পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এই নিতান্ত মিনমিনে, একঘেয়ে, ঘরোয়া জীবনযাত্রা, আজ পনেরো বৎসর ধরে যে জীবনের সঙ্গে আমি সপরিচিত,-সেই বহবার দািণ্ট গতানগতিক, একরঙা ছবির মত বৈচিত্র্যহীন জীবনযাত্রা আর আমার ভাল লাগে না। আজ দােপরেবেলা স্কুলের অবসর-ঘণ্টায় চাপি চাপি এসে বাইরের ছাদটাতে বসেছিলাম। আকাশ ঘন নীল, কোথাও এতটকু মেঘ নেই কোনোদিকে—কেবল একটা চিল বহন্দরে একটা কৃষ্ণ-বিন্দর মত আকাশের গা বেয়ে উড়ে যাচ্ছে—সেদিকে চোখ রেখে ভাবতে ভাবতে আমার মন কোথায় যে উড়ে গেল, কি অপব্ব প্রসারিত করে দেওয়ার আকাঙক্ষা যে মনে জাগল-সে-সব কথা কি লিখে বলা যায় ? মনের সে উচ্চ আনন্দের বর্ণনা দেওয়ার উপযক্ত ভাষা এখনও তৈরি হয় নি। কিন্তু কেন সে আনন্দটা এল, তাও বৰ্ব্বতে পারি।--সেটা এল শােধ জগতের বড় বড় মর, বিশাল অরণ্যভূমি, দিক দিশাহীন সমদ্র, মাঠ ও বনঝোপ, মক্ত প্রকৃতির অপব্ব মক্ত রাপের কলপনায় । বাঝতে পারি। এরই জন্যে মনটা হাঁপাচ্চে। প্রকান্ড কোনো মাঠের ধারে বন, বনের প্রান্তে একটি বাংলো-কিংবা জঙ্গলে ঘেরা অভ্রের খনি, বাল-মিশ্রিত পাথরে মাটির গায়ে অভ্র কণা চিক-চিক করাচে, নয়তো উচ্চাবচ পাহাড়ে জমি, যেদিকে চোখ যায় শািন্ধই বন—এই রকম স্থানেই যেতে চাই-থাকতে চাই। এতটকু স্থান চায় না মন। চায় আরও অনেক বড় জায়গা-অনেকখানি বড়—অচেনা, অজানা, রক্ষ, ককাশ ভূমিশ্ৰী হলেও তা-ই চাইবো, এ একঘেয়ে পোষ্যমানা শৌখিীনতার চেয়ে। সন্ধ্যাবেলা যে ছবিটা দেখতে গেলাম গোলাবে, সেটাও আমার আজকের মনের ভাবের সঙেগ এমন চমৎকার খাপ খেয়ে গেল,-"Lief the Viking' গ্রীনল্যান্ড ছেড়ে আরও দারে, অচেনা দেশ খাঁজে বার করতে অজানা পশ্চিম মহাসমাদ্রের ব্যকে পাড়ি জমিয়ে চলে গেল—নিস্তব্ধ রাত্রে জ্যোৎস্না-ঝরা আকাশ-তলায় সদ্য-ফোটা মরসামী ফালগলোর দিকে চোখ রেখে এইমাত্র গোলদীঘির ধারে বসে সেই কথাই আমি ভাবছিলাম।. ভাবতে ভাবতে মনে হল আমি যেন এই জগতের কেউ নই-আমি যেন বহদির কোন নাক্ষত্রিক শান্যপারের অজানা জগৎ থেকে কয়েক দন্ডের কৌতহলী অতিথির মত, পথিবীর বকে এসেচি--ও মরসামী ফল আমি চিনেও চিনি না, প্রতিবেশী মানষদের দেখেও যেন দেখি নি, এ গ্রহের বৈচিত্র্যের সবটাই নিয়েচি কিন্তু এর একঘেয়েমিটা আমার মনে বসতে পারে নি। এখনও। তার কারণ আমার গতি-সবগীয় গতির পবিত্রতা। মনে হল এইমাত্ৰ যেন ইচ্ছামত পথিবীটা ছেড়ে উড়ে আলোকের পাখায় চলে যাবো ওই বহন্দরে ব্যোমের গভীর বকে, যেখানে চিররাত্রির অন্ধকারের মধ্যে একটা নিজজন সাথীহীন নক্ষত্ৰ মিট-মিট করে জবলচে-ওর চারপাশে হয়তো আমাদের মত কোন এক জগতে অপর কোন রােপ বিবত্তানের প্রাণী বাস করে-আমি সেখানে গিয়ে খানিকটা কাটিয়ে আবার হয়তো চলে যাবো কোন সদর নীহারিকা পার হয়ে আরও কোন দরতর জগতের শ্যামকুঞ্জাবীথিতে! এই সময়ে মাতুর অপব্ব রহস্য যা সাধারণ চক্ষর অন্তরালে থেকে গোপন আছে-তার কথা ভেবে মন আবার অবাক হয়ে গেলা-সারা দেহ মন কেমন অবশ হয়ে গেল।. কোন বিরাট শিলপ-স্লন্টার পণ্য অবদান এ জীবন ?...কি অতলািদপশী, মহিমাময় রহস্য!..রোমাণ্য হয়। মন উদাস হয়ে যায়-যখন বাসায় ফিরলাম, তখন যেন, SS)