পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরাতন বলে মনে হচ্ছে, সে যে কি বিরাট চঞ্চল, কি গতিশীল, কি প্রচণ্ড, কি রোমান্স যে তার পিছনে, সে কথা ওই নব-আগন্তুক অপরিপক্কবান্ধি শিশ, কি বোঝে ? সে শােধ চেয়ে আছে। তার মগধ, আনন্দদীপ্ত শিশনেয়ন দটি তুলে সমাদের মধ্যের ছোট পাহাড়ের দিকে চেয়ে আছে, যার চড়ায় কোন এক ধনীর মস্ত একটা সাদা রঙের প্রাসাদ, আর নীচে জেলেরা চড়ায় ছোট নৌকা নিয়ে মাছ ধরছে। “পরা যাত্র স্রোতঃপলিনমধনা তত্ৰ সরিতম” প্রাচীন যাগের অধনাতন লগুপ্ত যে মহাসমািদ্র প্রাচীন পথিবীর পণ্ঠে হাজার হাজার লিপ্ত জন্তু বাকে করে প্রবাহিত হত, সেই প্রাচীন মহাসমাদ্রের তীরে যেন এরা চুপ করে বসে থাকত। তাদের মাথার উপরকারের নীল আকাশে অহরহ পরিবত্তনশীল মেঘস্তাপের মত চঞ্চল এই বিশব তার প্রাচীন আদিমযাগের লতাপাতা, জীবজন্তুসহ তাদের চারধারে এমনি করেই মায়াপরী রচনা করে রইত। এমনি প্ৰভাতের সায্যের আলো প্রাচীন যাগের সাগরবেলায় পড়তো। আর প্রভাতসায্যের আলো এমনিই শীকরসিক্ত প্রাচীন ধরনের ঝিনক শাঁখা কড়ি পলার ওপরে রামধন্যর রং ফলাতো। সবসদ্ধ নিয়ে প্রাচীন মহাসমাদ্রের বেলাভূমি আজকার অন্ধকার খনি-গভে চুনাপাথরে রপান্তরিত হয়ে আছে। মহাকালের গহন-গভীর রহস্যে নত্য-ক্ষদ্ধ চরণচিহ্নের মত। ।। ২৯শে জলাই, ১৯২৫, কলকাতা । অন্ধকার সন্ধ্যা। বর্ষার মেঘে আকাশ ছাওয়া। জলার ধারে বনে বড় বড় তালগাছগালো অলপ-অলপ-বার-হওয়া তুতে রঙের আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে আছে। বর্ষার জলে সতেজ ঘন সবজি ঝোপ-ঝাপ, গাছপালায় বর্ষণক্ষান্ত ভাদ্র-সন্ধ্যার মেঘান্ধকার ঘনিয়ে আসছে-এখানে ওখানে জোনাকির দল জবলছে, জলের ধারে কচুবনে ব্যাঙ ভুকুছি, আকাশে এক ফালি চাঁদ উঠছে, চারিদিক নীরব, কােনাে দিকে কােনাে শব্দ দেখে বসে বসে মনে হ’ল যেন সন্টির আদিম যাগের এক জলার ধারে বসে আছি। যে জলার ধারের বনগাছ এখন প্রস্তরীভূত হয়ে পাথরে কয়লায় রপোন্তরিত হয়েছে -সে পঞ্চাশ ষাট লক্ষ বা কোটি বৎসর আগেকার এক প্রাচীন আদিম পথিবীর জলার ধারে চারধারের গাছপালাগালো আদিম ধরনের সাদাসিন্দা গাছপালা. Stigmaria, Sigiloria Lepidodenpren, Longifolium ...ŠIVOSTÎN? পথিবী জনহীন, মনীষা বহন বহর পকেবর পথিবী এ। আদিম গহন গভীর অন্ধকার অরণ্যে শািন্ধ আদিম যাগের অতিকায় অধনালপ্ত Saurian রা ঘরে বেড়াচ্ছে। পাখী নেই, ফল নেই, মানষে নেই, সন্টির কোনো সৌন্দৰ্য্য নেই আকাশে, অথচ প্রতিদিন সন্দর সোনার সােয্যাসত হচ্ছে। প্রতি রাত্রে রপোলী চাঁদের আলোর ঢেউ আদিম অরণ্য। আর জলার বকে বেয়ে যাচ্ছে। দেখবার কেউ নেই, বঝেবার কেউ নেই। কতদিন পরে মানষি আসবে, পথিবী যেন সেজন্যে উন্মখী হয়ে আছে—সে আসবে। তবে তার শিল্পকলাসঙ্গীত কবিতা চিত্রে ধ্যানে উপাসনায় চিন্তায় প্রেমে আশায় স্নেহে মায়ায় পথিবীর জন্য সাৰ্থক হবে। অনাগত সে আদরে ছেলেটির জন্মে পথিবীমায়ের বকটি তৃষিত হয়ে আছে। কিন্তু ছেলেটি যখন এলো, তখনই কি দেখলে, না। সকলে দেখে ? ঐ যে অন্ধকার বনের উপরের মেঘান্ধকার স্তবন্ধ আকাশে, ছিন্নভিন্ন মেঘের ফাঁক দিয়ে তৃতীয়ার চাঁদটকু দেখা যাচ্ছে, কে ওর মৰ্ম্মম বোঝে ? তাই মনে হয়। ভগবান যেন মাঝে মাঝে