পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কোকিল ডাকে। কিন্তু তারা আর নেই, সময়ের পাষাণবাত্মা বেয়ে তারা কোথায় কত দর চলে গিয়ে কোন দর অতীতে মিশে গিয়েছে। ।। ৪ঠা ফেব্রুয়ারী, ১৯২৬, ভাগলপাের । ভাবতে ভাবতে মনে হোল সাত বৎসর আগে এই দিনটিতে আমি প্রথম চাকরি নিয়েছিলাম। সেই মাইনর সঙ্কুলের খাট, সেই লেপে শোওয়া- অন্ধকার আকাশে চেয়ে দেখলাম। যদিও আমি ভাগলপাের আছি, এখন এত বড় একটা মিটিং করে এলাম, কাল সকালে হেমেন আসছে, ইসমাইল।পরে নায়েবের চাক্তজ বঝে নিতে যাবে, কিন্তু এই সবের মধ্যে পরোনো দিনের ছবিগলো বড় মনে পড়লো, অনেক দরে এক গ্রাম্য নদীতীরে কেমন নাট-কাঁটার বন, ধলচিতের খাল, নোনা কাদা, গোল-বেগোল, তারপর সেই পকুরের ধার, সেই জানালা, সেই বর্ষার দিনে দরমােহাটার মোড়ে পাথরে চুনা ফেলা, সেই পানচালায় শোয়া, সেই কালী ডাকছে, ওঃ বড় কম। জীবন কি করে অগ্রসর হচ্ছে ? সাত বছরের এই পরিবত্তান, পাঁচ হাজার বছর পরে কি হবে ? এই বিভূতি, এই নায়েব, এই অম্পিবাকাবাব, এই হেমেন, এই আমি কোথায় থাকবো ? পাঁচ হাজার বছর আগে যারা ইজিপেট থাকতো তারাও হয়ত ঠিক এই রকম ব্যক্তিগত আশা নিয়ে যতীনবাবর মত অহঙ্কার করতো, বিভূতির মত ফোর্থ ক্লাসে পড়বার সর্বপ্ন দেখতো-কিন্তু তাদের আশা অহঙ্কার প্ৰেম স্নেহ সবার্থ নিয়ে কোথায় তারা আজ ? দ-একটা ভাঙা ছোড়া মমি ছাড়া সেই বিশাল সভ্যতার অতীত জনসঙ্ঘের কি চিহ্ন পাওয়া যায় ? ঐ রকম আমাদেরও হবে। আমরাও আমাদের দ্বন্দ্ব, মারামারি, অহঙকার, আশা, দাম্পিভকতা, ভালবাসা, স্নেহ, দয়া নিয়ে বদ্বীদের মত মহাকাল-সাগরে কোথায় মিলিয়ে যাবো। আমাদের জায়গায় আবার নতুন একদল আসবে। তাদের ঠিক এই রকমই সব হবে। তারাও বলবে—আমরা বড়-হবো, আমরা জমি কিনবো, বিষয় কিনবো, সদে টাকা ধার দিয়ে বড়মান ষ হবো, বই লিখে নাম করবো—তারা বঝতে পারছে না, তাদেরই পায়ের মাটির তলায় এক নয় কত লক্ষ লক্ষ generation তাদেরই মত ভেবে কোঁদে হেসে আশা করে অহঙ্কার করে সখী অসখী হয়ে বগল বাজিয়ে নেচে কুদে হামবড়াই করে। বৰ্ত্তমানে ধলোমাটি হয়ে পথিবীমায়ের বকেই কোঁচোর মাটির মত মিলিয়ে রয়েছে। এখানে ওখানে, অন্ধকার আকাশে, বহিৰ্ণশিন্যে-বিশ বসন্টির উপকরণ, পাথর, ধাতুর পিন্ডগলো মাঝে মাঝে পথিবীর আকর্ষণে পথিবীর বায়মন্ডলের সংস্পশে এসে জবলে উঠে রয়েছে—ঐ একটা—আবার—একটা—আবার ঐ—শন্যটা একেবারে ধাতুর পাথরের উপকরণে ভরা— ঐ বিশ্ববজগৎ, সংসারের কোলাহল উদ্ধের্বর বড় জগৎটা ঐ অন্ধকার শন্যে আত্মপ্ৰকাশ করছে। ঐ যে গতি, ও বিশেবর গতির প্রতীক। শােধ প্রতীক নয় ও তারই গতি। সস্বয়ং সৎগুরমাণ, ভ্ৰাম্যমান, ঘণ্যমান বিশ্বববস্তুর অংশ। আপনা। আপনি নিয়মে চলেছে। ওর দিকে চাইলে নিউটনের, কেপলারের, হেলমহোলৎজের, শঙ্করের, বরাহমিহিরের জগৎ মনে পড়ে—সে জগৎ ডাক্তার শরৎ সরকারের জগৎ নয়, গভর্নমেণ্ট প্লিডার অমকের জগৎ নয়, আমােক বড়মানষে পেটাে মহাজনের জগৎ নয়, আমােক সেন্টটের অমক ম্যানেজারের জগৎ নয়। কত পথিবীর, বিশেবর ভাঙ্গা টিকরো ও ! কত ইতিহাস ছিল। তাতে ? কত জীব কত সভ্যতা কত উত্থানপতন কি বিরাট রহস্য। ওর আড়ালে প্রচ্ছন্ন ՏՕ