পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এইমাত্র হঠাৎ বড় ঝড় এল। আমি আর গোষ্ঠবাব আমার ঘরের সামনে বসে আছি—এমন সময় দেখা গেল উত্তর-পশ্চিম কোণে ঘন কালো মেঘের পাড়। হাওয়াটা যেন একটি জোর—এমন কি আমরা বলছিলাম বেশ হাওয়া তো! দেখতে দেখতে মেঘের পাড়াটা গমরে উঠলো—তার পরই হ হ ক’রে ঝড়টা এল—সঙ্গে সঙ্গে ধলো ও দিয়ারায় বালির চরের সমস্ত বালি উড়ে আসতে লাগিল-কমে না—এক এক দম কায় আমার ঘরখানা তো কাঁপতে লাগল। ৷৷ ৬ই এপ্রিল, ১৯২৮ ৷৷ আজ খাব বর্ষা ঘনিয়ে এল ভাগলপরের দিক থেকে বিকেলটাতে। ছেলেবেলাকার মত কালবৈশাখী যেন। ঘন-কালো মেঘটা ঘরে গঙ্গার দিক থেকে পৈতির পাহাড়ের দিকে ছড়িয়ে পড়তে লাগল, কালকের সকালে যে চারধারে পরিস্কার বাদামে পাহাড় দেখা যাচ্ছিল—বোংশী, জামালপার-সব ঢেকে দিলে। ঘনান্ধকার আকাশের দিকে চেয়ে মনে হল, এই তো জীবনের সম্পদ।--হয়তো তিন হাজার বছর পরে আবার পথিবীর বকে আসবো-তিন হাজার বছর আগের ষাট বৎসরের প্রতিদিন কি অবদানে, সষমায়, সমিতিতে মন্ডিত হয়ে গিয়েছিল--কিত কালবৈশাখীর মেঘে, কত চোখের হাসিতে, চাঁপাফলের গন্ধে, কত দঃখে, কত গানে -সে সব তখন কি মনে থাকবে ? এই একটা একটা দিন জীবনের মণিহারে গাথা অপব্ব সম্পদ—প্রতিদিনের হাসিকান্না, সখ-দঃখ বন্ধতা-সব। দরে হয়তো মায়ের হাতে পোঁতা সজনে গাছে এতদিনে বনের মধ্যে ডাঁটা ধরে আছে-কে জানে ? হয়তো কেউ তুলে নিয়ে গিয়েছে—নয়তো নয়। গতির অপব্ব বিচিত্ৰতা আমি লক্ষা করছি -সে আমার চোখে পড়েছে। বসে আছি—কিন্তু কি বিশালবেগে চলেছি। ৷৷ ৯ই এপ্রিল, ১৯২৮ ৷৷ কাল থেকে কি একরকম অজানা খাঁশিতে মন থেকে থেকে ভরে উঠছে- ওই দরের নীল পাহাড়টার পাশের দিকে চেয়ে থাকলেই সে আনন্দটা পাই। কাল তাই ভাবছিলাম, হে বিশবদেব, কি অপব্ব কান্ড সন্টিই করেছ। এই মানষের জীবনে, এই বিশেব ! আজ সকালে উঠে গেলাম। গঙগাস্নান করতে। ফিরে এসে কালীঘরে কলসী উৎসগ করে ভারী তৃপ্তি পাওয়া গেল। শয়োরমারী থেকে সিদ্ধেশবর নাপিতকে রামচরিত ডেকে আনলে, কারণ মোহনের অসংখ করেছে। তারপর খাওয়ার পর একটি ঘমোনো গেল। বড় গরমটা পড়ে গিয়েছে। দােপরে রেড়িক্ষেতের কাছটা থেকে ফিরে আসতে হঠাৎ মনে হ'ল, আজ চড়ক, তিরিশে চৈত্র। অমনি সারা গাটা যেন শিউরে উঠল—শত-সমতির দাবার এক ঝাপটা হাওয়ায় খালে গেল। দাপরের খররৌদ্রভরা আকাশের তলায় হলদেরং-এর বনমালার ফল, আকন্দ্যফল, বেগনী--কণ্টিকারী ফল পোড়ো জমিটাতে অজস্র ফটে অনন্তের সন্ধান এনেছে—আমার খড়ের বাংলাঘরের পিছনে। ঐখানটায় দাঁড়িয়ে দরের নীল পাহাড়গলোর দিকে চেয়ে মনে পড়ল, এতক্ষণ আমাদের চড়কতলায় হয়তো দোকানপসার বসে গিয়েছে—হয়তো সেই গাছটােয় ছেলেবেলার মত কাঁটা ভাঙছে-কাল গিয়েছে নীলের দিন। হয়তো গাঁয়ে যাত্রা হবে—হয়তো কত আনন্দ হচ্ছে-পরোনো দলের কেউ কাঁটা ভাঙছে না। নতুন দলের ছেলেপিলেরা, শ’ত জেলে এখনও বেচে No (5)