পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সন্ত্রীটে। বড় বাসায়, ইসমাইল।পরে-কত জায়গায়। এই তো সেদিন কানিবেনের জঙ্গল হয়ে, জামদহ, জয়পরের ডাকবাংলায় শালবনের মধ্যে নিজজন রাত্রি যাপন করে গেলাম দেওঘর। তারপর গেলাম রামচন্দ্রপরে, বেণ বনে, বক্রতোয়ার ধারে ধারে, লক গেটে সৰ্য্যোস্তের সময় কত বেড়ালাম। এই তো গেলাম পাটনা-শোণপরে মেলা দেখলাম। জ্যোৎসনারাত্রিতে প্যালেজ ঘাটে সন্টীমারে বসে চা খেতে খেতে গঙ্গা পার হয়ে পাটনায় বৈকুণ্ঠবাবর ওখানে ফিরে এলাম। হাসান ইমামের যে নতুন বাড়ীঢা উঠছে তারই কাছে জ্যোৎস্নায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেই কথা ভাবা, তারপর সেই কালীর সঙ্গে নালন্দা, সেই রাজগীর যাওয়া, সেই বাঁশের বন, শোনভান্ডার, সেই চেনো, হরনৌৎ, শো-অদ্ভুত নামের স্টেশন সাব-সেই গড়িয়ার জলায় জ্যোৎস্না দেখতে দেখতে সাড়ে আটটার গাড়ীতে রাজপর ফেরা, সেই জাঙ্গিপাড়াকে ভাবতাম কতদারের দেশটা ! কতদিন পরে আজ মনে হোল সেই তারামোহনের পরানো বাড়ীটার কাছ দিয়ে পথ বেয়ে কাদের বাড়ী গিয়েছিলাম-সেই কলকাতায় হাওড়ার পলের কাছে অন্ধ ভিখারিণীকে রাত্রিতে জিজ্ঞাসা করা এই অনবরত ভ্ৰাম্যমাণ জীবন। ঘরতে হবেই যো-পথে যে নেমেছি—এই যে এখন তহশীলদার খবর দিলে রংবার লোক লালকিষণ সিংকে মেরেছে—এদেশের এই এখন খনকার-আমাদের গ্রামেও হয়ত এইরকম খানকার আছে—হানিডাঙ্গায় কি বন্ধনবেড়েতে ডাকাতি হয়েছে—যাই হোক আমি পথে নেমেছি। আমি কিছর মধ্যে নেই, অথচ সবের মধ্যেই আছি-জগতের এই অপব্ব গতির রােপ আমার চোখে পড়েছে। আমি আজন্ম পথিক-পথে বেরিয়েছি সত্যবাবার বাড়ীতে যে দিন থেকে সেই—অনেক কাল আগে সেই ১৯o৮ সালে, এক সন্ধ্যায়। বেহারী ঘোষের বাড়ী মানিকের গান হোল —পরদিন জিনিসপত্র নিয়ে সেই যে বোডিং-এ এলাম-কি ক্ষণে বাড়ীর বাইরে পা দিয়েছিলাম জানি না-সেই বিদেশবাস শার হোল। পরে আর বারাকপািরকে বারোমাসের জন্য একবারও পাইনি-হারিয়ে হারিয়ে পেয়ে আসছি।--কত জগদ্ধাত্রী পাজার ছটিতে, গডফ্রাইডের ছটিতে, বড়দিনে, পজায়—শনিবার পেয়ে এসেছি ছেলেবেলায় --এখনও অন্য ভাবে পাই। এখনও তো শৈশবের সর্বপ্ন দেখা সে সব দেশ দেখতে বাকী আছে, পথে যখন বেরিয়ে পড়েছি তখন সত্যই কি সে সব বাদ থেকে যাবে ? ৷৷ ৯ই ডিসেম্বর, ১৯২৭ ৷৷ আজ ও কালকার ঘোড়া চড়াটা ভাল লাগল। আজ একটা বেলা গেলেই বোরলাম। লালকিষণ সিং-এর বাসার পথটা দিয়ে, কালোয়ার চক হাটের পথ দিয়ে যখন যাচ্ছি তখন সােয্য ডুব-ডুব। যেতে হবে বটেশ্ববরনাথ পাহাড়ের এপার। খাব জোরে সখটিয়া কুলবনের ভিতর দিয়ে ঘোড়া ছটিয়ে দিলাম। ঘোড়ার এই চলাটা আজকাল বড় আরামের মনে হয়। সহদেব সিং-এর টোলার কাছাকাছি সেই বনঝোপভরা পথটায় অন্যদিন থামি, কিন্তু আজ বেলা যাওয়াতে আর না থেমে সোজা বেরিয়ে গেলাম। কুতরাটােলার মধ্যে মেয়েরা ইদারায় জল নিতে আসছে, সেই জন্যে আস্তে আস্তে চালিয়ে বাইরের মাঠটায় পড়ে আবার জোরে ছােটলাম। ঝিল্লীটােলার সামনে দিয়ে কলাইক্ষেতগলোর পাশ দিয়ে এসে একটা উচ আলি পার হলাম—সে জায়গাটি বড় নিজজন, একটা ছোট অশবখ গাছ, বনঝোপ, সন্ধ্যার ঘন ছায়া ও নিজানতা বড় ভাল লাগল। পরেই এসে গঙ্গার ধারে প্রায়ান্ধকার পাহাড়টার দিকে চোখ রেখে দাির দিক চক্রবালের ধসের সান্ধ্য মায়ায় মগধ হয়ে ঘোড়ার ওপর বসে রইলাম। সেই SBO