পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম বাড়ি যাওয়া,-সেই দিদিম। সে সব অপব্ব সর্বপ্ন-ভরা দিনগলি ! জীবনটা যে কী অদ্ভুত, অপব্ব-তা যারা না ভেবে দেখে তারা কি করে বাবাবে ?.. কি করে তারা বঝবে কি মহৎ দান এটা ভগবানের ! সকালে আমরা মোটরে করে বার হলাম-আমি, উপেনবাব, অমরাবাব, করণবাব। ঝরনার কি সমিন্ট জল।...একটা একটি বান্টি হোল। কিন্তু পথের দাধারে কি অপব্ব গাছপালা, লতাপাতা, শালচারা, ঝরনা, বাঁশবন-দধারের ঘন জঙ্গলে জংলা মেয়েরা কাঠ কাটচে—কি সন্দির মেঘের ছায়া—ত্রিকটের দ-এক স্থান থেকে নীচের দশ্য বড় মনোরম। একস্থানে বাঁশের ছায়ায় বসে ডায়েরী রাখলাম। বড় সন্দর দশ্য! অদ্ধেকটা উঠে বড় পরিশ্রম হোল বলে—সকলে উপরে উঠতে চাইলেন না। “অয়ি কুহকিনী লীলে-কে তোমারে আবরিল।” দিবা শালবনের ছায়ায় বসেডায়েরী রাখলাম। আবার মনে পড়ে—বাড়ির কথা। আজি বিজয়া দশমী। আকাশও বেশ পরিৎকার। সকালের দিকে আমরা সকলে মোটরে বার হয়ে প্রথমে গেলাম। পণ বাবার বাড়ি। সেখানে আজ ওবেলা কীৰ্ত্তন হবে, পাণবাব, আসবার নিমন্ত্রণ করলেন। সেখান থেকে বিমানবাবরে বাড়ি। আমি ও করণাবাব মোটরে বসে রইলম-অমরবাব ও উপেনবাব নেমে গেলেন। সেখান থেকে কণীবোগে ফকির বাবর ওখানে যাওয়া গেল। একটা দরে মাটির মধ্যে তপোবনের পাহাড়টা চোখে পড়ল। কালকার বালানন্দ স্বামীর আশ্রমটাও পাশেই পড়লো দেখলাম। আজ কিন্তু সেখানে লোকের ভিড় ছিল না—কতকগালি এদেশী সত্ৰীলোক রঙীন কাপড় পরে দাঁড়িয়েছিল দেখলাম। সেখান থেকে করােণাবাবার বাড়ি হয়ে এক ব্যারিস্টারের বাড়িতে অমরবাবার কি কাজ ছিল তা সেরে যাওয়া গোল দগামন্ডপে ঠাকুর দেখতে। দরগাপ্রতিমা ভারী সন্দর করেচে-অমন সন্দের প্রতিমার মখ অনেকদিন দেখি নি। তারপরে বাঙ্গালীদের পাজামণ্ডপে এসে খানিকক্ষণ থাকতেই তারা খেতে বললে। কিন্তু আমি তখন সনান করি নি। কাজেই আমার शाळा व्षा । বৈকালে নন্দন পাহাড়ে বেড়াতে গেলাম। এত সন্দির সস্থান আমি খাব বেশী দেখি নি, একথা নিঃসন্দেহে বলা যাবে। পাহাড়ের উপর গাছপালা বেশী নেই, বন্য আতাগাছই বেশী। কিন্তু পিছনে ধসের ত্রিকট পাহাড়ের দশ্য ও সম্পমখে অসতরাগরক্ত আকাশের তলে ডিগরিয়া পাহাড়ের শান্ত মতি বাস্তবিকই মনে এক অদ্ভুত ভাব আনে। দরে দরে শাল মহীয়া বন, শািন্ধ উচ-নীচ ভূমি ও বড় বড় পাথর এখানে ওখানে পড়ে আছে। অনেকে পাহাড়ের ওপর বেড়াতে এসেচেন। এত সন্দির হাওয়া !—একথায় মনে হোল বাল্যকালে মডেল ভগিনী বইয়ে এই নন্দন পাহাড়ের হাওয়ার কথা পড়েছিলাম-চারিধারে বনতুলসীর জঙ্গলের মধ্যে বসে ডিগরিয়া পাহাড়ের আড়ালে অস্তমান সংয্যের দিকে চোখ রেখে কত কথাই মনে আসছিল! উপেনবাবর ও দ্বিজেনবাবর অবিশ্রান্ত বকুনির দিকে আমার লক্ষ্য ছিল না। হঠাৎ মনে হোল আজ আমাদের গ্রামেও বিজয়া দশমী। সারা বাংলাতে আজ এসময়টিতে কত নদীতে কত বাচ খেলার উৎসব , কত হাসিমােখ। আমাদের গ্রামের বাঁওড়ের ধারেও এতক্ষণ বিজয়ার আড়ং চলচে—এতক্ষণ বাদা ময়রা তেলেভাজা জিলিপি বিক্ৰী করচে-সবাই নতুন কাপড় পড়ে সেজে এসে বাঁওড়ের ধারে দাঁড়িয়ে a