পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এ জীবনে প্রথম দেখলাম সরস্বতী পাজার দিন এভাবের বাদল হয়। দােপর থেকে আকাশ অন্ধকার করে টিপ টিপ বষ্টি পড়ছে। এখন সন্ধ্যাবেলা আলো জবলছে, আমার বাংলো ঘরটায় বসে আপন মনে লিখছি।-চারধার অন্ধকার করে বেশ জোরে বিভিন্ট পড়ছে- ঠিক যেন ছেলেবেলার এক শ্রাবণ মাসের বর্ষণমােখর সন্ধ্যা। অথচ এটা বসন্তকালের প্রথম দিনটা—যে সময় কলকাতায় গান করতাম “ফাগান লেগেছে বনে বনে’। আজ অনেক লোক খাবে, বলে দেওয়া হয়েছিল-কিন্তু দই আসেনি বলে ঘোড়া নিয়ে মকুন্দী চলে গেল বাসনাকুন্ডু। বায়না করে সরস্বতী পজোর আয়োজন হ’ল ঠিক আর বছরের মত। ঈশবর ঝা পন্জো করতে এল, আমি ও গোষ্ঠবােব ঠাকুর সাজালাম। নায়েব মশায়ের বাসা থেকে আলপনা দিয়ে পিড়ি নিয়ে আসা হ’ল। বাবার পশ্চিম ভ্ৰমণের ডায়েরীটা ও রামায়ণখানা বার করে দিলাম ঠাকুরের পিাড়িতে। বাবার খাতাখানা নিজের হাতে চন্দন মাখিয়ে ও ফল সাজিয়ে বড় অনন্দ পেলাম। তিনি কি জানতেন তাঁর মাতুর পনের বছর পরে প্রথম যৌবনে তাঁর লেখা ছোড়া-খোঁড়া খাতাখানা বিহারের এক নিজজন কাশীবনের চরের মধ্যে ফলচন্দন দিয়ে অচ্চিতা হবে ? ঈশবর বা ও তার ভাইকে দাঁড়িয়ে থেকে খাওয়ালাম। ওরা রসগোল্লা এদের দিতে চায় না-হকুম দিয়ে আনালাম, এদের দিলাম। রামচন্দ্র সিং আমীনকে লোক পাঠিয়ে আনিয়ে নিয়ে প্রসাদ খাওয়ালাম। তারপর গাঙেগাতারা বাইরে বন্টি মাথায় খেতে বসলো। আমি গিয়ে দাঁড়িয়ে তাদের খাওয়ালাম। প্যাঁড়া মহীয়া দই ও একটা একটা করে গড়ে পেয়ে সেই টিপ টিপ বাদলের দিনে ঠান্ডা কনকনে হাওয়ায় বষণামখের আকাশের নীচে অনাবত মাঠে বসে খেতে খেতে তাদের উৎসাহ লোভ অনলদ দেখে চোখে জল এল । করয়ো চামার ছেলেপিলে নিয়ে অন্ধকারে ঘোর বান্টির মধ্যে ভিজে ভিজে ময়লা গামছা পেতে চিগড়ে খাচ্ছে ও চোঁচাচ্ছে—শখা ছে মালিক, হে মালিক থোড়া গড় ! সিকলা পরিবেশন করছে, কিন্তু তার কথায় কেউ কান দিচ্ছে না। ওরা যখন ভিজছে তখন আমার ঘরে বসে আরাম করবার কোন অধিকার নেই ভেবে আমিও ভিজতে ভিজতে গিয়ে সেখানে দাঁড়ালাম ও হকুম দিয়ে তাকে ও তাদের ছেলেদের আরও দই-গড় আনিয়ে দিলাম। অন্ধকার বান্টিধারায় ধোঁয়াকার ধর্ম ধৰ মাঠের দিকে চেয়ে মনে পড়ল, কতকালের সেই জ্যাঠামশায়ের সঙ্গে সরস্বতীপ জোতে কুঠির নীলকন্ঠ পাখী দেখতে যাওয়া। কতকাল—ক’তকাল-আগে জীবন কি অদভূত, তাই মনে মনে ভাবি— সেদিন সাজকীর সেই অপব্ব দাপারটা মনে পড়ছে। সেই রৌদ্রদীপ্ত তালবক্ষশ্রেণী, সেই অপব্ব শৈশব সমিতিটা-সার্থক ছিল সে যাত্রা আমার। শভিক্ষণে ধৰ্ম্মশালা থেকে বেরিয়েছিলাম। বড়লোকের বাড়ীর অভিজ্ঞতাটকু লিখছি। রামচন্দ্র সিং আমীনকে আমার বড় ভাল লাগে। একা জঙ্গলের ধারে থাকে। আমোদ-উৎসবে ওকে কেউ ডাকে না। বড় শব্দ্ধে-সত্ত্ব লোক। তাই আজ ওকে ডেকেছি। প্ৰসাদ পেয়ে সাফাত্তিতে কাছারী ঘরে বসে গান করছে— তেরা গতি লখি না পারিয়া হরিচন্দর রাজা...পিয়ে ডোম ঘরে শনি-দয়া হোই জী.. আরবারের মত। সেই আমার ভয়ানক Home-sickness, পশ্চিমে হাওয়া 8S দিনলিপি ২/সন্মতির রেখা-৪