পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তারপর সন্দর জীবনের Period চললো। সেই নয়। বৎসরের ক্ষদ্র বালককে কি ভালই বাসি! তার সেই মামা জাতো মেরেছে বলে কান্না, সেই মক্কােমদিনায় যাওয়া বালিশ, সেই “শরৎ তোমার অরণ আলোর অঞ্জলি”! এ সব চলে যাবে জানি। আবার নাতন আসবে জীবনে। আরও কত-কত আসবে এও ঠিক, একদিন সব বন্ধ হয়ে যাবে। একদিন সিনীগন্ধ "অপরাহে, বাবলা বনের ছায়ায়, ইছামতীর তীরের বনঝোপের বিহঙ্গতানের মধ্যে নীরব শান্তির কোলে এ জীবনের দেওয়া-নেওয়া সব শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তাতে কি ? মানষি অনন্তের যাত্রী। তার পথ। ঐ দরে ক্ষীণ নক্ষত্রের পাশ কাটিয়ে দরে কোন অনন্ত লোকে, অনন্ত কালের পথিক যাত্রী সে—তার যাওয়া আসা কি ফরোবে হঠাৎ ? আমি এই যাওয়া-আসা সাবপ্নে ভোর হয়ে বড় আনন্দ পাই। আবার যে আসতে হবে তারপর, তাও আমি জানি। হয়ত একবার এসেছিলাম দর কোন ঐতিহাসিক যাগে—হয়ত রোমের দ্রাক্ষালতার কুঞ্জের আড়ালে ভূমধ্যসাগরের নীলজলের তীরের কোন সম্পন্দ্ৰান্ত ধনীর প্রাসাদে। হয়ত প্রাচীন গ্রীসের গৌরবের দিনে গ্ৰীকবীর হয়ে --নিয়তো কোন পাহাড়ের ছায়ায় বসে এই রকম সর্বপ্ন দেখতাম-নয়তো ইংলন্ডে কি ফ্রান্সে কোন অবজ্ঞাত গ্রামে কৃষকবালক হয়ে জন্মেছিলাম-এলম কি ওক গাছের নীচে বসে বসে ভেড়া চরাতাম-কে জানে ? আবার বহন্দরের জন্মান্তরে হয়ত ফিরতে হবে। পাঁচশো বছর পরের সায্যের আলোকে একদিন অসহায় অবোধ শিশ নয়ন দটি মেলবো। পাঁচশো বছর পরের পাখীর গান, ফািলবন, জ্যোৎসনা আবার আমাকে অভ্যর্থনা করে নেবে। কোন অজানা দেশের অজানা পর্ণকুটীরে কোন অজ্ঞাত দেশের অজ্ঞাত ছায়াঝোপের তলে মাঠে বনে মগধ শৈশব কাটাব-অনাগত মা-বাপের স্নেহসন্ধায় মানষ হব। পাঁচশো বছর পরের অনাগত কত বালকবালিকা তরুণ-তরণী, কত সখ-দঃখ-আশা-নিরাশা, লোকের সঙ্গে সে কত পলকভরা পরিচয়! কেবলই মনে হয় সন্টির যিনি দেবতা, এত দয়া তাঁর কেন ? এই অনন্তের সন্ধা-উৎস মানষের জন্যে তিনি কতকাল থেকে খলেছেন ? এই অন্ধকারে তব হাত জোড় করে তাঁকে ধন্যবাদ দিই। ॥ >♛शे नCख्यः, >२१ ॥ \2 মানষের সত্যিকার ইতিহাস কোথায় লেখা আছে ? জগতের বড় বড় ঐতিহাসিকগণ যন্ধবিগ্রহের ঝঞ্চনায়, সম্রাট সম্রাজ্ঞী সেনাপতি মন্ত্রীদের সোনালী পোশাকের জাঁকজমকে-দরিদ্র গহিস্থের কথা ভুলে গিয়েছেন। পথের ধারে আমগাছে তাদের পাটলি-বাঁধা ছাতু কবে ফরিয়ে গেল, কবে তার শিশপত্র প্রথম পাখী দেখে সানন্দে মগধ হয়ে ডাগর শিশচোখে চেয়েছিল, সন্ধ্যায় ঘোড়ার হাট থেকে ঘোড়া কিনে এনে পল্লীর মধ্যবিত্ত ছেলে তার মায়ের মনে কোথায় ঢেউ বইয়েছিল। দ্য হাজার বছরের ইতিহাসে সে সব কথা লেখা নেই—থাকলেও বড় কম। রাজা যযাতি কি সম্রাট মেণ্টহোটেপ, জলিয়াস সীজির, থিয়োডোসিয়াস এবং তাবৎ সমাট পরিবারের শােধ রাজনৈতিক জীবনের গলপ আমরা শৈশব থেকে মখস্থ করে এসেছি। কিন্তু গ্রীসের ও রোমের যাব ও আমের ক্ষেতের ধারে ওলিভ বন্যদ্রাক্ষার ঝোপের ছায়ায় ছায়ায় যে দৈনন্দিন জীবন হাজার হাজার বছর ধরে সকাল-সন্ধ্যা যাপিত হয়েছে—তাদের সখেদঃখ, আশা-নিরাশার গলপ, তাদের বকের সম্পন্দনের ইতিহাস আমি জানতে চাই। O8