পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করে। মনে জাগছিল। গোপালনগরের বারোয়ারীর যাত্রা দেখতে গিয়ে তাই সে ছেলেটার কথা মনে পড়লো যে আজ পচিশ বছর আগে কৃষ্ণঘোষের তামাকের দোকানের বারান্দাতে বসে তার বাবার সঙ্গে যাত্রা দেখতে দেখতে দময়ন্তীর দঃ ফাঁপিয়ে ফাপিয়ে কাঁদতো। সে-সব কথা যাক। অদ্ভুত এই জীবন, অপব্ব এই সন্টির আনন্দ। নিজনে বসে ভেবে দেখো, মানষ হয়ে উঠবে। অনেককাল পরে গরীবপরে নিমন্ত্রণ খেতে গিয়ে খিন ও তার বোন রাণীর সঙ্গে দেখা হোল। আজ প্রায় ষোল বছর আগে ওদের বাসাতে বাড়ির ছেলের মত থাকতুম। তখন আমিও বালক, ওরা নিতান্ত শিশ। সেই খিনকে যেন আর চিনতে পারা যায় না। এত বড় হয়ে উঠেচে, এত দেখতে সন্দর হয়েচে। রাণীও তাই। কতক্ষণ তারা আমাকে কাছে বসিয়ে পরানো দিনের গলপ করতে লাগলো আপনার বোনেদের মত, ছাড়তে আর কিছতে চায় না। শেষকালে রাণী তার শবশারবাড়ির ঠিকানা দিয়ে কলকাতায় গেলেই যেন সে ঠিকানায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করি, এ অনরোধ বার বার করলে। এবার আরও সকলের চেয়ে ভাল লেগেচে যেদিন রামাপদর সঙ্গে বেড়াতে বেড়াতে মোল্লাহাটি ছাড়িয়ে পাঁচপোতার বাঁওড়ের মাখে গিয়েছিলাম। এক তালীবনশ্যাম গ্রামরাজি। আকাশের কি নীল রঙ, ইছামতীর কি কালো জল । নৌকোতে আসবার সময় জ্যোৎস্নারাত্রে নিজজন কাশীবনের ও জলের ধারের বন্যেবড়ো গাছের ও মাথার উপরকার নক্ষত্রবিরল আকাশের কি অসীম সম্পভাব্যতার ইঙ্গিত। এই আনন্দ-দিনের ইতিহাস পাছে ভুলে যাই, তাই লিখে রেখে দিলাম। অনেকসুপার খাতাখানা বলে দেখতে দেখতে এইসব আনন্দের কাহিনী মনে পড়বে— V একটা কথা আজকাল নিস্তজনে বসে ভাবলেই বড় মনে পড়ে। এই পথিবীর একটা spiritual nature আছে, আমরা এর গাছপালা, ফলাফল, আলোছায়া আকাশ-বাতাসের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেচি বলে, শৈশব থেকে এদের সঙ্গে ঘনিষ্পাঠ পরিচয়ের বন্ধনে আবদ্ধ বলে, এর প্রকৃত রূপটি ধরা আমাদের পক্ষে বড় কঠিন হয়ে পড়ে। এই অপব্ব সন্টি যে আমাদের দর্শন ও শ্রবণ-গ্রাহ্য বস্তুসমােহ দবারা গঠিত হয়েও আমাদের সম্পৰ্ণে অজ্ঞাত ও ঘোর রহস্যময়, এর প্রতি অণ, যে অসীম সম্ভাব্যতায় ভরা, মানষের বন্ধি ও কলপনার অতীত এক জটিলতায় আচ্ছন্ন, তা হঠাৎ ধরা পড়ে না। হঠাৎ বোঝা যায় না, কিন্তু কতকগালি প্রাথমিক জ্ঞানকে ভিত্তি করে অগ্রসর হােলে আপনা-আপনি গভীর চিন্তার মাখে ধরা দেয়। এক্ষেত্রে একটা ভুল গোড়া থেকে অনেকে করেন। সেটা এই যে, পকেবাের জ্ঞান মনের মধ্যে এসে পৌছলে অনেকে জ্ঞানের চোখে পথিবীর দিকে চেয়ে বলেন জগৎ মিথ্যা ও মায়াময়। আছে, যেটাকে ইংরেজীতে illusion বলে অনাবাদ করা চলবে। বেদান্তের মায়া illusion নয়, সে একটা দার্শনিক পরিভাষা মাত্র, তার অর্থ সম্ববতন্ত্র। কিন্তু যাঁরা লৌকিক অর্থে ‘মায়া’ শব্দটা গ্রহণ করেন ও অর্থগত তত্ত্বটি মনে মনে বিশ্ববাস করে হৃষ্ট হয়ে ওঠেন, তাঁরা ভুলে যান মানষও তো এই অসীম রহস্যভরা সন্টির অন্তগত। তাঁর নিজের মধ্যে যে আরও অনেক বেশী সম্ভাব্যতা, অনেক বেশী আধ্যাত্মিকতা, অনেক বেশী জটিলতা, আরও বেশী রহস্য। নিজেকে দীন বলে “মায়া” কত্তক প্রতারিত