পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভরা, সকালগলি স্নিগধ, পাখীর ডাকে ভরপর আর বৈকাল তো ওইরকম সবগীয়, এ পথিবীর নয় যেন—তবে আর লিখি কখন ? মনে মনে তুলনা করে দেখলাম। এ ধরনের বৈকাল সত্যিই কোথাও দেখি নিএই তো পাশেই চালকী, ওখানে এরকম বৈকাল হয় না। এত পাখী সেখানে সেই, এ ধরনের এত বেলগাছ নেই, সৌদালি ফল নেই, বনজঙ্গল বড় বেশী, কাজেই অন্ধকার-এমন চাপা আলোটা হয় না-এ একটা অপব্ব সিভিট, এতদিন তত লক্ষ্য করি নি, কােল লক্ষ্য করে দেখে মনে হল সত্যিই তো এ জিনিস আর কোথাও দেখি নি তো! দেখবোও না—কেবলমাত্র সেখানে দেখা যাবে যেখানকার অবস্থাগালি এর পক্ষে অনাকাল। ইসমাইলপত্র, আজমাবাদ লাগে না। এর কাছে—সে অন্য ধরনের প্রাচয্য, বৈচিত্র্য ও কার্যকায্য কম-বিপলতা বেশী, প্রখরতা বেশী। ভাগলপাের তো লাগেই না। কতকগলো বিশেষ ধরনের পাখী, বিশেষ ধরনের বন-বিন্যাস, বিশেষ ধরনের গাছপালা থাকাতে এ অঞ্চলেই মাত্র ঠিক এই ধরনের বৈকাল সম্পভব হয়েচে। সৌদালি ফােল তার মধ্যে একটা বড় সম্পদ, মাঠে, বনে ওর ঝাড় যখন ফটে থাকে তখন বনের চেহারা একেবারে বদলে যায়—বনদেবীর সাজির একটা অযত্নচয়িত বনফলের গাচ্ছের মত নিঃসঙ্গ মনে হয়। --এই নিঃসঙ্গ সৌন্দয্য ওকে যে শ্ৰী ও মহিমা দান করেচে।--তা আর কোনো ফলে দেখলাম না। এই সন্দর দেশে বাস করেও যারা মানসিক কষ্ট পাচ্ছে, আমার সাইমার মত— তাদের সে কষ্ট সম্পভব হচ্চে শােধ অজ্ঞানতা ও কুসংস্কারের জন্য। মনের সাহস এদেশটা হারাতে বসেচে-কলপনার উদারতা নেই, সদঢ় বিস্তীৰ্ণতা নেই—ব্দটি সেকেলে ও একপেশে, তার ওপর মনের মধ্যে জীবলে নি জ্ঞানের বাতি। এত করে সইমাকে বোঝাই, সে শিক্ষা সাইমা নেয় না, নিতে পারবেও না- কতকগলো মিথ্যা সংস্কার ও কাশীরাম দাস এবং কৃত্তিবাস ওঝার প্রচলিত কতকগলো False Philosophy এদেশের অশিক্ষিতা মেয়েদের মনের সববনাশ করেচে। জীবনের সহজ দশন এদের নেই, বড়ো বয়সেও ভাল করে এখনও চোখ ফোটেনি -কি করা যায়। এদের জন্যে, সৰ্ব্বদাই সে কথা ভাবি। শিক্ষা দবারা মানন্য নিজেকে নিজে পায়, এইটাই জীবনের বড় লাভ। ভগবানকে পাবার আগে নিজেকে লাভ করা যে আবশ্যক তা এরা ভুলে গিয়ে শােধ ভগবান, ভগবান বলে নাকে কাঁদতে থাকে, নিতান্ত দকবল জড়মতির মত। “নায়মাত্মা বলহীনেন লভ্য” এ কথা এরা শোনেও নি কোনোদিন। সারা পল্লী-অঞ্চলগালো এমন হয়ে আছে, এদের দঃখ দাির করতে গেলে তো জঙ্গল কাটালে হবে না, মশা তাড়ালেও হবে না (সেটা যে অনাবশ্যক, তা আমি বলচি না) মাসিক কিছ অর্থ সাহায্যের বন্দোবস্ত করলেও হবে না-এর জন্যে চাই জ্ঞানের আলো---উদার, বিপাল, দীপ্ত জ্ঞানের সাচ্চ-লাইট। আজ অনেকক্ষণ দাসী পিসিমার সঙ্গে গলপ করলাম। সেকালের অনেক কথা হল। ওই সবই আমার জানিবার বড় ইচ্ছে। ঠাকুমাদের চন্ডীমন্ডপের ভিটাতে দাগোৎসব হত, বড় উঠোন ছিল—আন্নাপিসি দািবলা গোবর দিতেন, খাব লোকজন খেত।--নারকেল গাছের পাশে ওই যে সড়ি গলিটা ছিল খিড়কির দোর-মেটে পাঁচল ছিল। ওদিকটা। গোলক চাটিয্যে ছিল বাবার মামাতো ভাই-পিসিমার মা ছিলেন ব্ৰত চাটয্যের পিসি। রাখালী পিসিমা ছিলেন চন্দ্র চাট জ্যের মেয়ে। প্রসঙ্গত বলা যাক যে আজই রাখালী পিসিমার মারা যাওয়ার সংবাদ পাওয়া গেল। যাবো যাবো করে আর ঘটে উঠল না। পিসিমার শবশরিবাড়ি ছিল চৌবেড়ে। নিবারণ রাখালী পিসিমার ভাই, ভারি সন্দর দেখতে ছিল—কলেরাতে মারা যায় আঠারো বছর বয়সে। সাইমাদের SS