পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬২

বিশাল, বিপােল, অসীম চারধারে ছড়ানো। তা লোক-কোলাহলে শোনা যায় না। এই রকম গভীর রাত্ৰিতে এই রকম নিজজন জানালার ধারে বসে এক মনে অাঁধারভরা কালো গাছপালার মধ্যে সির সির বয়ে যায়। তখন যেন মাঝে মাঝে অস্পষ্ট তার বকের সম্পন্দন শনিতে পাওয়া যায়। আনন্দের রহস্যের গভীরতায়, বিপলতায় মন ভরে ওঠে। জীবনের অর্থ হয়। পথিবীর জীবনের পারে যে জীবন, অসীম রহস্যময় অনন্তের পথের মহিমায় যাত্রাপথের পথিক যে জীবন, তার সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয়। দৈনিক জীবনের সাংসারিক কম্পমাকোলাহলে যে মহিমাময় শাশবত জীবনের সন্ধান আমরা পাই না, জগতের সখি দঃখের ওপারে যে অনন্ত জীবন সকলেরই জন্যে চঞ্চল প্রতীক্ষায় রয়েছে, অসীম নীল শান্য বেয়ে যার উন্দাম রহস্যভরা পথযাত্রা, সে জীবন একটি একটা চোখে পড়ে। “ভয় নেই, ব্যাঙেক টাকা জমিও না, অসময়ে দেখবার ভয়ে ব্যাকুলও হয়ে না। আমি অনন্ত জীবন তোমাদের জন্যে অপেক্ষা করছি। কোনো ভয় নেই, পথিবীর কোন শান্ত, গ্ৰাম্য নদীর কালের চিতায় তোমার হাশিয়ার জীবন যখন শেষ হয়ে যাবে সেদিন থেকে এ অসীম শান্য অনন্ত রহস্য তোমার সম্পত্তি হয়ে দাঁড়াবে। আপনা। আপনিই হবে, কোন ব্যাঙেক জমাবার কোনো প্রয়োজন নেই। জ্যোৎসনা ভালবাস ? ফল, ফল, পাখী ভালবাস ? গান ভালবাস ? পথিবীর ভাগ্যহত ছেলেমেয়েদের করণ দঃখের কাহিনী শনে চোখে জল আসে ? মন আকুল হয়ে ওঠে ? আত্তের কান্না শনে অন্যমনস্ক হয়ে যাও ? তবে তুমি অনন্ত জীবনের উত্তরাধিকারী। তোমার সখের সীমা হবে না। সে খাশি আনন্দের মধ্যে দিয়ে নয়, দঃখের মধ্যে দিয়ে। নক্ষত্রে নক্ষত্রে দেখে বেড়িাও, কত দীন দরিদ্র, আতুর জীব কঠিন সংগ্রামে পিভট হয়ে যাচ্ছে। নিজজন নদীর তীরে কেউ হয়ত বসে বসে কাঁদছে—ওদের চোখের জল মাছে দেবার চেষটা কোর, তাদের সঙ্গে কেন্দো, সে-ই তোমার সবগ হবে। চোখের জলেই এ বিশ বসন্টি। ধন্য হয়েছে। চোখের জল, কান্না, অত্যাচার না থাকলে বিশেবর সৌন্দয্য থাকতো না। সব সখি, সব পরিপািণতা, সব ঐশ্বব্যয্য, সব সন্তোষ, শান্তি, কেমন মরভূমির মত ভয়ানক খাঁ খাঁ করতো— মাঝে মাঝে আত্তাদের চোখের জলের শ্যামশান্তিভরা ওয়েসিস আছে বলেই তা করণ মধর হয়েছে। “জ্যোৎসনা যখন ওঠে, তখন অনেক আগে মরো-যাওয়া ছেলের কথা ভেবো।-- দেখবে, জ্যোৎসনা মধার করণ হয়ে আসছে। পাখীর গানে করণ গৌরীর উদার মীড়, ধৰনিত হচ্ছে। যে বাড়ীটা গ্রামের পাঁচজনের ঝাঁটালাথি খেয়ে কিছদিন আগে ঘরে ছোড়া কাঁথার মধ্যে জল অভাবে মাতু্যত্কৃষ্ণা নিবারণ করতে না পেরে মরেছিল তার কথা ভেবো-মন উদার শোক ও শান্তিতে ভরে আসবে- জগতের পবিত্র কারণ্যের, আশাহত ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে অনন্তের অনাহত ধবনি কানে বাজবে। যে পরের ব্যথায় কাঁদতে শেখেনি জগতে সে অতি দােভাগা। এক অতি অদভুত জীবনরস থেকে সে বঞ্চিত २(श ७भा0छ ।" কুকুরের ঘেউ ঘেউ যেন একটি থেমেছে? অন্ধকার যেন আরও একটা গভীর হয়েছে। তারাটা আরও নেমে গিয়ে গাছের ডালের আড়ালে পড়েছে—কি রদ্র প্রচন্ড তাণডব গতি কি শান্ত নিরীহ তার আড়ালেই প্রচ্ছন্ন রয়েছে। -- ঝির-ঝির বাতাসে নিমফলের গন্ধ আসছে—-বাতাবী লেবফলের গন্ধ আসছে। এখনও আবার ফালগন চৈত্র মাসে পাড়াগাঁয়ের বনে বনে ঘোট ফল ফোটে, বৈচিগাছের নতুন কচি পাতা গজায়, দক্ষিণ বাতাস বয়, পাতার ফাঁকে ফাঁকে দোয়েল S SR