পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাড়িতে আসার সময় ওই পথটাতে প্ৰকান্ড এক বকুল গাছ নাকি ছিল—তার তলায় অনেক লোক বসতো। হরি ঠাকুরদাদা তাঁর মাকে খেতে দিতেন না, মায়ের সঙ্গে ভিন্ন ছিলেন, তাঁর দেওর গোসাঁই-বাড়ি ঠাকুরপজো করে দ-পাঁচ টাকা। যা জমাতো, তাই দিয়ে দরিদ্র বন্ধাকে ধান কিনে দিয়ে যেতো। বৈকালে নলে জেলের নৌকোতে বেড়াতে গেলাম মোল্লাহাটির দিকে। ছাঁটার সময় আমাদের ঘাট থেকে নৌকোখানা ছাড়া হল। নদীর দাধারে অপরাপ শোভা, কোথাও বাবলা গাছ ফলের ভারে নত হয়ে নদীর ধারে ঝাঁকে আছে, দধারে ঘাসভরা নিজজন মাঠ, ঝোপেক্সাড়ে ফল ফটে আছে, গাঙ শালিকের দল কিচ-কিচ করচে, বা ধারে ক্ৰমাগত জলের ধারে ধারে নলবন, ওকড়া ও বন্যেবড়োর গাছ-- মাঝে মাঝে চাষীদের পটােল ক্ষেত, বেলডাঙার ঘোষেরা যে নতুন ক্ষেতটাতে পটোল করেচে, তাতে টােকা মাথায় উত্তরের মজারেরা নিড়েন দিচ্চে, ওদিকে কুমড়োর ক্ষেত —ঢাল, সবজি ঘাসের জমি জলের কিনারা ছয়ে আছে, গর, চরছে, বাঁকের মোড়ে দরে খাবােরাপোতা গ্রামের বাঁশবন, সবাহৎ Iyre পক্ষীর পচ্ছদেশের মত নতুন বাঁশের আগা-একটা একটি রোদ মাখা। নদীজলের ঠান্ডা ঠান্ডা গন্ধ বের চে, মাথার ওপরকার আকাশ ঘন নীল, কিন্তু পশ্চিম দিগন্তে গ্রামসীমায় শিমল, কদম গাছের মাথায় মাথায় অপরােপ মেঘস্তােপ, মেঘের পািব্বত-মেঘের গিরিবক্সের ফাঁকােটা দিয়ে অস্তসায্যের ওপারের দেশের খানিকটা যেন দেখা যায়। খানিকটা গিয়ে একধারের পাড় খাব উচ, বন্য নিমগাছের সারি, পাড়ের ধারে গাঙ শালিকের গৰ্ত্ত, নীল মাছরাঙা পাখী শেওলার ধারে ধারে মাছ খাজতে খাজতে একবার ওঠে, একবার বসে—খেজরগাছ, গাবভেরান্ডা, বৈচি, ফলে ভৰ্ত্তি সাঁই বাবলা, আকন্দের ঝোপ, জলের ধারের নলবন, কাশ, যাঁড়া নোনা, গােলণ্ডলতা-দোলানো শিমল গাছ, শালিক পাখী, খেকশিয়ালী, বাঁশঝাড়, উইঢিবি, বনমালোর ঝাড়, বকের দল, উচ, ডালে চিলের বাস, উলঘাস, টোপাপনার দাম। সামনেই কাঁচকাটার খেয়াঘাট, দাখানা ছোট চালাঘর, জনকতক লোক পারের অপেক্ষায় বসে—ডানধারের আকাশটায় অপব্ব হীরাকসের রঙ ধরেচে-গাঢ় নীল। আবার দাপাড় নিন্তজািন, এক এক স্থানে নৌকা তীরের এত নিকট দিয়ে যাচ্ছে যে কেলেকোঁড়া ফলের গন্ধ পাওয়া যায়। বেলা আরও পড়ে এল, চারিদিকে শোভা অপরপ, লিখে তা প্রকাশ করা যাবে না, ডাইনে ঘন সবজি ঘাসের মাঠ, বামে আবার উচু পাড়, আবার বাবলা গাছ, শিমল গাছ, ষাঁড়া গাছ, পাখীর দল শেষ-বেলায় ঝোপে। ঝোপে কলরব করচে—দরে গ্রামের মাথায় মেঘস্তােপ পেছনে পড়েচে—এক এক সস্থানে নদীজািল ঘোর কালো, নিথর কলার পাতার মত পড়ে আছে—দেখাচ্চে যেন গহন, গভীর অতলস্পশা। বাঁকটা ঘরেই অনেকখানি আকাশ এক সঙ্গে দেখা যাচ্চে, পশ্চিম আকাশের কোলে যেন আগন লেগেচে—অনেকখানি দীর পয্যন্ত মেঘে, আকাশে, গাছের মাথায় মাথায় যেন সে আগানের আভা, খাবােরাপোতার ঘাটের পাশে কোন দরিদ্র কৃষক-বন্ধ জলের ধারের কাঁচড়াদাম শাক কোঁচড় ভরে তুলচে। আর মাঝে মাঝে সলন্ডজভাবে আমাদের নৌকোর দিকে চাইচে । আরও খানিকদর গেলাম, আবার সেই নিজজনতা, কোথাও লোক নেই, জন নেই, ঘরবাড়ি নেই, শােধ মাথার ওপর সন্ধ্যার ধােসর ছায়াচ্ছন্ন আকাশ আর নীচে সেই মাঠ ও গাছপালা দন্ধারে। বড়ো ছকু মাঝি ছেলে সঙ্গে নিয়ে দখানা ডিঙি দোয়াড়ি বোঝাই দিয়ে চর্ণি নদীতে মাছ ধরতে যাচ্চে, তিন দিনে সেখানে পৌছকে SqO