পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেখবো না, আমি চোখ বাজে আছি-কার এত পদ্ধা আমার চোখ খোলে ? ।। ২৮শে আগস্ট, ১৯২৭, আজমাবাদ কাছারী ৷ আজ আমি ও রাসবিহারী ঘোড়া করে একটি খানি যেতেই ভারী বান্টি এল । রাসবিহারী সিং বললে নিকটে এক রাজপতের বাংলো আছে চলন।—ঘোড়া ছটিয়ে দজনে সেই বাড়ী গিয়ে উঠলাম। তার নাম সহদেব সিং । বাড়ী মজঃফরপর জেলা। রাশি রাশি ফসল ঘরটার মধ্যে গাদা করা, অড়র ভুট্টা ঝলছে। বললে, বীজ রেখে দিয়েছে। বান্টি থামলে দজনে ফিরে চলে এলাম। । ২রা সেপ্টেম্বর, ১৯২৭ সােল । আজ সকালে মধ মন্ডলের ডিহির প্রাচীন বিকাইন গাছটার ছায়ায় ঘোড়া দাঁড় করিয়ে জমি মাপলাম। বৈকালে ঘোড়া চড়ে বেড়াতে গিয়ে দেখলাম। ভীমদাসটোলার নীচেকার আলটায় অত্যন্ত জল বেড়েছে-ঘোড়ার একবাক জল হ’ল পার হবার সময় । ওপারের বটেশবিরের পাহাড়টা কি অপব্ব নীল রং দেখাচ্ছে! ডান দিকে লাল রংয়ের অসন্ত-আকাশ-উন্মত্ত প্রকৃতির মধ্যে একা। সীমাহীন প্রান্তর, ফলেভরা সবজি কাশবন, অসন্ত-আকাশে রক্ত মেঘ, নীল পাহাড়, ঢাল দৰবাঘাসের মাঠ, ধাতুরা ফলের উলখড়ের ঝোপ, বড় পাকুড় গাছটার তলায় হলদে-রাঙা, জারদা রং-এর সন্ধ্যামণি ফলের বন, এদিকে ওদিকে পাখী ডাকছে, ক্ষেতে গরম চরছে—বাঁধের নীচে জলের ধারে বকের দল বসে আছে, স্নিগধ খোলা মাঠের সান্ধ্য বায়—মনটা যেন এই অপব্ব সীমাহীনতার মধ্যে, দরপ্রসারী শ্যামল প্রান্তরের মধ্যে ছড়িয়ে ছড়িয়ে গেল। ভিটা, বাঁশবনের কথা। এই সন্দর অপরােপ শরৎ সন্ধ্যায় গ্রামের লতাপাতা থেকে ওঠা ভরপর কাটতিক্ত গন্ধটার কথা, সেই বাঁশঝাড়ে শালিখ-ডাকা বাংলাদেশের মায়াসন্ধ্যার কথা, তরুণীরা মাটির প্রদীপ হাতে গািহ-আঙ্গিনায় তুলসীমঞ্চে সন্ধ্যা দেখাচ্ছে, ঘরে ঘরে রাত্রির আবাহন-মঙগলশঙ্খের রব। এসময়ে চাঁপাপকুরের পকুরঘাটে, তাদের তেতলার ঘরটায়, চট্টগ্রামের দীর প্রান্তের সেই ঘরটাতে, বারিদপরের বাড়ীটায়, ঝালকাটীর মণির বাড়ীতে না জানি কি হচ্ছে! মণি বড় হয়েছে—বোধ হয় বিয়েও হয়ে গিয়ে থাকবে। আমি সর্বপ্ন দেখি সেই দেবতার-যিনি এই নিস্তব্ধ সন্ধ্যায়, যােগান্তের পক্বতশিখরে নীরব চিন্তামগ্ন। কত শত জন্মের সমিতি, হাজার বৎসরের হাসিকান্নার কাহিনী, নিজজন গ্রহের নিজজন পৰ্ব্ববর্ততে, যােগ যােগ অক্ষয় তরণ দেবতার কথা মনে পড়ে—ধীর, নিডজন, নীরব ধ্যান শািন্ধ অতীতের। সম্পমখে তার বিশাল অজানা বিশবি। দেবতা হয়েও সব জানেনি, সকলের সীমা পায়নি। গ্রহে, শত প্রেম কাহিনীর জালে জালে জড়ানো তরুণ সন্দর মাত্তি তার। নিস্তব্ধ অন্ধরাতে বসে বসে শােধ সে একমনে অপরােপ জীবন-রহস্য ভাবে-ভাবে চারধারে বিশেবর অাঁধার ঘিরে আসে, মাথার ওপরে তারা ওঠে, কোন সদর লোকের পার থেকে অনন্ত অজানার সারা যেন কানে বাজে-একটা ছবি মনে আসে সেটা নীচে অকিলাম, ছবিটা আমার মনে আছে, কিন্তু অাঁকাটা এখানে হবে না, কারণ আকিতে আমি জানিনে, তবও এইটা দেখে মনের ছবিটা মনে ফিরে আসবে। ।। ৪ঠা সেপ্টেম্বর, ১৯২৭ । সকালে আজ কিরকম করে বান্টিটা এল! কাটারিয়ার দিক থেকে ভয়ানক মেঘ SO