পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অতি পরিচিত অথচ প্রতিবারেই-নতুন-মনে হওয়া ভুমিশ্ৰী। সন্ধ্যা সাতটা। ডাকবাংলোর টেবিলে নিজনে বসে লিখছি। নীচের চানন নদী ওপরের পাহাড় অপভ্ৰাট অন্ধকারে দেখা যাচ্ছে না--সামনের আমবনের মাথার ওপর তারা উঠেছে-লছমীপরের ম্যানেজার নদীয়াবাব ও-অংশে কাছারী করছেন-প্ৰজারা কথাবাৰ্ত্তা বলছে-এই সন্দর অপরিচয়ের মধ্যে বসে মনে হোল কতদিন আগেকার গানটা-বিশব যখন নিদ্রামগন গগন অন্ধকার’-ঠিক এই সময়—কলকাতার বোডিংটা। আজি দ্বিতীয়া—সামনেই পজা। আসছে, ষোলই আশিবন। সেবার পজা ছিল চব্বিশে। সেই সময়কার দর-কালের সে জীবনটার সঙ্গে আজকার নিজজন জীবনের মধ্যকার এই শালবন-বেন্টিত পাহাড়, নদীতীরের ডাকবাংলা, এই নিভৃত সন্ধ্যা, সম্পৰ্ণে অন্য ধরনের জীবনটা মনে পড়ে। আমি এই রকম অতীতের ও বিত্তমানের এই রকম বিভিন্ন জীবনযাত্রার কথা ভাবতে বড় ভালবাসি। বড় ভাল লাগে, কোথায় যেন একেবারে ডাবে যাই। আজ সকালে মহিয়ারডি, লড়কী কয়লা প্রভৃতি অদভুত রকমের গ্রামগলো ও অপব্ব পথের দশ্য, অম্বিকাবাবরে ললিত ডেপটিকে প্রশংসার কথা অনেক দিন মনে থাকবে। কাল সকালে লছমীপর যাবার প্রস্তাব হয়েছে—দেখা যাক। ভগবান আশীৰ্ব্ববাদ করন, দেওঘরে অবশ্যই পৌছে যাবো। ডাকবাংলায় জলের বড় অভাব-পত্রণ ছাটাছটি করছে। নাগেশবর প্রসাদ, লছমী মন্সেী দেওয়ান শ্ৰীধর বাবর নামে পত্র নিয়ে আজ সন্ধ্যার আগে ঘোড়ায় করে লছমীপর চলে গেল। পায়ে এমন বড় ফোস্কা হয়েছে যে ওপথে বড় চড়াই-উৎরাই শনে একটা ভাবছি। জয়পর পয্যন্ত মিশিরাজী পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে ঠিক হোল। আমি এই সব তুচ্ছ খাঁটিনাটি লিখি এই জন্যেই যে, সবসােন্ধ দিনটাকে ও তার আবহাওয়াটাকে অনেক দিন পরে আবার ফিরে পাওয়া যাবে। বড় আনন্দ হয়।

  • ।। ২৮শে সেপেঢশবর, ১৯২৭, জামদহ ডাকবাংলা ৷

জামদহ ডাকবাংলা থেকে বেরিয়ে লছমীপরের পথে কি সন্দির দশ্যটা দেখলাম -চাননের ওপারে পাহাড়ের মাথার ওপর প্রভাতের অরণ্য-আভা, উচনীচ, পাহাড়ের উপত্যকার মধ্যে মধ্যে ক্ষীণস্রোতা নদী—শালবন, বড় বড় পাথরের টিলা। গভীর উপত্যকার মধ্যে শালবনবেষ্টিত লছমীপর গড়ে এসে পৌছানো গেল বেলা আটটাতে। দেওয়ান শ্ৰীধর বাবকে কালিবাড়িতে খবর দেওয়া গেল। লছমীপর প্রাসাদে পৌছে দেওয়ানখানায় বসে রইলাম। তার আগেই কালীপদ চক্ৰবত্তী গােরািঠাকুরের ওখানে চা খাওযা গেল। সেখানে খাওয়া-দাওয়া করে দাগম জঙ্গলের পথে হরপর রওনা হলাম। উচ্চ মালভূমির উপর গভীর অরণ্যের ভিতর দিয়ে পথ। দধারে খাদির, হরিতকী, বয়েড়া, বাঁশ, আবলশ, আমলকী, কৎবেল, বেলের জঙ্গল। প্রথম জঙ্গল পার হয়ে দ্বিতীয় জঙ্গলটা শািন্ধ ঘন আবলশ ও কেন্দ জঙ্গল। এত বড় বড় পাথর যে জতা ছিড়ে বঝি পাথর পায়ে ফোটে। অম্বিকাবাব, ভারী বিরক্ত হোল—এত গভীর বন দিয়ে কেন আসা ? বনে ভালক, বাঘ ও হরিণ প্রচার। জঙ্গল শেষ করে রাঙা মাটির উচ-নীচ, পথ। শালের ও মহয়ার বন পার হয়ে হয়ে অবশেষে জয়পরের ডাকবাংলায় পৌছানো গেল। ওঝাজি লছমীপরের কাছারী থেকে নিয়ে এসে আহার ও রন্ধনের আয়োজন করলে । বেশ কাটল আজ। সারাদিনটা। বনোয়ারীবাবর কথা যেন মনে থাকে বহদিন। রাণীসাহেবার এক ভাই এলেন। বাবরীচলের গোছা, স্প্রিং-এর মত কপালে ও মাখের দােপাশে পড়েছে। পকেটে একটা বড় টচ্চ যেন একটা পিতলের বাঁশী, হাতে সোনার N\,