পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদৌ ওঠে। তেল-নন-লকড়ির কারবার করতে করতে আমাদের অনেকেরই দিন আসে মিলিয়ে। বাঁধা রাস্তায় আমরা জন্মাই এবং মরি-দ-পাশের এই দই রকম পরিচ্ছেদের মাঝখানের রাস্তাটায় আমরা অনেকেই যে ভাবে চলি, তাতে যেন আমাদের স্লটাকেই ব্যংগ করা হয়। সাহিত্য তাই আমাদের এই অতিঅভ্যাসে বন্ধ ঝিমিয়েমাস মনের পক্ষে আকাশ-স্বরপ, দিগন্ত এখানে অত্যন্ত বিস্তৃত, আবহাওয়া সবদাই উক্তজবল, অজস্র খোলা জানলা দিয়ে আদশ্য কেন্দ্র থেকে প্রতিক্ষণে দিব্য যৌবনময় আলো আর চেতনা এসে ঝরে ঝরে পড়ে। এখানে জীবন অহরহ আপনাকে অত্যন্ত ঘন সরে বিকশিত করে। জীবনের এই অতি-বিরাট পটভূমিকার জগতে এসে পাঠক এক মহত্তে আপনাকে বড় করে যায়। দৈনন্দিন জীবনে পারিপাশিবকতার সহস্ৰ ক্ষদ্রতা ক্লেদ গলানি পিছনে পড়ে থাকে—মানষে খানিকক্ষণের জন্য অন্ততঃ খণড কাল ও দেশের অতীত এক জ্যোতিৰ্ম্মময় চেতনাস্তরের মধ্য দিয়ে অববাহিত হয়ে আসে। প্রত্যেকের আত্মসম্পভার এই যে বিস্তারের সম্পভাবনা, কাব্য ও সাহিত্য, তথা আর্টের অন্যান্য বিভাগ, এতে প্রত্যেককে অত্যন্ত প্রত্যক্ষরপে সহায়তা করে । সাহিত্য আরো অনেক কিছ. করে। প্রত্যেক মানষের মধ্যেই কম বেশী পরিামাণে একটি মানষ আছে—যে নাকি স্বপন দেখে, যে নাকি অন্ততঃ কোন কোন ক্ষণের জন্যেও আদর্শবাদের তীব্র প্রেরণা অনভব করে, যে অতীত সমিতির অন্যধ্যানে সহসা উন্মনা হয়, ভবিষ্যতের কলপনায় নেশার মতন হয় আসন্ত-রস-সাহিত্যের একটি প্রধানতম কাজ হচ্ছে, প্রত্যেকের ভেতরকার এই সনপনাল লোকটির তৃপ্তিবিধান করা। তা ছাড়া-কথা-সাহিত্যিক সমসাময়িক সমাজ বা রাষ্ট্রনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দেশকালান্তরিত জীবনের ছবি অাঁকেন। তাতে করে, আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে যে মানষেটি তার নিজ যাগের মানষ আর ঘটনাবলী সম্পবন্ধে খাব উৎসক, তার কৌতহ’ল মেটে। সাহিত্য আমাদের কল্পনা ও অনভবা-বাত্তিকে উক্তজীবিত করে। এর মননশীল দিক প্রধানতঃ জীবন-সংগ্রামে ও সভ্যতার সংগঠনে আমাদের শক্তি যোগায়, এবং রস-সাহিত্যের সাধনা হচ্ছে অবিচ্ছিন্নভাবে সে আনন্দের রােপীকরণ ও পরিবেশন, যে মলে লীলার অনন্দের প্রেরণায় জীবনের হল উৎপত্তি,--সখদঃখ হৰ্ষবেদনা প্ৰেমকীৰ্ত্তি ক্ষয়মত্যুে সব বোপে এবং ছাড়িয়ে যে নৈব্যক্তিক আনন্দসত্তা জীবনের সঙ্গে সমান্তরালভাবে প্রতিক্ষণে আপনাকে প্রবাহিত করে চলেছেন, একটা একটা করে মেলে। ধরছেন। কবি, সাহিত্যিক ও শিলপী যত কথা বলেন তার মন্ম এই যে, আমাদের ধারণী ভারী সন্দর-একে বিচিত্র বললেই বা এর কতটকু বোঝানো হল, আমাদের এই দাৰ্লিটটি বারে বারে ঝাপসা হয়ে আসে, প্রকৃতির বাইরেকার কাঠামোটাকে দেখে আমরা বারে বারে তাকে রিয়ালিটি বলে ভুল করি, জীবন-নদীতে অন্ধ গতানগতিকতার শেওলাদাম জমে, তখন আর স্রোত চলে না, তাই তো কবিকে, রসাম্রস্টাকে আমাদের বার বার দরকার-শকিনো মিথ্যা-বাস্তবের পাক থেকে আমাদের উদ্ধার द55 । প্রসঙ্গক্ৰমে এখানে বলা যেতে পারে যে, সাহিত্য ও শিলাপকে সব সাধারণের উপযক্ত করে দাও-—এই একটি আধনিক ধয়ার কোন মানে হয় না। এ কথার অর্থ তো। এই যে, শ্রেষ্ঠ সাহিত্যের রস অত্যন্ত ঘন, একে খানিকটা জোলো করে দাওএর শিলেপির বাননীতে অত সক্ষম তন্তুর বদলে মোটা দড়ির ব্যবহার প্রচলিত কর। কারণ, তা হ’লে তখন শিক্ষা ও শক্তি নিবিশেষে এ সাহিত্য যাবতীয় জনের হয়ে উঠবে, রসের মন্দিরে ভিড়ের আর কমতি থাকবে না। আমাদের বক্তব্য এই যে, এ রকম কোন আদেশের উপর যদি জোর দেওয়া হয় তবে সাহিত্যের সব্বনাশ করা ΑΟ