পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এই গ্রামে আমি ছেলেবেলায় একবার এসেছিলাম--তখনই বেশ জঙ্গল দেখে গিয়েচি, সে জঙ্গল এখন সন্দেরবনকে ছাড়িয়ে যাবার পাল্লায় মেতেচে। এমন কন বে। একে অরণ্য নামে অভিহিত করা চলে অনায়াসেই। এই ভীষণ জঙ্গলের মধ্যে কি করে মানষ বাস করে তা ভেবে পাওয়া দম্পকির। দৰ-তিন দিন সে গ্রামে ছিলাম। তিনঘর মাত্র ভদ্রলোকের বাস, তিনঘরই ব্ৰাহ্মণতা বাদে কামার, কল, কাঙ্গালী আজি আছে হিন্দীর মধ্যে-বাকি চল্লিশ-পঞ্চাশ ঘৱ মাসলমান। সাধারণতঃ হিন্দীর চেয়ে মাসলমানদের স্বাস্থ্য ভালো। সকলের চেয়ে খারাপ অবস্থা হিন্দী ভদ্রলোকের। তাদের স্বাস্থ্য নেই, অর্থ নেই। মািখলেজরা এককালে এ গ্রামের জমিদার ছিলেন—এখন তাঁদের ভাঙা কোঠাবাড়ি আর নারকেল গাছের লম্বা সারি ছাড়া আর বিশেষ কিছ নেই-গোলায় পিাড়ি পড়ে আছে, গোলা বহকাল অন্তহিত, সংস্কার অভাবে আটালিকার জীৰ্ণ দশা ফাটলে বিট-অশািবশ্বের গাছ, সাপের খোলস। যে ক'জন ছেলে ছোকরা এই তিন বাড়িতে থাকে, সন্ধ্যাবেলায় তারা মািখলেজ বাড়ির চন্ডীমন্ডপে বড় তাসের আভা বসায়-দাবাও চলে। এরা কোনো কাজ করে না, লেখাপড়ার ধারও ধারে না। অর্থ উপাজনের ক্ষমতা এদের মধ্যে যা ছিল, তা ক্ৰমে নন্ট হয়ে যাচ্চে। দিন কতক পরে এরা সম্পৰ্ণে অকম্পমাণ্য প্রকৃতির বেকার হয়ে পড়বে। পল্লীবাসী হিন্দী ভদ্ৰলোকের এই সমস্যা সব্বত্রই উগ্ৰমাত্তিতে দেখা দিয়েচে । অর্থ নেই বলেই এদের সর্বাস্থ্যও নেই-মনে সাফাত্তি নেই, পাঁচিশ বছরের যাবকের মন পশ্চাশ বছরের বন্ধের মতো নিস্তেজ { আর একটা জিনিস লক্ষ্য করেচি, তা এর চেয়েও সব্বনাশাজনক। পল্লীগ্রামে এই ধরনের ভদ্রসন্তানদের মধ্যে পানিদোষ অত্যন্ত ছড়িয়ে পড়েচে । প্রায় সকলেরই এ দোষটি আছে, যে মদ পয়সা অভাবে না জোটাতে পারে, সে সস্তার তাড়ি খায়। এর সঙ্গে আছে গাঁজা ও সিদ্ধি। আমি এই গ্রামেরই একটি লোককে দেখলাম, সে বত্তমানে একেবারে ঘোর অকম্পমাণ্য ও স্বাস্থ্যহীন হয়ে পড়েচে। পর্বে সে কোথায় চাকরি করতো, ছেড়ে দিয়ে গ্রামে বসে প্রথমটাতে মহা উৎসাহে চাষ-বাস আরম্ভ করে। কিন্তু কৃষিকায্যের সাফল্যের মলে যে কষ্টসহিষ্ণতা প্রয়োজন ও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন তা তার ছিল না, ফলে হাতের টাকাগলি নন্ট হতে দেরি হয়নি। এখন বাড়ি বসে গাঁজা খায় এবং নাকি হরিনাম করে। এ গেল পরিষদের কথা। মেয়েদের জীবন আরও দঃখময়। তাদের জীবনে বিশেষ কোনো আনন্দ-উৎসবের অবকাশ নেই, ধনভানা, রান্না, সংসারের দাসীবত্তি এই নিয়েই তাদের জীবন। অবসর সময় কাটে পরের চালচলনের নিন্দাবাদে। এতট বাইরের আলো যাবার ফাঁক নেই ওদেয় জীবনে কোনো দিক থেকেই। অথচ তারা নিজেদের শোচনীয় অবস্থা সম্পবন্ধে আদৌ সচেতন নয়। তারা ভাবচে, তারা বেশ আছে । এ সম্পবন্ধে আমার অভিজ্ঞতা। এইবারেই হয়েছিল। পাশের বাড়িতে দাপরে নিমন্ত্রণ, পিসিমার সম্পকে তাঁরাও আমার আত্মীয়। সেই বাড়িরই একটি বধ, ত্ৰিশের মধ্যে বয়স, দেখতে শািনতে নিতান্ত খারাপ নয়আমার খাবার সময় পরিবেশন করলে। তারপর বাড়ির ছেলে দটি বললে—আসন একটি দাবা খেলা যাক। আমি দাবা খেলা জানলেও ভালো জানি না, ওরা সে আপত্তি কানে তুললে না-অগত্যা ওদের মধ্যে গিয়ে বসলাম ওদের সঙ্গে। S8