পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এদেরও সার্থকতা, মনেরও সার্থকতা। মনের সার্থকতা এই যে বিপােল সন্টির আনন্দকে সে ভোগ করে নিজেও বড় হয়ে উঠল, আত্মাকে আর এক ধাপ উঠিয়ে দিলে -এদের সার্থকতা এই যে এরা সে উন্নতির আনন্দের কারণ হোল। তাই আমাদের শাস্ত্রেও যোগকে অত বড় করে গিয়েছে। এই বিশেবর অনন্ত আত্মার সঙ্গে আমাদের আত্মার যোগই মানবজীবনের লক্ষ্য। সে কি রকম ? মানষি সাধারণত ছোট হয়ে থাকে-হিংসাদ্বেষ, অর্থ চিন্তা তার কারণ। অনন্ত অধিকারের বাণী সে শোনেনি বলেই সে নিজেকে মনে করে ছোট-বাইরের আলো পায় না বলেই এই দম্পদশা। এই ভূপতিত, ধলিলন্ঠিত আত্মাকে উচুতে ওঠাতে পারে তার মন । মন মদিখানার দোকান থেকে বার হয়ে পোদারী আন্ডা খোলে এসে। বাইরের অনন্ত নক্ষত্র-জগতের দিকে প্রশান্ত জিজ্ঞাসা চোখ চেয়ে থাকুক-কান পেতে নদীর মৰ্ম্মমরি, পাখীর সাের, রন্ধ্রু থেকে উপচীয়মান সঙ্গীত শনিক-এই হােল যোগ। সঙ্গে সঙ্গে মনকে প্রসারিত করে দিক অনন্তের দিকে-এই হোল যোগ। আর সে ছোট থাকবে না-বড় হয়ে যাবে। ঐ অনন্ত শন্যের উত্তরাধিকারী সে যে নিজে একথা বঝবেকি অনন্ত আনন্দ তার জন্যে অপেক্ষা করছে তা বঝবে-আনন্তের দিকে বিসপিত তার আত্মাই তখন তাকে বড় করে তুলবে। এই অবস্থা ঘটেছিল এক সদর অতীতে সেই চিন্তাশীল কবির-যিনি জোর গলায় জ্ঞানের চিন্তার সাপদ্ধায় বলেছিলেন বেদাহমেতং পরষং মহান্তং আদিত্যবৰ্ণং তমসঃ পরস্তাৎ—তিনি বঝেছিলেন, ত্বমেব। বিদিত্বাদিমত্যুমেতি-ন্যান্য পন্থা বিদ্যুতে অয়নায়। মাতুকে জয় করে বড় হতে গেলে এই অন্ধকারের পরপারের সেই আদিত্যবৰ্ণ মহাপরিষ যাঁকে মহর্ষি নিজে বঝেছেন এবং এটাকুও বঝেছেন যে তাঁকে না বঝলে মাতুকে ছাড়িয়ে ওঠার আর পথ নাই-তাঁকেই জানতে হবে। যে অমত-প্ৰভাতে আদিম ভারতের কোন তপোবনে এ মহাবাণীর জন্ম হয়েছিল, সে তপোবনের, সে প্ৰভাতের বন্দনা করি। সত্যই তো। অনন্ত বিশবকে মানলেই তো মানষ দেবতা হয়ে ওঠে, তার ওপর এই বিশবিজ্ঞানকে ছাড়িয়ে তার ওপারে তার কত্তব্যজ্ঞান যে লাভ করেছে সে অতিমানব —এ বিষয়ে ভুল নেই। অতিমানব সে-ই, যে চিন্তায় বড়, অনন্তের সঙ্গে যে নিজের আত্মাকে এক করতে CዏICSC፱ ! মনোরাজ্যে মানষের অতি অমল্য অধিকার। একে খািব কম লোকেই জানে, খব কমই এর সঙ্গে পরিচিত। ভাববার সময় মানষে পায় না। অথচ এই মনই মানষের অন্ধকারে পরপারের জ্যোতিৰ্ম্মময় অনন্ত জীবনের বেলাভূমিতে যাবার একমাত্র অদশ্য পর্যাপক রথ। তোমাকে যে দেশের জঙ্গল কাটতে হবে সেটা ঠিকই, বিভূক্ষিতকে অন্ন দিতে হবে ঠিকই, কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, চিন্তার দ্বারা তুমি মানবজাতিকে ষে আনন্দের স্তরে ওঠাতে পারো, সাময়িক একমঠো অন্নদানে সে সাহায্য হবে না। নিজে বড় হও তারপর সেই আনন্দের বাত্তা পরকে শোনাও—আশার বাণীতে তাদের জরােমরণ ঘচে যাবে। ভগবান তাঁর অনন্ত জীবনের আনন্দ সকলকে বিলিয়ে দিতে চান এই জন্যেই যে তাঁর মত উচ্চ জীবনের কলপনা, ধ্যান, বদ্ধি সকলের হয়। এই তিনি চান। তার উপায়ও তিনি করেছেন, তবও যদি ছোট হয়ে থাকা যায়। তবে কে কি করবে ? SRS