পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করে এল। ঘন কালো মেঘের রাশ ঘরেতে ঘরতে ঝড়ের মাখে হ হ উড়ে আসতে লাগলো। মাটিতে জল কি মিশ-কালো ছায়াটা ফেললে! বড় অশািবশ্ব গাছের ধারের বন্যার জলটা যেন কালো সোনার রং হয়ে উঠল। বকের দল ভয়ে ভয়ে ওপর থেকে মেঘের সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ের মখে উড়ে উড়ে এপারে আসতে লাগল। কাকের দল কা কা করে ডাকতে ডাকতে দিশহারা ভাবে উড়ে আসতে লাগল। তারপর এল ভীষণ ঝড় । শোঁ শোঁ শব্দে ভীষণ বেগে গাছপালা লটিয়ে নাইয়ে ফেলে মেঘগলোকে ঘরতে ঘরতে বটেশবিরের পাহাড়ের দিকে নিয়ে চলল। কোথায় কোন সমাদের জলের রাশি কি কৌশলে মাথার উপর দিকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে যেন! তারপর এল বান্টি। বৈকালে ঘোড়ায় করে বার হয়ে সহদেবটোলার পথটা ধরলাম। দধারে কেমন বাংলাদেশের মত কাঁটার ঝোপ, তেলাকুচা লতার গায়ে পাকা তুলতুলে সিদরের-মতরং তেলাকুচা ফল বলেছে। পড়কলমীর নোলক ফটে আছে, বনসিদ্ধির জঙ্গল, আলোকলতার জঙ্গল, মটরলতা, সিনপদ্ধ বনদশ্যকে ভাল করে উপভোগ করবার জন্য আস্তে আস্তে ঘোড়া চলতে লাগল। তার পরে সখিটিয়ার জন্য কুলের জঙ্গল দিয়ে ঘোড়া ছটিয়ে একেবারে দেখি সামনে কালোয়ার চকহাট। সেখান থেকে জঙ্গল বেয়ে একহাট জলকাদা দিয়ে ঘোড়া চালিয়ে একেবারে গেলাম। কলবলিয়ার ধারে। কাশবনটার কাছে থেকেই দেখলাম ফিকে হলদে রংয়ের গোল সােয্যটা মেঘের মধ্যে থেকে বেরিয়ে কলবলিয়ার ওপরে তিরাশি সেকেন্ড যেন অপেক্ষা করলো, তার পরেই সে তার তপ্ত মািখখানা লকিয়ে ফেলতে আর দেরি করলো না। আবার অন্ধকারে ঘোড়া ছাড়লাম। কুলের জঙ্গল দিয়ে কাশীবনের ভেতর দিয়ে, জলকাদা ভেঙে ঘোড়া এসে উঠল গ্রাণটি সাহেবের জমির অশবখ গাছটার কাছে। সেখানে পরো অন্ধকার হয়ে গেল। একে মেঘান্ধকার, তাতে কৃষ্ণপঞ্চমী-ঘোড়াও পথ দেখে না, আমিও না। পথে এক জায়গায় অনেকটা জল পার হতে হােল ঘোড়াটাকে । অন্ধকারে অন্ধকারে গোমলা ঘাসের ক্ষেতের মধ্যেকার সড়িপথ দিয়ে চলে আসতে লাগল। চারধারে লোক নেই, জন নেই, আকাশে একটা তারা নেই। সামনে পড়লো। আবার জল, সেই জলটায় আবার কুমীরের উপদ্রব আছে। যাই হোক, ধীরে ধীরে ঘোড়াটাকে জল পার করিয়ে মকাই ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে একপ্রহর রাত্রে কাছারীতে ४°°ीछळला । ।। ১৩ই সেপ্টেম্বর, ১৯২৭ সােল । বিকালের দিকে অনেক দিন পরে বেড়াতে গিয়ে যতীনবাবরে দোকানে কথা বলছি --হেমন্তবাব টেনে নিয়ে গেলো ম্যাচ দেখতে, সেখানে অনেকের সঙ্গে দেখা হোল। হেমন্তবাবা উকীল, যতীশবাব ইত্যাদি। ওখান থেকে ফিরে দজনে গেলাম হেমেনের কাছে। অনেকক্ষণ কথাবাত্তা হ’ল। তারপর ক্লাবে গেলাম। বাসায় ফিরে অনেক রাত পয্যন্ত জ্যোৎস্নাভিরা ছাদে বসে রইলাম। একা। শতে যেতে আর ইচ্ছা করে না। ইচ্ছে করে শােধই বসে বসে এই দীঘ নিজজন রাত্ৰি ভাবতে আর নানা রকম কলপনা করে কাটাতে। ‘আনমনে রচি বসি তন্দ্ৰাদীঘ দিবসের অলস সর্বপন-ভাটপাড়ার সেই বধ দটি, যাঁরা বিজয়ার দিনে আমাকে-সম্পৰ্ণ অপরিচিত হওয়া সত্ত্বেও আগ্রহ করে ডেকে জলখাবার খাইয়েছিলেন-আজি হঠাৎ তাঁদের কথা মনে পড়ল। সত্যকারের স্নেহ কি ভালবাসার ঘটনা বিফলে যায় না-তাঁদের সে অনাবিল সেনহের ফল। এই হয়েছে যে তাঁরা আমার মনে একদিনের জীবনপালকের সঙ্গিনীরাপে স্থায়ী আসন পেয়েছেন। Td -