পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দীঘ ছায়াপথ। কাল সকালে এখান থেকে ভাগলপাের যাবো। ৷৷ ৯ই জানিয়ারী, ১৯২৮ ৷৷ আজ কাঞ্চনগড়ে গাড়ী করে গিয়ে বিভাসবাবার সঙ্গে সব কথাবাত্তা কইলাম। তারপর ফিরে এসে ক্লাবে চন্ডীবাব ও অমল্যবাবার সঙ্গে অনেকক্ষণ ধরে সাহিত্যচচ্চা করা গেল। কাল সকালে এক বোতল জ্যাম কিনে নিয়ে ইসমাইল।পরে ষাবো। ক্লাবে মডাণ রিভিউ পড়ছিলাম। সিসিলিয়া মরলের লেখা বড় ভাল লাগল । প্রাচীন দশন, উপনিষদের এই তত্ত্ব বিদেশিনীর এত ভাল লেগেছে-বড় আনন্দ হ'ল। জীবনে জ্ঞানপিপাস, উন্নতিপিপাস আধ্যাত্মিক পবিত্রতার জন্যে ব্যগ্র, ক্ষধাত্ত আত্মা খািব কম। দ্য একজনের সঙ্গে পরিচয় হ’লে বড় আনন্দ পাওয়া যায়। এই কৌতহল, এই ব্যগ্রতা, একটা কিছ হবো, আরও উন্নতি করবো...এইটাই আকবার। টমাস হেনরী রাদারফোডের মত শত শত সন্দির তরণ যােবক প্রাচীন দিনের রাইনের প্রাসাদে প্রাসাদে—তাদের জীবন, দঃখ, আদলটি মনে বড় লাগে। যে মেয়েটি কণেই বিশববিদ্যালয়ে পড়ছে তার কথা জেনে মনে একটা বড় উৎসাহ হয় । এই জ্ঞান-সন্ধা যে জাতির মধ্যে আছে তারা যদি বড় না হয় তবে বড় হবে কে ? শৈশবের সে সবপ্নের দিন। আর নেই। উত্তর জীবনে এই আধ্যাত্মিক ব্যগ্রতা, এই কৌত হল, এই সর্বপ্ন, এই জীবনকে realise করবার মত ক্ষধা-এইটাই অাঁকবার। ৷৷ ১২ই জানিয়ারী, ১৯২৮, ভাগলপাের ৷ পৌষ সংক্রান্তি। সকালে উঠে অনেকক্ষণ ধরে পড়াশনা করা গেল। তারপরে বেলা হলে আমরা চার-পাঁচজনে গঙগাস্নান করতে গেলাম। রোদ বড় প্রখর লাগতে লাগল। ছোট জলাটা পার হয়ে আমি ও নায়েববাব ওপারের চড়ার পারে বড় গঙ্গায় নাইতে গেলাম। আমি আসবার সময় গলপ করছিলাম, সেদিন বটেশ্যুবরনাথের পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে নেমে আসবার সময় অত্যন্ত তুষ্ণায় সেই বৈকালের ছায়াভিরা পাথরের ঘাটটিতে পাণডাঠাকুরের গেলাসে করে সেই নিৰ্ম্মল শীতল গঙগার জল ষে খেয়েছিলাম—তার কথা। ফিরে এসে নতুন ঘরের নিকানোপোঁছানো দাওয়ায় চেয়ার পেতে বসে ভাবছিলাম, বাংলাদেশে বসন্তদিন আসছে--সেই প্রথম গা-নাচানো মন-মাতানো দখিন হাওয়া, সেই পাতা-সাজানো বৈচিগাছ, বাতাবীলেব, ফলের গন্ধ, কোকিলের ডাক, সেই দিনগলো। জীবনকে প্রাণভরে ভোগ করাই জীবনের সার্থকতা : উদার ভাবে প্রসারিত মনে ভোগ বা বেচে থাকবার আর্ট। এটা কুও শিখতে হয়। ৷৷ ১৪ই জানিয়ারী, ১৯২৮ , ইসমাইল।পর ॥ বৈকালে ঘোড়া করে বেড়াতে বেরলাম। লোধাইটোলার ওদিকে জলার ধারের রাইচীক্ষেতের দিকে আকাশটা কি সন্দের দেখাচ্ছিল—এত রাইচীফল ফটে আছে —দরে সন্ধ্যার ধােসর আকাশেল নীচে উন্মক্ত দরপ্রসারী হলদে রং-এর রাইচীক্ষেত কি সন্দিরই দেখাচ্ছিল! এই শকিনো কাশীবনে সোঁদা সোঁদা ছায়াভরা গন্ধ, এই উদার নীল আকাশ, এই ঘনশ্যাম শস্যক্ষেত্র, এই নিৰ্ম্মল বাতাস, চখাচখির সারি, দারের ধন্সর পাহাড়রাজি, এই গতির বেগ—সবসােন্ধ মিলে জীবনকে পরিপণতা ও সাফল্যের তৃপিতিতে ভরিয়ে দেয়। আমি না ভেবে পারিনে যে এই উন্মািক্ত উদার গতিশীল “যাত্রাপথের পথিক যারা নয়, জীবনসম্পদে তাঁরা দীন। S.