পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিনটের কথা মনে পড়ে—সেই জ্যোঠামশায়ের সঙ্গে কুঠীর মাঠে গিয়ে ফিরে এসে ভেবেছিলাম কত দরি না গেছি! সেই দিনটি থেকে আজ কত দীর কোথায় চলে এসেছি! মায়ের কথা মনে হোল-ঠিক এই সময় মা বলতেন, আমায়। শীগগির যেতে হবে, ছেলের আবার বিয়ে দোব। কি অপব্ব এই জীবন! এই দঃখের, আনন্দের, শোকের, স্নেহের, আশার, পালকের, ভালবাসার সমিতি জড়ানো—এই অপব্ব গতিশীল সখদঃখের মধর এই সন্দর জীবন-দোলা! ধন্সর পাহাড়টার ওপরকার সন্ধ্যায় অন্ধকার-ঘেরা বনরাজির মাথার দিকে চেয়ে এক অপব্বতা অন্যভব করে গা যেন শিউরে উঠলা-চোখে জল এল। তারপর কতক্ষণ আপন মনে ঘোড়ার উপর বসে রইলাম। সন্ধ্যা যখন বেশ হয়ে গিয়েছে তখন আবার ঝল্লীদাল টোলা দিয়েই অন্ধকার মাঠের বনঝোপের পথ বেয়ে অড়হর ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে এসে লছমন মন্ডলের টোলায় পৌছানো গেল । তাই এইমাত্র অন্ধকারে কাছারীর পথটায় বেড়াতে বেড়াতে মনে মনে ভাবছিলাম, ভগবান, আমি তোমার অন্য সবগ চাই না-তোমার দৈবলোক পিতৃলোক বিষ্ণলোক —তোমার বিশাল অনন্ত নক্ষত্র জগৎ তুমি পণ্যাত্মা মহাপরিষের জন্যে রেখে দিও। যাগে যাগে তুমি এই মাটির পথিবীতে আমাকে নিয়ে এস, এই ফল-ফল, এই শোকদদুঃখের সন্মতি, এই মগধ শৈশবের মায়া-জগতের মধ্যে, দিয়ে বার বারা যেন আসাযাওয়ার পথ তোমার আশীৰ্ব্ববাদে অক্ষয় হয়। এই অমল্য দানের কৃতজ্ঞতার বোঝাই বইতে পারি না-এর চেয়ে আর কোন বড় দান চাইবার সাহস করবো ? বড় ভােলবাসি। এই মাটির জীবনকে—এরই মাধ্যায্য যে লোভী বালকের মত বার বার আসবাদ করে। সাধ মিটাতে পারি না, একে এত সহজে ছেড়ে দিতে পারি কি করে ? ৷৷ ১১ই ডিসেম্বর, ১৯২৭ ৷৷ ইংরাজী নববষের প্রথম দিনটা। কত কথাই মনে হয়, দেখতে দেখতে হা-হ করে অগ্রসর হচ্ছে—এই সেদিন ১৯২৩ সালের এসময় ওদের ওখানে পড়াতে গেলাম —দেখতে দেখতে সে আজ পাঁচ বছর। কাল সকালে ইসমাইলপির থেকে খাব ভোরে বেরিয়ে হাতীর ওপর করে নবীনবাব ও অমরবাবার বাড়ি হয়ে ভাগলপার গেলাম। সন্ধ্যার ট্রেনে অমরবাবকে রওনা করে এসেই উদয়বাব ও বেচবাবকে সঙ্গে নিয়ে সরেনের ওখানে গান শনতে গেলাম। বড় ভাল লাগে সরেনবাবরে গান আমার কাছে—এমন শািন্ধ প্রাচীন সর আমি কোথাও শনিনি—যে সব পদােয় সাধারণের কন্ঠ নামে না, তাঁদের ওপর সরেনবাবর অপব্ব দখল-সরলক্ষীর সকল রকম মান-অভিমানের খোঁজ তিনি রাখেন। আজ সকালে উদয়বাব সেন্টশনে উঠিয়ে দিয়ে গেল। সত্যবাবার ছেলে ভাদর সঙ্গে এক সঙ্গে এলাম--ভারী সন্দের দেখতে, বাবার মত একটি বাজে বকে, একটা হামবড়া ভাব। কদিন বড় হৈ-চৈ গেছে—আমি ভালবাসি না। জগতের পেছনের যে নিতজান জগৎটা আছে, তা শািন্ধ শান্ত সন্ধ্যায়, স্নিগ্ধ বনের লতাপাতার সারভিতে আমার কাছে ধরা দেয়-গভীর রাত্রের জ্যোৎস্নায় আসে। এটনি অফিসের ব্রিফসঙ্কুল কলকোলাহল কৰ্ম্মম মািখর জীবন আমার বিষের মত ঠেকে। তাই আজ শান্ত বৈকালে যখন কল্যবলিয়া নদীতে নৌকা পার হচ্ছিলাম, তখন বড় ভাল লাগল। এই আকাশ, এই বৈকাল, এই শ্যামল শান্তি, এই অপব্ব উদার জগৎ-সন্ধ্যা, জ্যোৎস্না আমার জীবনে এরাই অক্ষয় হয়ে থাকুক। চাই না তোমাদের দশ হাজার টাকার চেক, মিনাভা 8S