পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জটেমারীর কুঠি খজচে, আমাদের বাড়ির পাঁচিলের কাছে। তারপর নিজে গেলাম বেলেডাঙার পলটায়। একখানা যেন ছবি, যখন প্রথম অশবথতলার পথটা থেকে ওপারের দশ্যটা দেখলাম-এ রকম অপব্ব গ্রাম্যদশ্য রূচিৎ চোখে পড়ে। বেলেডাঙা গ্রামের বাঁশবনের সারি নদীর হাওয়ায় মাথা দোলাচ্চে, কৃষক-বধরা জল নিতে নামচে বাঁওড়ের ঘাটে। দর্পারে সবজি আউসের ক্ষেত, মজবুরেরা টােকা মাথায় ক্ষেতে ক্ষেতে ছাঁটার কাজ করচে, ছোট ডোঙা চেপে কেউ বা মাছ ধরতে বেরিয়েচে—যেন ওস্তাদ শিলপীর অাঁকা এক অপব্ব ভুমিশ্ৰীর ছবি। একটি বন্ধ ব্ৰাহ্মণ মাথায় মোট নিয়ে পাঁচপোঁতা থেকে ফিরচে-গোঁসাইবাড়ির কাছে বাসা করেচে, বললে—নাম বণ্ডকুবিহারী চট্টোপাধ্যায়। দেখে ভারী কম্পট হল— একা ভাগ্যহীন, অসহায় মানষ। বললে, শীতলা ঠাকুর নিয়ে গ্রামে গ্রামে বেড়াই —যে যা দেয়, তাতেই চলে। বাড়িতে এক ছোট ছেলে আছে, ও দটি মেয়ে। বসে বসে অনেকক্ষণ হাওয়া খেলাম, সঙ্গে সঙ্গে কত দেশের জীবনধারার কথা, বিশেষ করে যারা দঃখ পেয়েছে তাদের কথাগালো বড় বেশী মনে হল। ভারতের মা দিন-রাত দঃখ করচেন, তাঁর দঃখ শনে সত্যি মনে কষ্ট হয়। কষ্ট হয়। এই ভেবে জগতের এত আনন্দ-ধারার এক কণাও এরা পাচ্চে না-হয়তো শােধ দেখবার চোখ নেই বলেই। ফিরবার পথটি আজ এত ভাল লাগল, ওরকম কোন দিন লাগে না-ডাঁশা খেজর ও নোনা ডালে ডালে দলচে-এত পাখীর গানও এদেশে আছে!..কুঠির মাঠটা যে কি সন্দির দেখতে হয়েচে—ইতস্ততঃ প্রবন্ধমান গাছপালা বনঝোপের সৌন্দয্যে বিশেষ করে যেখানে সেখানে, যেদিকে চোখ যায়—ফলে-ভরা সৌদালি দোলায়িত। আকাশের রঙটা হয়েচে অদ্ভুত—অপব্ব নিজানতা শািন্ধ পাখীদের কল-কাকলীতে ভগন হচ্চে—কেউ কোনো দিকে নেই—ধসর আকাশতলে গভীর শান্ত ও ছায়ার মধ্যে কেবল আমি ও মক্ত উদার প্রকৃতি। কি অপব্ব আনন্দেই মন ভরে যায়, কত কথাই মনে ওঠে, সাধ্য কি কলকাতায় থাকলে এ সব কথা মনে উঠতে পারে! . তারপর ওপাড়ার ঘাটটিতে স্নিগাধ জলে স্নান করতে নেমে মগধ হয়ে গেলাম। শ্যামল, ধন্সর বক্ষশ্রেণী, সিনগধ সন্ধ্যা, স্বচ্ছ নদীজল-মাথার ওপরে সন্ধ্যার প্রথম নক্ষত্রটি উঠেচে, সেদিকে চেয়ে কত শত নক্ষত্রমন্ডলী, বিভিন্নমখী নক্ষত্রস্রোত, অন্য অন্য নীহারিকাদের জগতের কথা মনে হল। বহৎ এড্রোমিডা নীহারিকাদের জগৎ । এই সামান্য, ক্ষদ্র গ্রহটাতে যদি অস্তিত্বের এত বৈচিত্ৰ্য, এত সরসতা, এত সৌন্দয্য —তবে না জানি সে-সব বিশেবা কি অপরােপ আনন্দস্রোত!. সব দঃখের একটা সম্পন্ট অর্থ হয়। জীবনের একটা মহান, বিরাট অথ, একটা সংস্পষ্ট রােপ মনের চোখে ফাটে ওঠে। নিজজন সথান ভিন্ন, পারিপাশিবকের পরিবত্তন ভিন্ন-এ আনন্দ কি সম্পভব ?. ...সন্ধ্যার পরে আমি, সাইমা, ন'দি অনেকক্ষণ গলপগজব করা গেল। আজকার রাতটা কালকার মত গরম নয়, শেষ রাত্রে মেঘ করার দরবন বেশ ঠান্ডা। সারারাত লগঠন ধরে ধরে লোকেরা ও ছেলেদের দল আমাদের বাড়ির পিছনের ঘন জঙ্গলের ওপারের বাগানগলিতে আম কুড়িয়েচে, সারা রাতটি। কি সন্দির বৈকালটি কাল কাটলো যে! কুঠির মাঠে অনেকক্ষণ বসে! পরে নদীজলে সন্ধ্যার কিছর পর্বে সনান করতে নামা গেল। এত অপব্ব ভাব এল মনে, SV