পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেমন একটা ঘোর ঘোর ভাব।. জীবনকে যে চিনতে পেরেছে-এ জগতে তার ঐশীবয্যের তুলনা নেই-যার কলপনার পঙ্গতা ও ভাব-দৈন্য দৈনন্দিন ভোগবিলাসের উদ্ধে তাকে উঠতে প্ৰাণপণে বাধাদান করেচে, সে শাশবত-ভিখারীর দৈন্য কে দরি করবে ?. আজ অনেককাল পরে—প্রায় বারো বৎসর পরে-শিশিরবাবর চন্দ্রগপ্তের অভিনয় দেখে এইমাত্র ফিরচি। সেই ছাত্রজীবনে ইউনিভাসিটি ইনস্টিটিউটে দেখবার পরে এই আজ দেখা। অভিনয় খব ভালই হল, কিন্তু আমি, কি জানি কেন, মনের মধ্যে প্রথম যৌবনের সে অপব্ব উন্মাদনা, নবীন, টাটকা, তাজা মনের সে গাঢ় আনন্দান ভূতিটকু পেলাম না। দেখে দেখে যেন মনের সে নবীনতাটকু হারিয়ে ফেলিছি। আজকাল অন্যদিক দিয়ে মনের মধ্যে সব সময়ই একটা অপব্ব উৎসাহ পাইএকটা অন্য ধরনের উদ্দীপনা। সেটা এত বেশী যে, তা নিয়ে ভাবতেও পারি না।-- ভাবলে মন অত্যন্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে। মনে হয় এই যে কলকাতার একঘেয়েমি যাকে বলচি-এ-ও চলে যাবে। সে যাত্রার বাঁশি যেন বেজেছে মনে হচ্চে। বহন্দরে যাত্রা। সমদ্রের পারে-প্ৰশান্ত মহাসাগরের পারে। নানা দার্শনিক চিন্তা মনে আসচে, কিন্তু রাত হয়েচে অনেক-আর কিছ লিখবো r 'কদিন বেশ কাটচে। অনেক দিন পরে কদিনের মধ্যে ভোম্বলাবাব, ননী, নান, প্রসাদ-এরা সব এসেছিল। সেদিন অনেকদিন পরে রাজপরে গেলাম। খাকীর সঙ্গে দেখা হল, ভারী যত্ন-আদর করলে। তারপর একদিন গড়িয়ায় জলের ধারের মাঠে, আমি ও ভোম্বল বেড়াতেও গেলাম। কত কি গলপ আবার পরনো দিনের মতই হল। একদিন আমি অবশ্য একা গিয়েছিলাম,—পর্ণিমার দিন। আজ বসে বসে সেই দিনগালোর কথা ভাবছিলাম। যাত্ৰাদলের ছেলে ফণি বাড়িতে খেতে এল-বাবা বদ্ধমান থেকে এলেন—তারও অনেক আগে যখন বকুলতলায় প্রথম বারোয়ারীর বেহালা বাজানো শনে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম-সে- সব টাটকা-—তাজা, আনকোরা আনন্দ এখনও কিন্তু যেন ভাবলে কিছ কিছ পাই। যেদিন সেই প্রথম বেহালা বেজেছিল, যেদিনটা বাবার সঙেগ। নৈহাটনী হয়ে সিঙগাড়ার আল খেয়ে কেওটা থেকে বাড়ি আসছিলাম—যেদিন চড়ক তৈরি করলাম—ঠাকুরমাদের বেলতলায় আমি নিজে ; ঠাকুরমাদের পড়ো ঘরে পাঠশালা-করা, কড়ি খেলার আমোদ, পবিমাখো যাওয়া, মরগাঙে মাছ ধরতে যাওয়া-শনিবারে ছটিতে বাড়ি আসার আনন্দ-কত লিখবো। কে জীবনের এসব মহনীয় আনন্দ-পরম্পরার কথা লিখতে পারে ? আর মনে হয়। আমি ছাড়া এসবের আসল মানে আর কেই বা বঝবে ? তা তো সম্পভব নয়-অন্য সকলের কাছে এগালো নিতান্ত মামলী কথা মনে হবে। এদের পিছনে যে রসভান্ডার লকোনো আছে আমি ছাড়া আর কে তা জানবো ?... অনেকদিন পরে দেশে এসে বেশ আনন্দে দিন কাটচে। রোজ সকালে উঠে ইছামতীর ধারের মাঠটািতে বেড়াতে যাই, ঝাড় ঝাড় সৌদালি ফল ফটে থাকে, এত পাখী ডাকে!..চোখ গেল, বৌ-কথা-ক', কোকিল-কত কি !...বেড়িয়ে এসে ওপাড়ার ঘাটে সন্নান করতে নামি। ওপারের চরের শিমালগাছটার মাথায় তরুণ সায্য ওঠে, S8