পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দরে ক্রমবিলীয়মান শ্যাম তটভূমির দিকে একদলেট তাকিয়ে আছে। ছোট ছেলেটি সবে বছর দশেক হল পথিবীতে এসেছে। তার মধ্যে বছর পাঁচেক তো তার জ্ঞানই হয়নি। অতএব সবে বছর পাঁচেক হল তার দেখবার শনিবার চোখকান ফটেছে মাত্র -সে চঞ্চলভাবে এদিকে ওদিকে চাইছে-আঙল দিয়ে উৎসাহ পণ্য সবরে এটা ওটা দেখিয়ে বলছে-“ঐ দাখো কাকাবাব, কেমন পাহাড়টা, ঐ দ্যাখো, ওটা ?-পাহাড়ের ওপর বন ? বাঃ বেশ তো ? ঐ দ্যাখো কাকাবাব কেমন একটা পাখী”-প্রৌঢ় বসে বসে ভাবছে অমকের কাছে যে দেনাটা ছিল সেটা আদায় করে আসবার কোনো ব্যবস্থা হয়নি। বড় ভুল হয়ে গেছে তো! আমাকের জমিটার দর আর একটি বেশী দিলে হয়ত দিয়ে দিত-জমিজমা এই সময় না। কিনলে-কাটলে ভবিষ্যতে কি করে ছেলেপিলেদের চলবে? তার প্রপিতামহ কোন প্রাচীনকালে যে জমিজমা করে রেখে গেছেন তাতেই এখনও চলছে—সে সব কি আজকের কথা! তখন সত্যযােগ ছিল, অমকের দর শানেছি। আমাক ছিল। আর এখন ! বাপরে, আগন, ছোঁয়াও যায় না (দীঘনিঃশবাস)...ছেলেটা এই সময় জিজ্ঞাসা করলে—কাকাবাব, আমরা যে অমক শহরে যাচ্ছি সেটা কি খাব বড় জায়গা ? -ওঃ, কত বড় জায়গা তা দেখিস—পাড়াগাঁয়ের মধ্যে ও-রকম জায়গা কোথায়? --কাকাবাব, শহরটা কি খাব পরানো ? কাকাবাব (মরাবিয়ানার হাস্যে)—হিঃ হিঃ, বলে। কিনা খাব পরানো ওরে পাগল, আমার প্রপিতামহ অমক জায়গার দেওয়ান ছিলেন, তখনও ঐ শহর এত বড়ই ছিল...তবে তার চেয়ে এখন অবিশ্যি আরও ঢ়ের উন্নতি হয়েছে। ও-শহর আরও পরোনো-কত পরোনো তা বলা যায় না, মোটের ওপর অনেক কালের প্রাচীন জায়গা. তাদের সমস্ত কথাবাত্তার সময় অনাগত ভবিষ্যতের এই দলটি নতুন মানষে জানতো না। তাদের জাহাজ যে সমদ্র বেয়ে যাচ্ছে তার নীচে, অনেক অনেক নীচে, বালি কাদা খোলা পাথর, উদ্ভিজজ-পচা এ টেল মাটির সত্তরের নীচে, ভিন্ন যাগের এক বিশাল নগর, তার মেমোরিয়াল মনমেণ্ট প্রাসাদ অট্টালিকা চত্বর বিদ্যালয় গহস্থবাৰ্টী বাগান আশা-ভরসা সখি-দঃখ নিয়ে সবসদ্ধ একেবারে পতে গিয়ে চাপা পড়ে রয়েছে। ছিল, কোনো বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল, কত সাথী, কত বন্ধ, কত তরণী--কত প্রেম, কত স্নেহ...সে কি জানে সে পথিবীতে নতুন আসেনি ? তিনশত ফিট নীচে মহাসমন্দ্রের তলের কয়েক ফিট নীচে, বালি কাদা উদ্ভিজজ-পচা-মাটি-সন্তাপের নীচে সদর, বহিঃপ্রাচীন, বিস্মত অন্ধকার অতীতের এক বিলপ্ত জগতে তার একবারের জীবন কেটেছে—এমনি সখি। আশা, সখি দঃখেই কেটেছে, যা তার কাছে আজ নতুন লাগছে। তার সেই প্রাচীন, সদর অস্তিত্বের মধ্যে আর বাৰ্ত্তমান নতুন জীবনকোরকের কাঁচি দলগালির এক বিরাট মহাসমদ্র, কয়েকশত ফিট পচা কাদার স্তর, আর সহস্ৰ সহস্ৰ বৎসরের এক বিরাট যবনিকা পড়ে রয়েছে। সামনের সাদা ঐ মেঘ-ভরা আকাশ, প্ৰভাতের নবেদিত সোনার সােয্যকিরণ, নীল পাহাড়ের উপরকারের প্রভাতকিরণসমস্তজবল বনশোভা শরতের শান্ত রৌদ্রলীলা যে এক অদ্ভুত আশচয্য জগতের আভাস দিচ্ছে, এই সব পরিচিত, প্রাচীন, সনাতন এবং অতি-একঘেয়ে বলে মনে হওয়া জগতের পিছনে যে কি বিরাট পরিবত্তানের গতির উদ্দাম নত্যের ভাঙাগড়ার খামখেয়ালী লীলা চলেছে, কি অবাধ মক্ত লীলাচঞ্চল দঢ় জীবনস্রোত বয়ে চলেছে, দদিনের জীবনে ষাকে একঘেয়ে চির 8