পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাতে এক ঝাঁক ঘঘ পথের পাশ দিয়ে উড়ে গেল-বন্দকটার জন্যে হাত নিসপিসর্গ করে । তারপর খাড়া উচুপথে বাঁধটার ওপর ঘোড়া ছটিয়ে পলটার কাছে গেলাম। ডাইনে বাঁয়ে ঘন বাবলা বন ও তেলাকুচা ও অন্য অন্য লতাপাতার ঝোপ-সন্ধ্যার ছায়ায় শ্যামল শীতল। কাটারিয়ার স্টেশনের ওপারে লাল টকটকে সােয্যটা অস্ত গেল। তারপর সেখান থেকে ঘোড়া ফিরিয়ে আবার ঢাল দিয়ে তেলাকুচাঘেরা বাবলা বনটার মধ্যে নােমলাম। জেলে দটাে যেখানে রেলবাঁধের নীচে খাপড়ী বোধে আছে, সেখান দিয়ে নেমে এলাম। তারপর বাবলা বনের পাশ দিয়ে এসে কলবলিয়া পার হয়ে জোরে ঘোড়া ছাড়লাম। খাব বেলা গেলে আজ বেরিয়েছিলাম। কিন্তু এতটা পথ গিয়ে আবার ফিরে এসে ভাল করে অন্ধকর হবার আগেই আজমাবাদ সীমানা ছাড়িয়ে জনকধারী সিং-এর বাসার কাছে এসে পৌছে গেলাম। tা ধুই জানিয়ারী, ১৯২৮ ৷৷ আজ দাপরের পর বটেশ্ববরনাথ পাহাড়ে বেড়াতে গেলাম। অন্য অন্য বার যে পথ দিয়ে যাই আজ সে পথ দিয়ে যাই নি। গােহাটার সামনে দিয়ে একটা পথ গভীর বনের দিকে চলে গিয়েছে, সেদিকে গেলাম। কত কি বনের গাছ-একটু পাথরের ওপর বসে বসে দরে পাহাড়ের ওপরকার বাঁশবনের শোভা দেখলাম। পাহাড়ের ওপর অনেক কাণগুনফল গাছে ফটে আছে। সেখান থেকে তলা দিয়ে গিয়ে গিয়ে গভীর একটা বনের কাছে পৌঁছলাম। কলপনা করছিলাম-চাবিকটা যেন আমার ধনকবটগাছের যে ডালটা ভেঙে নিয়েছিলাম সেটা যেন আমার বাণ। সভ্য জগৎ থেকে দরে এক বন্য আদিম মানষের জীবন যাপন করতে আমার বড় ভাল লাগে। তাই গাছ যেখানে বড় ঘন, ঝোপ খাব নিবিড়—তারই নীচে দিয়ে শকিনো পাতার ওপর দিয়ে মচ মচ করতে করতে যাচ্ছিলাম। এক জায়গায় দেখলাম পাহাড়ের ওপর বন; বেতের গাছ হয়েছে—এর আগে বটেশবির পাহাড়ে বন্য বেতের গাছ কখনও দেখি নি । অনেকক্ষণ পাথরটার ওপর বসে বসে ভাবছিলাম-শৈশব শােধ পিসিমা, হরি রায় এরাই আমার সঙগী ছিল না। সেই সঙ্গে সঙেগ সত্যভামা, ভীস্ম, সাত্যাকি, অশবথামা এই সব পৌরাণিক চরিত্রও আমার কাছে জীবন্ত ছিল। আমাদের গ্রামে আশেপাশে বনেবাদাড়ে তাদেরও সন্মতি শৈশবের সঙ্গে জড়ানো আছে যে। রোদ রাঙা হয়ে এলে পাহাড় থেকে নেমে নৌকায় উঠলাম। একটা সন্টীমার সকাল থেকে চড়ায় আটকে আছে। একটা মেয়ে আমাদের সঙ্গে পার হচ্ছিল, তার বাপের সঙ্গে নতুন শবশরেবাড়ী যাচ্ছে। ঘোমটা খালে কৌতহলী চোখে সন্টীমারটা দেখতে লাগল। নিজে হাল ধরে নৌকা ঠিক ঘাটে লাগিয়ে দিলাম। রাম সাধোকে বললাম, তুমি ঝল্লীটােলা হয়ে চলে যাও। তারপর আমি ঘোড়া ছটিয়ে নিজের অভ্যস্ত স্থানটিতে এসে দাঁড়ালাম। কত কথা মনে হয়—সেই আড়ংঘাটায় বাবার সঙেগ যাওয়া, সেই চাঁপাপকুর, কত কি! জীবনটা কি বিচিত্র, তাই শািন্ধ ভাবি। সত্যবাবদের বাড়ী থেকেও এর বিচিত্ৰতা যেমন দেখলাম-বাংলাদেশ থেকে বহন্দরে এই বিদেশে পাহাড় নদী বন গঙ্গা অস্তগামী রক্তসায্যে বিচিত্রতার মধ্যেও তেমনি দেখছি। খাব অন্ধকার হয়ে গেল। আকাশ-ভরা তারার নীচে দিয়ে অন্ধকারের মধ্যে ঘোড়া ছটিয়ে ভীমদাসটােলা দিয়ে বাঁধের উপর দিয়ে কাছারি ফিরলাম। পথ দেখতে পাই না-ঘোড়া শােধ্য আপনার ঝোঁকে কদমে চলে। শািন্ধ আমি আর নিজজন মাঠ, একরাশ অন্ধকার, নতুন জিনটার মস মাস শব্দ ও মাথার ওপরে জবলজৰুলে বহিস্পতি, SG'