পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মেলা দেখতে যাওয়া হবে না। সকালে উঠে। হা-হা পশ্চিমে বাতাস দিচ্ছে। ভাগলপরে রন্দর উঠছে, মেঘ উড়িয়ে নিয়ে ফেলছে পািব্ব-উত্তর কোণে। কণ্ট মিশ্র যাবার জন্য তৈরী হ’ল-অনেক লোক বটেশ্যুবরনাথ সনান করতে চলেছে। আমিও স্নান করে নিয়ে ঘোড়ায় উঠবো। ঘোড়া নিয়ে বালাটোলার মাঠে খাব যব খাওয়ালাম। সেখান থেকে খানিকটা যেতে ঘোড়ার পেটি আলগা হয়ে গেল। কিন্তু একটা লোককে ডাকিয়ে সেটা ঠিক করে দিয়ে পেটি কষিয়ে ঘোড়া ছেড়ে দিলাম। তিনটাঙার পথটা বেশ ভাল-গাছপালা, আলোকলতার জঙ্গল, ছায়া-খানিকদর যেতে যেতে মেলায় লোক সারবন্দী হয়ে যাচ্ছে দেখলাম-রাঙা কাপড় পরা মেয়ের দল, গররগাড়ীর সারি। মেলায় পৌছে এদিকে ওদিকে খাব বেড়ানো গেল। পরে ঘোড়া ছেড়ে লোকপািণ পথ দিয়ে রওনা হলাম। একস্থানে অতি নিরীহ গোবেচারী ভীতু প্রকৃতির একজনকে দেখলাম। ব্ৰহ্ম মন্ডলের তাঁবতে সে টাকা পয়সা কাপড়ে বোধে নিয়ে এসেছিল। মেয়েরা পরস্পরের সঙ্গে দেখা হ’লে মড়াকান্না কাঁদে—এ আগে কখনো দেখি নি। যখন কুড়ারী তিনটাঙার ওধারের পথে আছি, তখনই সােয্য হেলে পড়েছে-খব ষাঁড়া গাছের ছায়া, পাশেই সবজি গমক্ষেত সগন্ধভরা। ঘাঘ পাখী বনের ছায়ায় ডাকছে—মনে হল কেমন সেই গত পঞ্চমীতে দেশের কুঠীর মাঠ থেকে কুল খেয়ে এসে আজ পচিশ বছর পরে বাড়ীর পিছনে বাঁশবনে বসেছিলাম। সে সস্থানটিতে এরকম বাঁকা রািন্দর পড়েছে—রবিবার আজ যে, দেশে পঞ্চাননতলার কাছ দিয়ে হাট করে নিয়ে যাচ্ছে। বলছে, বেগনের কত দর আজ হাটে। ঝিরি দোলানো পথ দিয়ে মাধবপর নীতিডাঙগার হাট করে ফিরছে।...আরও খানিকটা এসে একজন বললে, বড় রাস্তার খানিকটা গিয়ে পশ্চিম দিকে বাসনাপবুকুর রাস্তা পাওয়া যাবে। সে পথে আসতে আসতে জয়পাল কুমারের বাড়ী। কাছের জঙ্গলে দটাে বন্যাশয়ের একেবারে সামনে পড়ল। তারপরই সোজা পশ্চিমমখে পথ—ঘন ছায়াভিরা। ওধার থেকে অস্তসায্যের রাঙা ফলান আলো বাঁকা হয়ে মাখে পড়েছে। সেই ঘঘর ডাক বড় ভাল লাগছিল। পথ ঠিক আছে কিনা জানতে সামনের একদল মেলাফেরত যাত্রীকে জিজ্ঞাসা করতে তারা বললে, বাসনাপবুকুর যাবে। একেবারে পড়লাম। কলবিলিয়ার ধারে। বাসনাপাকুর আসতে রাঙা সৰ্য্যেটা বহন্দরে দিয়ারার পেছনে অস্ত গেল। ওদিকে পৰ্ণিমার চাঁদটা পিছনে চেয়ে দেখলাম বটেশ্যুবরনাথের পাহাড় ছাড়িয়ে অনেক ওপরে উঠেছে। কলািবলিয়া পার হবার সময় পািব্বদিকে পাহাড়ের ধােসর ছবি, ওপরে উঠা পণচন্দ্রের দিকে চেয়ে চেয়ে বাড়ীর ভিটের কথা ভাবছিলাম-সেই ভাঙা কলসী হাঁড়ি পড়ে আছে—কোনকালের এই সাঁজনা ফলভরা বসন্ত দিনের বাৰ্ত্তা। পিসীমার কাছে কাটানো সেই সব দরের দিনগলো। ছোট্ট এক নোনাগাছের ধারের ওপরের ঘরে কত পণিমার রাত চলে যাওয়া। সামনে দিয়ারার মধ্যে এখান থেকে এখনও ছমাইল। এই রাত্রে যেতে হবে। ঘোড়া ছেড়ে চলে এসে যখন নাঢ়া বইহারে পড়েছি তখন খাব জ্যোৎসনা ফটেছে—বাঁয়ে বালিয়াড়ীর ওপরে কাশবন একটা। আশেপাশে কাশের ঝাড়। নিজজন. ধর্ম ধ করছে মাঠ আর কাশবন—কোন দিকে মানষের সাড়াশব্দ নেই। পরে আন্দাজে ঘোড়া চালিয়ে এসে দেখি সামনে সেই পাড়-দেওয়া জলাটা পড়েছে। ঘোড়া টপকে পার হ’ল-প্রতি মহত্তেই ভয় হচ্ছিল, বঝি পথ হারাবো। পরে জঙ্গলটা পার হয়ে লোধাইটোলার নীচের তলাটার ধারে এসে গমক্ষেতে ঘোড়া ছেড়ে দিয়ে অনেকক্ষণ জ্যোৎস্না-ভরা জলাটার দিকে চেয়ে রইলাম। চাঁপাপকুরের CO