পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঠাণঠা নদীজল, ছিপি-শেওলার পাতার ধারে দাঁড়িয়ে, ছায়াচ্ছন্ন সন্ধ্যায় আকাশ ও শ্যামল গাছগালোর দিকে চোখ রেখে শািন্ধ এদের পিছনে যে বিরাট অবর্ণনীয় শক্তি জাগ্রত আছে, তার কথাই বার বার মনে আসছিল। সবচ্ছ জলের ভেতরে মাছের দল খেলা করচে-একটা ছোট মাছ তিড়িং করে লাফিয়ে শেওলার দামের গায়ে পড়ল। নদীজলের আদ্র সগন্ধ উঠচে-ওপারে মাধবপরের পটোলের ক্ষেতে তখনও চাষারা নিড়েন দিচ্চে-বাদাম গাছের মাথায় একটা নক্ষত্র উঠেছে। সারাদিনের গমন্টের পর শরীর কি সিনীগন্ধই হল! . শেষ রাত্ৰে বেজায় গােমন্ট গরমে আইঢাই করাচি এমন সময় হঠাৎ ভীষণ ঝড়-বাণিটি এল। নাদি, জেলি, বাড়ি-পিসিমা, জেলে পাড়ার ছেলেরা অমনি আম কুড়তে ছােটল। ঘন অন্ধকারের মধ্যে লন্ঠন জেবলে সব ছািটল চাটিয্যে বাগানের দিকে। জোলির মা চোচিয়ে পিছৰ ডাকাতে জেলি আবার ফিরে এল।. সকালটার সিদরে মেঘে। অপরপ শোভা হয়েছিল। পরশ বৈকালটিতে এই রকমই সিদরে মেঘ করেছিল—আমি সেটা উপভোগ করতে পারি নি, গোপালনগরের হাটে গিয়েছিলাম। আজ প্রায় বাইশ বছর পরে ভান্ডারকোলায় নিমন্ত্রণ খেতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কাল সন্ধ্যার কিছর পকেবা বেলেডাঙার মাঠে যে অদ্ভুত মনের রপ ও প্রকৃতির রােপ দেখেছিলাম, অমন কখনো দেখি নি। কাঁচিকাটার পল থেকে ফিরবার পথে মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে বড়োর পত্রটা পকেট থেকে পড়চি—প্রমীলা মারা গিয়েচে লিখচে । সামনে অপব্ব রঙের আকাশটা ঘন হীরাকসের সমদ্রের মত গাঢ় ময়রকন্ঠী রঙের, পিছনে বৰ্ণ-সমদ্র, কোথাও জনমানব নেই-গাছে গাছে পাখীর ডাক, দরে গ্রামসীমায় পাপিয়া সারা উঠিয়েচে,-জীবনের অপব্বতা কি চমৎকার ভাবেই.সন্ধ্যার ছায়াচ্ছন্ন আকাশটার দিকে চেয়ে মনে হল! . কাল বৈকালের দিকে বেলেডাঙার বট-অশবখের পথটা বেয়ে বেড়াবো বলে, কুঠির মাঠের পথটা দিয়ে চললাম সেদিকে-মাঠে পড়েই অবাক হয়ে পশ্চিম আকাশে চেয়ে রইলাম—মগধ আত্মহারা হয়ে গেলাম। সারা বেলেডাঙার বনশ্রেণীর ওপর ঘন কালো কালবৈশাখীর ঝোড়ো মেঘ জমেচে—অনেকটা আকাশ জড়ে। অন্ধচন্দ্রাকার মেঘাচ্ছটা-আর তার ছায়ায় চারিধারের বাঁশবন, ঘন সবজি শিমল ও বটগাছগলো, নীচের আউশের ক্ষেত, বাঁওড়—সবটা জড়িয়ে সে এক অপরােপ মাত্তি ধরেচে। বিশেষ করে ছবি দেখতে মারাত্মক রকমের সন্দর হয়েচে এক শিমল ডালের-তার সোজা মগ-ডালটা মেঘের ছায়ায় ও উড়নশীল ঘন কালো মেঘে ঢাকা আকাশের পটভূমিতে কোনো দেবশিলপীর অাঁকা মহনীয় ছবির মত অপব্ব । সেইটি দেখে চোখ আর আমার ফেরে না-কেমন যেন পা আটকে গেল মাটির সঙ্গে, অবশ হয়ে গেলাম, দিশাহারা হয়ে পড়লাম-ওঃ !—সে দশ্যটার অদ্ভুত সৌন্দয্যের কথা মনে এলে এখনও সারা গা কেমন করে ওঠে। তারপরই সাঁ-স্যাঁ রবে ওপরের দিক থেকে বিরাট ঝড় উঠলো-দৌড়, দৌড়, দৌড়-হাঁপাতে হাঁপাতে যখন গোয়োখালী আমতলাটায় পৌছিয়েছি—আমাদের গ্রামের কোলে—তখন বলিষ্ট পড়তে শার করেচে-জেলি আর প্রিয়-জেলের ছেলে আম কুড়চ্চে—একটি দরিদ্র যবককে আগ্রহ সহকারে আম কুড়তে দেখে চোখে জল এল। কি দিয়েচে জীবন এদের ? অথচ এরা মহৎ, এদের দারিদ্র্যে এরা মহৎ হয়েচে । অতিরিক্ত ভোগ ও সাচ্ছল্যে জীবনের সরল ও বন্ধর পথটাকে হারায় নি।-- SCR मिर्नाळ/० फुभाभ्द्भ-२