পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গন্ধ আমাকে আমার উত্তর-বিহারে যাপিত অরণ্যবাসের দিনগলির কথা মনে করিয়ে দিয়ে এই রাত্রি, এই জ্যোৎস্নালোককে আরও মধ্যময় করে তুলেচে। দটাে তারা উঠেচে বাঁদিকের পাহাড়শ্রেণীর মাথায়। বহিস্পতি ও শক্ত। পাক সাকাসে টাইশানি করতে যাবার সময় রোজ দেখতুম, তারা দটো বড় বড় বাড়ির মাথার উপর উঠচে। সেদিনও দেখে এসেচি। চোখ বজে কলপনা করবার চেন্টা করলাম কোথায় পাক সাকাসের সেই তেতলা বাড়িটা, সেই ট্ৰাম লাইন, আর কোথায় এই মন্ড প্রান্তর, জ্যোৎস্না-ওঠা-বনভূমি, ঝরনা, বাঁশবন, পাহাড়শ্রেণী ! ... কোনো দিক কোনো শব্দ নেই। একা যেন এই সৌন্দয্যলোকের অধিবাসী। মন এ সব সস্থানে অন্য রকম হয়ে যায়। প্রত্যেকের উচিত গভীর নিজজন সথানে মাঝে মাঝে বাস করা। মন অন্যরকম কথা কয় এই সব জায়গায়। মনের গভীরতম দেশে কি কথা লকোনো আছে, তা বঝতে হলে নিজজনতার দরকার। ভারতবর্ষের রােপও যেন ভালো করে চেনা গেল আজ। বাংলার সমতলভূমিতে বাস করে আমরা ভারতের ভূমিশ্ৰীীর প্রকৃত রূপটি ধরতে পারি না। অথচ এই রাস্তা, মাটি, পাহাড় আর শালবন---এখান থেকে আরম্ভ করে সমগ্র মধ্য ভারতের এই রূপ। খড়গপর ছাড়িয়েই আরম্ভ হয়েছে। রাঙা মাটি, পাহাড় আর শালবন—এই চারশো মাইল বরাবর চলেচে : শািন্ধ, চারশো কেন, আটশো মাইল আরও চলেচে সহ্যাদ্রির অরণ্যানী ও ঘাটশ্রেণী পয্যন্ত। ওদিকে মহীশর, নীলগিরি, মালাবার উপকালে ট্রপিক্যাল অরণ্য। আযাবত্তের সমতলভূমি পার হয়েই নগাধিরাজ হিমালয়-ভারতের আসল রােপই এই। বাংলা অন্য ধরনের দেশ-বাংলা শ্যামল, কমনীয়, ছায়াভিরা ; সেখানে সবই মদ, সরকুমার, গাছপালা থেকে নারী পয্যন্ত। এখানে প্রকৃতি যেন শিবমত্তি ধরেচে—কমনীয়তা নেই, লাবণ্য নেই।--শাধ রক্ষ, বিরাট, উদার। উড়িষ্যা ও মধ্যভারতের বনের শিববক্ষে যেন এখানকার প্রকৃতির রাপের প্রতীক। অনেক রাত্রে ডাকবাংলোয় পৌঁছলাম। বন্ধ্যরা তখনও কেউ আসেনি। একাই অনেকক্ষণ বসে রইলাম। ঘণ্টাখানেক পরে ওরা এল। বললে, সেন্টশনের কাছে একটা হায়েনা মেরেচে। দেখে এলাম। --কে মেরে চে গ’ —রেলের এক সাহেব। দেখে এসো, প্লাটফর্মে মরা হয়েনাটা এনে রেখেচে । — তার চেয়ে ঠাকুরকে চা করতে বলা যাক, এসো চা খাওয়া যাক। মরা হয়েনা দেখে কি হবে। সেই পাজারী ঠাকুর পরম নিম্ঠার সঙ্গে আমাদের ভাত বেড়ে দিলে। এত রাত হওয়া সত্ত্বেও গ্রামের অনেকগলি লোক ডাকবাংলোয় এসেছিল আমাদের বিদায় দিতে। দরে পাহাড়ের মাথায় চাঁদ অসন্ত গেল। আমরা স্টেশনে চলে এলাম, য়াত দটােয় ট্রেন, শীত পড়েচে খব। পাটোয়ারী হাত জোড় করে বললে-বাবা, বিম্বাধরের আজিজটা মনে আছে তো ? আমায় বার বার করে বলে দিয়েচে আপনাদের মনে করিয়ে দিতে। আপনারা বড়লোক, একটা বলে দিলেই গরিবের অনেক উপকার হয়। কথাটা ঠিক, কিন্তু বলি কাকে ? হায় বিশ্বব্যাধর । SV)