পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গিয়ে নিজেকে আরও অসাখী করে তোলে.আজ যে মার্টিন লাথারের জীবনী পড়ছিলাম, তাতে মনে হোল এক এক সময় এক-একজন ব্রাত্যমন নিয়ে পথিবীতে এসে শািন্ধ যে নিজেই স্বাধীন মত ব্যক্ত করে চলে যায় তা নয়, জড়মনকেও বন্ধন মন্ত করে দেবার সাহায্য করে। যেমন সহস্ৰ বৎসরের পঞ্জীকৃত অন্ধকার এক মহত্তের একটা দেশলাইয়ের কাঠির আলোতেই চলে যায়-তেমনি। কাউকে ঘণা করলে হবে না। এ জগতে যারা হিংসক, সাবাথান্ধ নীচমনা তাদের আমরা যেন ঘণা না করি. শািন্ধ উচ্চ জীবনানন্দ তাদের দেখিয়ে দেবার কেউ নেই বলেই তারা ঐ রকম হয়ে আছে। কোন মন্ত পােরষি অনন্ত অধিকারের বাত্তা তাদের উপেক্ষিত বন্ভূক্ষাশীর্ণ প্ৰাণে পৌছে দেবে ? ।। ২৭শে অক্টোবর, ১৯২৪, কলিকাতা। হঠাৎ পরোনো দিনগালো মনে এল। মনে এল কতকগালি ছায়াভিরা বৈকাল কতকগালি সন্দর জ্যোৎস্নাভিরা রাত্রির সন্ধ্যা, সবগলিই কেমন গভীর, অনন্ত, রহস্যময়। সময় তাদের দ পােশ বেয়ে ছটে চলে তাদের কোন দরে নিয়ে ফেলেছে যেমন ভবিষ্যৎও মানষের মনে বড় গভীর ও অনন্ত বলে মনে হয়, অতীতও অলপদিনের হলেও তার চেয়েও গভীর বলে মনে হয়, রহস্যময় বলে মনে লাগে, হারিয়েযাওয়ার-গভীরতা-মাখানো রহস্য তাদের অঙ্গে অঙ্গে জড়ানো—অনেকদিন হ’ল প্রাচীন অতীতে মিশে গেলেও তাদের গন্ধ, শব্দ, রােপ এখনও আমার মনের মধ্যেই আছে। মনের যেখানে তাদের আশ্রম, একদিনে-কিসে বলা যায় না, হঠাৎ সেই তারে ঘা পড়ে যায়, তখন অতীত মহাত্ত গলি তাদের অতীত গন্ধে রাপে বর্ণে শব্দে, সখে দুঃখে, হাসি আশ্রতে, আশায় নিরাশায়, মঙ্গল অমঙ্গলে, সৌন্দয্যে রসে একেবারে প্রত্যক্ষ বাস্তব হয়ে মহত্তের জন্যে উদয় হয়। কিন্তু মহত্তের জন্যে, তারপরই আবার চোখের ভ্ৰমজলের মত পরমহত্তেই মিলিয়ে যায়— ।। ২৯শে এপ্রিল, ১৯২৫, ভাগলপাের। হঠাৎ যেন মনে হ'ল হাজার বছর আগে যে সব পাখী বনে বনে গান গেয়ে চলে গিয়েছে, আজ এই ছায়াভিরা সন্ধ্যায়। তারাই যেন আবার কোথা থেকে গেয়ে উঠলো। যে সব ছেলেমেয়ে হাজার বছর আগে মা-বাপের কোলে মিলিট হাসি হেসে কতদিন হ’ল ছেলেবেলায় দেখা সাবপেইেনর মত কোথায় মিলিয়ে গিয়েছে, আজ সন্ধ্যায় সেই সব অস্পষ্ট দর অতীতের ছেলে পিলের মিলিয়ে যাওয়া হাসিরাশি-নদীর ধারে বনে বনে মাঠে মাঠে-ঝোপে ঝোপে—ফল হয়ে ফটে গোধলির অাঁধার আলো করে আছে। তার ক্ষদ্র জগতে সন্ধ্যা হয়ে এল। রায়েদের কাঁঠালতলায়, পাকুরধারে, টানদের উঠোনে, নেড়াদের বাড়ীর সামনের বড় গাছটার তলায় অন্ধকার হয়ে এল, খেলাঘরের খাদ্র জগতের চারদিক অন্ধকার হয়ে এল। জগতের অসংখ্য আনন্দের ভান্ডার উন্মািক্ত আছে। গাছপালা, ফল, পাখী, উদার মাঠঘাট, সময়, নক্ষত্র, সন্ধ্যা, জ্যোৎস্না রাত্রি, অসত সয্যের আলোয় রাঙা নদীতীর, অন্ধকার নক্ষত্রময়ী উদার শান্য.এসব জিনিস থেকে এমন সব বিপােল, অবক্তব্য আনন্দ, অনন্তের উদার মহিমা প্ৰাণে আসতে পারে, সহস্ৰ বৎসর ধরে তুচ্ছ জাগতিক বস্তু নিয়ে মত্ত থাকলেও সে বিরাট, অসীম, শান্ত উল্লাসের অস্তিত্ব সম্পবন্ধেই কোন জ্ঞান পৌছয়। না। জগতের শতকরা নিরানব্বই জন লোক এ আনন্দের অস্তিত্ব সম্পবন্ধে মতুদিন পৰ্য্যন্ত অনভিজ্ঞই থেকে যায়-শতবর্ষজীবী হলেও পায় না.অন্যরােপ শিক্ষা, সহচৰ্য্য, আদশ, যে রপ-আনন্দের পথ দেখিয়ে দেবার জন্য প্রয়োজন হয়, দভাগ্যক্রমে