবল দেখে বললেন-বিছানা বেধে ফেলন সবাই, আর দলটাে সেন্টশন। পরেই বেলপাহাড়। ওখানেই নামতে হবে। ইব বলে একটা ছোট সেন্টশন ঘন বনের মধ্যে। সথানটার বড় চমৎকার শোভা। সেন্টশনের কাছেই একটা নদী, তার দােপারে ঘন বন, বনের মধ্যে রাঙা ধাতুপ ফলের মেলা। একটা লোককে জিজ্ঞেস করে জানা গেল নদীর নাম ৱাহ্মণী বা বামনী।" বেলপাহাড় সেন্টশনে নামবার আগে দেখি ছোট সেন্টশনের প্ল্যাটফর্মে অনেকগলি যেতেই তারা আমাদের কাছে। ছটে এল-উড়িয়া ভাষায় বললে-বাবােরা কলকাতা থেকে रूाक्र65न्म ? -হ্যাঁ। তোমরা কাকে খাজচো ? —সম্পবিলপরের ডেপটি কমিশনার সাহেব আমাদের পাঠিয়ে দিয়েচেন । আপনাদের আসবার কথা ছিল, আপনাদের সব বন্দোবস্তের ভার নেবার পরোয়ানা দিয়েচেন আমাদের ওপর। প্রমোদবাবর দাদা বন্ধবের নীরদবাবার সঙ্গে সম্পবিলপরের ডেপটি কমিশনার মিঃ সেনাপতির আলাপ ছিল, সেই সত্রে নীরদবাবকে দিয়ে একখানা চিঠি লিখিয়ে এনেছিলাম, আমি ও প্রমোদবাব কয়েকদিন পকেব। চিঠির মধ্যে অনরোধ ছিল যেন গ্রাম্য পলিস আমাদের গন্তব্য স্থানে যাবার একটি ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু সে ব্যবস্থা যে এভাবে অভ্যর্থনায় পরিণত হবে তা আমরা ভাবিনি। বেলপাহাড় সেন্টশন থেকে কিছদরে ডাকবাংলোয় তারা নিয়ে গিয়ে তুললে। একটা দরে একটা বড় পাকুর, আমরা সকলে পাকুরের জলে নেমে সনান করে। সারাদিন রেলভ্রমণের পরে যেন নতুন জীবন পেলাম। পাকুরের পাড়ে পরীর জগন্নাথের মন্দিরের অন্যাকরণে একটি ক্ষদ্র মন্দির। স্থানটি চতুদিকে পাহাড়ে ঘেরা—অবিশ্যি পাহাড়শ্রেণী দরে দরে। একটি বদ্ধ ব্রাহ্মণ ডাকবাংলোয় আমাদের জন্যে রান্না করে রেখেচে । সন্নান করে এসে আমরা আহারে বসে গেলাম, শালপাতায় আলোচলের ভাত আর কাঁচা শালপাতার বাটিতে ডাল। পাচক ব্রাহ্মণটি যেন সাত্ত্বিকতার প্রতিমাত্তি, শান্ত নমস্বভাব —আমাদের ভয়েই যেন সে জড়সড়। সঙ্কোচের সঙ্গে ভয়ে ভয়ে আমাদের পরিবেশন করছিল-যেন তার এতটকু ত্রটি দেখলে আমরা তাকে জেলে পাঠাবো। ডেপটি কমিশনারের বন্ধ আমরা-বলা তো যায় না। তারপর জিজ্ঞেস করে জানা গেল ব্রাহ্মণ পকুরপাড়ের সেই মন্দিরের পাজারী। বেলা পড়ে এসেচে। রাঙা রোদ দারের পাহাড়ের মাথায়, শালবনে, রাঙা মাটির টিলার গায়ে। কি ঘন শালবন, দরে দরে নিজজন পর্বতমালা। ডাকবাংলো থেকে অলপদরে একটি গ্রাম্য হাট বসেচে। আমরা হাটে বেড়াতে গেলাম। উড়িয়া মেয়েরা হাট থেকে ঝড়ি মাথায় বাড়ি ফিরচে। আমরা হাট বেড়িয়ে বেড়িয়ে দেখলাম। পরিমল কয়েকটি ফটাে নিলে। বেগন, রেড়ির বীজ, কুচো শটকি চিংড়ি, কুমড়ো প্রভৃতি বিক্রি হচ্চে। এক দোকানে একটি উড়িয়া যাবতী ধান দিয়ে মড়কি কিনচে। সন্ধ্যার ছাযা নেমে এল। আমরা ডাকবাংলোর বারান্দায় চেয়ার পেতে বসলাম । পাচক ব্ৰাহ্মণটি এসে বিনীত ভাবে উড়িয়া ভাষায় জিজ্ঞেস করলে, রাত্রে আমরা কি