পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আসছে, পাখী ডাকছে, বনঝোপের পাতা সর সরণ করছে—জীবনে এ বৈকাল কতবার আসে কতবার যায়, কিন্তু প্রত্যেক অপরাহুই যেন নিত্য-নািতন মনে হয়, কারণ সামনে যে অজানা রাত্রি আসছে। অজানার আনন্দই মানষের জীবনের সব চেয়ে বড় আনন্দ। অন্ধকারে সােয্য ডাবে গেল, কিন্তু আবার সকালে উঠবে। আবার নতুন জীবন নতুন ফল ফল দৰবা শিশির পাখীর গানে আবার সঞ্জীবিত হয়ে উঠবে। আবার কত হাসি কত কুমারীর ঘাটে যাওয়া, কত জানালায় ধাপগন্ধ অশান্ত প্ৰাণপাখী আর মানে না—সব দিকের বন্ধনহীন, নিঃসঙ্গ, উদাস, অনন্ত অকল নীলবোমে মক্তপক্ষে ওড়বার লোভে ছটফট করছে—জীণ পিঞ্জরীদলে শািন্ধ অধীর অকল পক্ষবিধােনন! উড়তে চায়—উড়তে চায়-পরিচিত, বহবার দলেট, একঘেয়ে, গতানগতিক গন্ডীর মধ্যে আর নয়, একেবারে অপরিচয়ের অকল জলধিতে পাড়ি দিতে চায়, হয়ত দরে দরে কত শ্যামসন্দর অজানা দেশসীমা, তুহিন শীতল ব্যোমপথে দেবলোকের মেরাপব্বত। আলোর পক্ষে ভর দিয়ে শােধ সেখানে যাওয়া যায়, অন্যভাবে নয়—সেখানেও ক্ষদ্র গ্রাম্য নদী বয়ে যায়—দেববধ গণ পীত হরিৎ তারকার আলোকে মদপদবিক্ষেপে জলখেলা করতে নামে। জীবনটাকে বড় করে উপভোগ করো, খাঁচার পাখীর মতো থেকে না। জগতের চল-চ৭৪ল গতি দেখে বেড়াও দেশে দেশে। দিল্লী আগ্রা গিয়ে দ্যাখো মোগল বাদশাহের সিংসন। ঐশবষয্য ছায়াবাজীর মত কোথায় মিলিয়ে গিয়েছে। পাহাড়ে ওঠে, কেদার বন্দরীর পথে বেড়াও, অবসাদ দরি হবে, মন দঢ় হবে। } ।। ২৪শে ফেব্রুয়ারী, ১৯২৭, ভাগলপাের । সকালে হাওড়ায় চেপে কেমন বর্ষাসনাত মেঘমোদর ভূমিশ্ৰীর মধ্যে দিয়ে সারাদিন ট্রেনে করে এলাম! নিউ কন্ড লাইনের দাধারে কেমন সবজি বর্ষাসতেজ গাছপালা, ঝোপ-ঝাপ, ধানের মাঠ। বাড়ীতে বাড়ীতে রান্না চাপিয়েছে—ঘরে ঘরে যে সখেদঃখের লীলাদ্বন্দ্ব চলছে, কেমন ঘরের পেছনে খড়ের ঘরের কানাচে ছোট ডোবায় পদ্মবনগলি ! বড় বড় পদ্মপাতাগলো। উলেট রয়েছে, সাদা সাদা পদ্ম ফটে-কেমন যেন সব ভাই বোন নীল আকাশের দিকে চেয়ে সারাদিন পদ্মের চাকা তুলে তুলে যায়এই ছবি মনে আসে। মাঠের ধারের বনে দীঘ ছাতিম গাছটা, নীচে, আগাছার বনজঙ্গল। বীরভূমের মাঠে মাঠে ছোট ছোট চাষার চালা ঘর, লাউ-কুমড়োর লতা উঠেছে। রাঙামাটির দেওয়াল বেয়ে, মেয়েছেলেরা গাড়ী দেখছে—সেই যে ছোট ঘরখানা থেকে গাড়ীর শব্দ শনে মা ও মেয়ে ছটে ( বয়স দেখে মনে হলো ) বার হয়ে এলো, আমার এসব কথা আজীবন মনে থাকবে। । ২রা আগস্ট, ১৯২৭ সাল । বড় বাসার ছাদ ভাসিয়ে কি চমৎকার-যেন ঠিক শরতের রৌদ্র উঠেছে আজ। নীল আকাশের এমন চমৎকার স্বচ্ছ নীল রং অনেকদিন দেখিনি। কি সন্দির সাদা সাদা পেজা তুলোর মত মেঘের রাশি হালকা গাড়ীতে উড়ে চলেছে। চেয়ে চেয়ে নিস্তবধ মধ্যাহ্নে কেবলই পরোনো দিনের কথা মনে আসে—সেই আমাদের খড়ের ঘরখানা, অতীতের কত মধমাখা দিনগালোর কথা, সকালে বিলবিলের ধারে সেই বিষয় মনসা ভাসান শািনতে যাওয়ার উৎসাহ, সেই পেয়ারা খেতে খেতে পােব-মাখ্যে যাওয়া। মা বসে বসে সেলাই করতেন। নীরব দাপরে বাইরের দাওয়ায় বসে পড়তাম-সেই সব দিনগলো! সেই বন্ধদের বাড়ী বিলাতী কাডের ছবি দেখে SV)