পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বারে বারে জন্ম থেকে জন্মান্তরে নিতেন নািতন অজানা মায়েদের কোলে শিশ হয়ে আসা যাওয়া, নব নব জীবনের অনন্ত উচ্ছবাস-আনন্দ। হে আনন্দময়, যাগে যাগে তোমার মহারহস্যময় জীবনধারা বিজয়ীবৎ বিমােত্যু বিশোক, পথহীন মহাপথ ছেয়ে কত কলপ, মন্বন্তর মহাযাগের মধ্য দিয়ে, শত সহস্ৰ জন্ম মাতুর মাঝ দিয়ে কোথায় সে ভেসে চলেছে। নিয়ে চল, নিয়ে চল, নিয়ে চল মহাকালের মহাকলেবারের মধ্য দিয়ে ভাসিয়ে নিয়ে চল— অনন্ত নীল ব্যোম-সমদ্রে এখানে ওখানে পাটকিলে রংয়ের মেঘদ্বীপের দিকে।। ৬ই ফেব্রুয়ারী, ১৯২৭, ভাগলপার । Life Life কাল রাত্রে অন্তরের মধ্যে জীবনের বিশাল তরঙ্গোদ্দাম অনভব করলাম-ওরকম অনেকদিন হয়নি। শক্তির, উৎসাহের, কলপনার, আনন্দের, উদ্দীপনার, সৌন্দয্যের মাধয্যের কি বিরাট প্ৰাণ-মন মাতানো, পাগল করা, উদ্দাম, বাধাবন্ধহীন গতি-বেগ ! নদীর কল-ছাপিয়ে নিয়ে যাওয়া ক্ষেপাজোয়ারের কি দশমদ, ফেনিল, প্রণয়লীলা! মনের মধ্যে জীবন যেন বলছে-এই যে গণডী তুমি তোমার চারিদিকে রচনা করে বসে আছো। এরা তোমারই ভূত্য তোমারই দাস। তুমি কেন ভুল করে এদের হাতে ইচ্ছে করে খাঁচার পাখীর মত বন্দী হয়ে আছো ? তুমি এদের চেয়ে অনেক বড়। জীবনটা ভালো করে দেখতে হবে। উপভোগ করতে হবে। জীবন উৎসের মল শকিয়ে দেয় অলস নিম্পকমা জীবনযাত্রায়। শত্রকে তাড়াতে হবে। কল ছাপিয়ে বেরিয়ে চলো! উদ্দাম উন্মত্ত বিজয় বিমােত্যু গতির বেগে বার হয়ে পড়ো। কি ঘরের কোণে বসে মোকদ্দমার ফাইল আর স্টেটমেন্ট ঘটিছো।— তোমার মাথার ওপর অনন্ত নাক্ষত্রিক জগৎ রহস্যময় অজ্ঞাত, নব নব ঘন্য মান গ্রহরাক্তিকে বকে নিয়ে চলেছে। ধামকেতু নীহারকণা নীহারিকা সদর লক্ষ লক্ষ কোটী কোটী আলোকবর্ষ পারের দেশ, নতুন অজানা বিশবরাজি, নতুন অজানা প্রাণীজগৎ, বিশাল প্রজবলন্ত হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, লোহা, নিকেল, কোবালন্ট, এল.মিনিয়াম-প্রচন্ড জাগতিক তেজ X-ray বিদ্যুৎ, চৌম্বকশক্তি, ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ঢেউ, অনন্ত শান্যপথে ভ্রমণশীল জব্বলন্তপােচ্ছ জানা অজানা ধরমকেতুরাজি, ঘণ্যমান ধাতুপিণ্ড, প্রস্তরপিন্ডের অতি অদভুত রহস্যভরা ইতিহাসএই জন্ম-মাতৃত্যু, পায়ের নীচের লক্ষকোটী প্রাণীর মরে যাওয়ার লীলাউৎসব। মৎস্যযােগ, অঙ্গারযাগ, সরীসাপ যাগের প্রাণীদের প্রস্তরীভূত কঙ্কাল, কত ফল ফল বন নদী পাহাড় ঝর্ণা, কত কলহীন, দিকহীন গজমান মহাসমািদ্র-অনাদি, অনন্ত, লীলাময়, রহস্যময়, অজ্ঞেয় জীবন-মহত্যুর প্রবাহ। এর মধ্যে তুমি জন্মেছ। আত্মাকে প্রসারিত করে দাও এদের মধ্যে। চপ করে চোখ বজে বসে এই গতিশীল ত্যান্ডবনিত্য-চঞ্চল মহাকালের মহাযাত্রার উৎসবের কথা ভাবো—কোথায় যাবে তোমার দাদিনের বদ্ধজীবনের দৈন্য, কোথায় যাবে তোমার রদ্ধ ঘরের অনিশ্চমল দম্পট হাওয়ার ভান্ডার —প্ৰাণের বেগে গতির বেগে ছটে বেরিয়ে পড়ে দ্যাখো জীবন কি মহিমাময়, কি বিরাট, কি ঋদ্ধিশীল! কি অক্ষয় অনাদি অনিব্বাণ জীবন, সঙ্গীতের কি মধর লয়-সঙ্গতি। ঘঙর বাঁধা পায়রা হয়ে ছাদের আলসে অাঁকড়ে পড়ে থোকো না, বাজ পাখীর মত ওড়ো, মাথার ওপরে যে অনন্ত অকল শাশবত নীলাকাশ--তার ঘননীলের মধ্যে পাখা ছেড়ে দাও, উড়ে যাও-উড়ে যাও—সন্দর বৈকালে, আমের বউলের গন্ধ ভেসে SC: