পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যদি এই আনন্দের এই প্রাচয্য, অনন্ত জীবনপথের পথিকদের হাজার হাজার বৎসর সমিতির মধ্যে কি অমত সঞ্চিত আছে-যদি অমতের পত্রেরা তাদের সত্যকার অধিকার না হারিয়ে ফেলে ?? জন্মে জন্মে যাগে যাগে হারানো প্রেম ফিরে পাওয়া সম্ভবপন্ন কলপনা, না বাস্তব ? মাতুর ওপারেও কি কলপনা ধ্যান চলবে ? সেখানে তো লেখা নাই-আধ্যাত্মিকতায় আগ্রহ নাই, তবে কোন উদ্দেশ্যে মানষের কম্পমপ্রবাহ ? হয়ত সেখানে তার উত্তর মিলবে। আমি এই আকাশ, এই তারাদল, এই অপব্ব জ্যোৎস্নারান্ত্ৰি, এই নিজজন মন্ত জীবন ভালবাসি। প্রাণভরে ভালবাসি। বাংলার বারান্দায় ডেকচেয়ার পেতে বহণ দরের জ্যোৎস্নাভিরা আকাশের দিকে একমনে চেয়ে রইলাম-কালীঘরের নীচেই যে জঙ্গল আরম্পভ হয়েছে তার মাথা দিয়ে জ্যোৎস্নার ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। অনলত দেশের রহস্যবাত্তার মত একটা বড় নক্ষত্র, নিজজন ঝাউবাড়ের মাথায় জবলজৰল করছে।-হ- হা পশ্চিমে হাওয়া বইছে—কি এক অপব্ব রহস্য মনে যে নিয়ে আসে! কি সব চিন্তা আনো! কি মাধ্যায্য. মনকে কোথায় যে নিয়ে গিয়ে ফেলে! কেবল বহণ দরের কথা মনে পড়ে। আজ কাছারীর সামনে কাশজঙ্গলে সৰ্য্যোস্তের সময় বেড়াতে গেলাম। গভীর নিজজনতা শকিনো কাশের ভরপর গন্ধ-বাঁকাডাল বড় ঝাউএর ঝোপ-শকিনো খটখাটে মাটির গন্ধ-সোঁদা সোঁদা-অনেকদরে ভাগলপরে গঙ্গার ওপর রাঙা সােয্যটা হেলে পড়ছে। এই অপব্ব সয্যাসত এদেশের নিজস্ব সম্পত্তি। এর সঙ্গে পরিচয় এদেশে এসে-বিহারের এই দিগন্তব্যাপী মাঠ, চরের মধ্যেই দিগন্তলক্ষীর ললাটরক্তসিন্দার-বিন্দর মত অপব্ব অস্তসােয্য সবজের সমদ্রের মত শস্যক্ষেতের ওপর যখন ঢলে পড়ে তখনই মনে হয় অনন্ত অন্তরতম অন্তরকে হাতছানি দিয়ে ডাক দিচ্ছে-আমার উন্দাম মক্তিকামী সবাধীনতা প্রিয় মন এই প্রসারিতা এই নিজজন বন্য সৌন্দযোরি ককােশ প্রাচুয্যে মগধ হ’ল, সার্থক হ’ল। তাই আজ ভাবছিলাম জীবনে কেউ শত্র নয়-অলপদিনের ব্যবধানে যাকে মনে হয়। অমিত্র, দারের ব্যবধানে তাকে দেখা যায় সে জীবনে পরম মিত্রের কাজ করছে। রাজকুমারবাব, খাকী—এ দ’জনের মত মিত্র কে ? আমার প্রসারতাপ্রিয় নিজজনতাকামী মনকে ধ্যানের অবসর এরাই না। যগিয়েছে ? ভগবান এদের আত্মাকে আজকালের জ্যোৎসনাধারার মত শত্ৰ করেন। কাল সকালে উঠে জোয়ান ক্ষেত দেখতে দেখতে মন্তিনাথের সন্ত্রীর আদ্যশ্রান্ধের নিমন্ত্রণে বাসনাপর যাবো। সকালে রামগিরিতে রামের ঘোড়াটা যাবে ঠিক হ’ল। আর রামধনিয়া চাকর ব্যাগ নিয়ে যাবে। ভাটালি গোটা দেখে আমি ঘোড়া নিয়ে ঐ পথে অমনি চলে যাবো জোয়ান ক্ষেতে, সেখানে গণপৎ তহশীলদার ও মোহিনীবাব আমীন উপস্থিত থাকবেন। পরে কাছারীতে গিয়ে গঙ্গাস্নান করে আহারাদির পর বৈকালে ফিরবো। বড় ভাল লাগে এই উন্মত্ত জীবন, বড় ভাল লাগে এই দিয়ারা, এই অপৰিব জ্যোৎস্না রাত্রি, এই বন, কাশঝোপ, দারের নীল পাহাড় দটি, এই ঘোড়ায় চড়া, এই শষে ফলের গন্ধ, সকলের চেয়ে মনকে চারপাশে ছড়িয়ে দেবার এই অপব্ব অবকাশ । বাঙ্গালী মন্ডল আজ এক ঝড়ি কুল নিয়ে আজমাবাদ থেকে এসেছে। ওদের বখশিশের কােবল নিয়ে যাবে। সকালে বার হয়ে ঘোড়া করে রাই ক্ষেত দেশে পরশ রামপাের চলে গেলাম। 'd:S