পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হবে, যাদের দিকে চেয়ে সাহিত্যে এই ভুয়ো গণতন্ত্রের সরে আমদানির জন্য আমরা এ করতে যাব।—তাদেরও শেষ পৰ্যন্ত উপকার কিছ হবে না। রসসাহিত্যের উপভোগ-সামথ্যের দিক দিয়ে যারা 'হরিজন, সাহিত্যকেও জোর করে 'হরিজন” মাকা করে তাদের সত্তরে না নামিয়ে উক্তরাপে তথাকথিত 'হরিজনদের আর্ট ও সংস্কৃতিগত শিক্ষার এমন সংযোগ ও সাহায্য দিতে হবে, যাতে করে তারা মনের দিক দিয়ে ক্ৰমশঃ উঠে আসতে পারে, সক্ষমতম রসের সবাদ-গ্রহণে পারগ হয়। যেমন ধৰ্ম্মেমরি ক্ষেত্রে, তেমনি এ ক্ষেত্রেও অধিকার মানতে হয়। বাসতবিকপক্ষেও আমরা দেখতে পাই যে, চিন্তামােলক বা সৌন্দৰ্য্যমলেক সত্য, ইন্দ্ৰিয়জয় অতীন্দ্রিয় রসের আবেদন, অথবা একই শ্রেষ্ঠ কাব্য উপন্যাস বা নাটক, জন্মগত ক্ষমতা তখন অনশীলনবত্তির চচ্চাভেদে বিভিন্ন পাঠকের মনে-প্রধানতঃ ইনটেনসিটি'র দিক দিয়ে বিভিন্ন রকমের সাড়া জাগায়। সতরাং আমাদের কত্তব্য হচ্ছে, সাহিত্যের যে একটি স্বাভাবিক আভিজাত্য আছে, এমন কিছ না করা যাতে তা একটকু ক্ষন্নি হয়, পরন্তু আমাদের সবাইকে তার উপযক্ত হতে শিক্ষিত করা। দদিন বা দশদিন পরে কেউ আমার বই পড়বে না, এ ভয় কোনো সত্যিকার কথা-সাহিত্যিক করেন না। করেন তাঁরা, যাঁরা একটা মিথ্যা ভবিষ্যতের ধােমলোকে নিজেদের চিরপ্রতিস্ঠ দেখতে গিয়ে বত্তমানের দাবীকে অস্বীকার করেন। কেউ বাঁচে নি, বড় বড় নামওয়ালা কথাসাহিত্যিক তলিয়ে গিয়েছেন কালের ঘণিপাকের তলায়—সেই যাগের প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলে পরবত্তী যাগের লোকেরা ধলো ঝেড়ে ছোড়া পাতাগলো। উদ্ধার করবার কষ্টও স্বীকার করে না। দ্য দশজন সাহিত্য-রসিক, দীপাঁচজন বৈদগধ্যাগবী মানষ ছাড়া আজকালকার যাগে কথাসরিৎসাগর কে পড়ে, গোটা অখণড আরব্য উপন্যাস কে পড়ে, ডন কুইজোট কে পড়ে ? চসার, দান্তে, মিলটন এদের কথা বাদ দিই-ছাত্র বা অধ্যাপক ছাড়া কেউ এদের পাতা ওলটায় না। --সকলে তো কাব্য-প্রিয় নয়-কিন্তু অত বড় যে নামজাদা ঔপন্যাসিক বালজাক, তাঁর উপন্যাস রাশির মধ্যে কখানা আজকাল লোকে শখ করে পড়ে ? স্কট, হেনরি জেমস, থ্যাকারে, ডিকেন্স সম্পবন্ধেও অবিকল এই কথা খাটে। ফিলেম না। উঠলে অনেকের অনেক উপন্যাস কি নিয়ে লেখা তাই লোকে জানত না। নামটাই থেকে যায় লেখকের, তাঁর রচনা আধমরা অবস্থায় থাকে, অনেক ক্ষেত্রেই মরে ভূত হয়ে যায়। জানি, একথা আমাদের স্বীকার করতে মনে বড় বাধে। খোলাখালি ভাবে বললে আমরা এতে ঘোর আপত্তি করি।-বিশব’, ‘অমর’, ‘শাশ্ববত' প্রভৃতি বড় বড় গালভরা কথা জড়ে জড়ে দীর্ঘ ছাঁদে সেণ্টেন্স রচনা করে তার প্রতিবাদ করি। কিন্তু আমরা মনে মনে আসল কথাটি সকলেই জানি। যে সাহিত্য টবের ফল—দেশের সত্যিকার মাটিতে শিকড় চালিয়ে যা রস-সঞ্চয় করছে না, দেশের লক্ষ লক্ষ মােক নরনারীর আশা-আকাঙক্ষা দঃখ-বেদনা যাতে বাণী খাঁজে পেলে না, তা হয় রক্তহীন, পান্ডার, থাইসিসের রোগীর মত জীবনের র.ে বঞ্চিত, নয়তো সংসার-বিরাগী, উদ্ধবাহ, মৌনী যোগীর মত সাধারণ সাংসারিক জীবনের বাইরে অবস্থিত। মানষের মনের বা সমাজের চিত্র হিসেবে তা নিতান্তই মল্যহীন। পকেবই বলেছি, মিথ্যাকে আশ্রয় করেও কথাসাহিত্যিক রসসিলিট করতে পারেন। কিন্তু সে রস হয় মানষেকে ক্ষণকালের জন্য ভুলিয়ে রাখবার সাহিত্য-সমাজের ও জীবনের সত্য চিত্র হিসাবে তার মাল্য কিছ থাকে না। গভীর রহস্যময় এই মানব-জীবন। এর সকল বাস্তবতাকে এক বহবিচিত্র Գ Տ