পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আর এই প্রায় তিন বৎসর পরে এই দরে দেশে যখনই ভাবলাম তাঁদের কথা, তখনই আনন্দ পেলাম। মোপাসাঁর সেই পলাতক লক্ষীছাড়া খড়োর গলপােটা মনে এল—সেই জাহাজের ডেকে সেই ছোট ছেলেটি যখন তার হতভাগ্য নির্বাসিত খড়োকে দেখলে তখন তার বালকহদায়ের সেই উচ্ছবাসিত অথচ গোপন সহানভূতিটকু! তাই মনে হোল সাহিত্যে এই ভাবজীবন = প্রচেস্টাই আসল। সাধারণ মানষের ভাবজীবন খাব গভীর নয়-ত্ব মন এমন ভাবে তৈরী যা কিনা কোন বিষয়েই গভীরত্বের দিকে যাবার উপযোগী নয়। অথচ এই গভীরত্বের অভাবে জীবন অসম্পপণ থেকে যায়। মনের এ দৈন্য অর্থে পরিণ হয় না, ঐশবয্যে নয়। সাংসারিক বা বৈষয়িক সাফল্যের সঙ্গে তার কোনো সম্পক নেই। এ সব অপব্ব অনভূতি আসে। অনেক সময় বিচিত্র জীবনপ্রবাহের ধারার সঙ্গে, উপষিক্ত গড়ে ওঠা মনের সঙ্গে । এই মোপাসাঁর মত লোকেরা আসেন আমাদের এই বড় অভাবটা পণ্য করতে। তাঁদের ভাগ্যের লিখন এই, জীবনের উদ্দেশ্য এই। নিজের গভীর ভাবজীবনের গোপন অনভূতির কাহিনী তাঁরা লিখে রেখে যান উত্তরকালের বংশধরদের জন্যে। হতভাগ্য দীনহীন খড়ের দৈন্যের কারণ দিকটা একদিন কোন নিভৃত তুষারবষী রাত্রে আগমনের কুন্ডের আরাম-কেদারায় বসে কথাটা মনে হয়ে মোপাসরি তাঁর চোখে জল এনেছিল, আজি সব্বদেশের নরনারীর চোখে জল আনছে—আজি কতকাল পরে সেই কল্পনাদষ্ট বদ্ধ ও তার দীন বাজিকরের ছিন্ন বেশ, কয়লা কালিঝলি-মাখা ত-পা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। সাহিত্য শিলপীদের জীবনের প্রতিবিম্ব। যে যাগে তারা জন্মেছে, তাদের চেণ্টা হয় সকল দিক থেকে সে যাগের একটা স্থায়ী ইতিহাস লিখে রেখে যাওয়া। এই বত্তমান যাগে যাঁরা জন্মেছেন, তাঁরা এই সময়ের একটা কাহিনী লিখবেন। অন্তরের এক মহত্তের কথা, তবও জগতের ভান্ডারে থেকে যাবে। এই যাগের শেক্সপীয়র হোমার 5 দ্রনাথ তাজমহল, Great War এই কলকারখানা, সামাজিক বিপ্লব, এই বিভূতি, শন, ভারতে সবরাজ নিয়ে মহাদ্বন্দ্ব, বাদলায় এই ম্যালেরিয়া, বাৰ্ণাড শ' বা ওয়েলস, ইবানেজ, মেটােরলিঙ্কের প্রতিভা, আমেরিকার ধনী ভ্ৰমণকারীদের এই পথিবীময় ছড়িয়ে যাওয়া, জাপানের ভূকম্পন—এই সবসদ্ধ জড়িয়ে এই যােগটার নানা দিকের কাহিনী, ইতিহাসে লেখা হবে। প্রত্যেক লোকই তার নিজের অনভূতি লেখবার অধিকারী। ফল, ফল, লতা, পাখী, সমদ্র, মা-বাপ- ছেলেমেয়ে সব আছেই-আমি তাদের কি রকম দেখলাম। সেইটাই আসল কথা। জীবনটাকে আমি কি রকম পেলাম, সেইটাই সকলে জানতে চায়। যত অজ্ঞাতনামা লেখকই কেন হোক না, তার সত্যিকার অনভূতি কখনো কোঁত হল না জাগিয়ে পারে না—পড়বেই সেটাকে সকলে। সকলেই খেলার তাঁবার বাহিরদয়ারে অপেক্ষা করছে।-রহস্যভরা খেলাটা সকলের ভাল লাগে, কিন্তু ভাল বঝতে পারে না—তাঁবার বাইরে এলেই পরস্পরের অভিজ্ঞতার আদানপ্রদান ও তুলনা হয়-“মশাই কিরকম দেখলেন?” প্রত্যেক মানষেই নতুন চোখে দেখে—প্রত্যেকের অভিজ্ঞতা ভিন্ন ভিন্ন। তাই সকলেরই কথা কৌতহ’ল জাগায়। সাহিত্য শােধ জগৎটাকে কে কি চোখে দেখেছে তারই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কাহিনী। বাণিত নায়ক-নায়িকার পিছনে শিলপী তাঁর আবাল্য দীঘ জীবনের সকল সখদঃখ, হাসিকান্না নিয়ে প্রচ্ছন্ন রয়েছেন। কলপনাও কিছ না। কিছু অভিজ্ঞতাকে আশ্রয় করে, তবে শান্য ভর করে- যেমন সনেটের পিছনে তেমনি হ্যামলেটের পিছনে শেক্সপীয়ার গঞ্জ থেকেও ধরা দিয়েছেন। RR