পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাগলপাের আসবার সময়ে শােয়রমারীর খেয়া-ঘাটে এপারে যে নৌকা লেগেছিল, যাতে ছেড়াখোঁড়া হলদে রং-এর বই খালে মাঝিরা পড়ছিল—জনসেবকদের কথা মনে এলে যেন এর কথা মনে আসে-নৌকাতে যে মেয়েটি ময়লা কাপড় পরে বসেছিল ও নদীতে নেমে কাপড় হাঁট পয্যন্ত তুলে চলে গেল, ওর কথাও যেন মনে থাকে। মরাঠা বোধে ওরা নাকি কোন কুটামবাড়ী নেমন্তন খেতে গেল। আর ওই যে ছেলেটা বললে তার বাড়ী রজীদপাের, ওর কথাও—সাবোর সেন্টশনের বাইরে লতাকাটি পাতা কুড়িয়ে আগমন পোয়ানো, গাড়ীতে ওই লোকটাকে বিড়ি খেতে বারণ করা, এই সময়ে আলো জবালিয়ে বড় বাসার টেবিলটায় বসে এই সব লেখা অনেককাল মনে থাকবে। শয়েরমারীতে আজ ঘি খণ্ডজেলেই পাওয়া যেত—মকুন্দি বলেছিল—কাত্তিক খািজলে না ভাল করে। এখানে মোটেই শীত নেই। ইসমাইলপার কাছারীতে কদিন কি শীতই পেয়েছি। আগন রোজ সন্ধ্যায় না পোয়ালে রাত কাটতো না। রামচরিত রোজ খড়ের বোঝা। নিয়ে এসে আগমন করত। সেদিনকার শিকারটা খাব জোর হয়েছিল। বৰ্গদক নিয়ে কাদায় কাদায় বেড়ানো—-প্রথম কুণডীটাতে এত হাঁস ছিল একটাও মারতে পারা গোল না। শােধ এদিক ওদিক দৌড়ে দৌড়ে হয়রান— ।। ৯ই ডিসেম্বব, ১৯২৫ ভাগলপাের । লেখাপড়া একটা খাব বড় মানসিক দঃসাহসিকতা। যারা সারাদিন ঘরে বসে বসে পড়ে, তাদের শরীর ঘরটার চারধারের দেওয়ালে বদ্ধ থাকলেও মন উড়ে যায় অনেক অনেক দারে।---অসীম শান্য পার হয়ে কোটি কোটি অজ্ঞান নক্ষত্ৰলোকের দেশে দেশে। সময়ের কুয়াশা ভেদ করে তাদের মন ফিরে যায় একেবারে পথিবীর সে-ষগে যখন নষসন্টি আরম্ভ হয় নি, জলাজঙ্গলে অজ্ঞাত ভীষণ-দর্শন অধনালপ্ত অতিকায় প্রাণীদের সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞাত গাছপালায় ভরা আদিম যাগের জগুগলে। এই জগতে সবচেয়ে বড় আনন্দ হচ্ছে অজানার আনন্দ-জানা জিনিসে কোনো সখি নেই। এই নতুন জিনিসের আনন্দ, অজানার আনন্দে বিশদ্বজগৎ ভরা। মানষের সংকীর্ণ ইন্দ্রিয়াশক্তির চারপাশ ঘিরে, তার চোখের সামনে, তার কানের সামনে, তার অনভব ও সপশীশক্তির সামনে, তার মনের সামনে অনন্ত অসীম রহস্যময় অজানার মহাসাগর। তার দর দিকচক্লবালের ওপারে ঘন আবছায়া কুয়াশার অস্পষ্ট কল্লোলও শোনা যায় না-এত দীর সেদিক। এই অসীম অজানা সাগর মানষেকে অজানার আনন্দ দেবার জন্য যেন তার চারধার ঘিরে আছে। কে আছে যার সাহস, বদ্ধি, মন এত দঢ় যে অজানার দরিয়ায় পাড়ি জমাতে চলে ? কলৈ অাঁকড়ে তো সকলেই পড়ে রইল। দিক দিশাহারা অকাল-রহস্য মহাজলধিতে কে ‘বাচ খেলতে চলবে—কোথায় সে বীর ব্রাত্য, মক্ত আত্মা ? সংসারের ধলায় পড়ে সবাই লাটােপটি খাচ্ছে—সদের হিসাবে দিন যাচ্ছে, গাঁজা খেয়ে আনন্দলাভের চেন্টা করছে, সংসারের সবাই আনন্দকে খাঁজছে। কিন্তু আনন্দের জলধি যে সামনে অক্ষন্ন রইল। তার দিকে তো চাইবে না। সে উচ্চ আনন্দের ভান্ডারকে ব্যবহার করবার মত শিক্ষা-দীক্ষা সকলের থাকে না, অধিকার সকলের থাকে না। এই জন্যই মনে হয় সংসারে কাউকে ঘণা করলে হবে না। মানষে এই উচ্চ ব্রাত্য আনন্দের খবর না জানতে পেরেই অ-সদখে হিংসায় ধলোয় কাদায় পড়ে লাটােপটি খায়। সাবাথদ্বন্দ্বে নিজের সখ খাজতে নিজেকে আরও হীন, অসখী করে তোলে। তাদের দোষ নেই। হতভাগ্য তারা—সকলে আনন্দকেই খাঁজছে। কিন্তু শিক্ষা SO