পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নীল আকাশ, অগণ্য জ্যোতিলোক, এই সহস্ৰ সহস্ৰ শতাব্দী-আমার পায়ে চলার পথ, নিঃসীম শান্য বেয়ে সে গতি আমার ও সারা মানবের যাগে যাগে বাধাহীন হোক । মনে হল আর এক আজন্ম পথিক-দেবতার কথা, তাঁর কথা আমার এক খাতায় লিখোঁচ। আমার সে কলপনা সত্য কি মিথ্যা সে বিচারের কোনো প্রয়োজন নেই, আমার দন্টিতে আমি তা দেখোঁচি, আমার কাছে সেটা মহাসত্য-revelation, চিন্তা ও কল্পনার আলোকে যা দেখা যায়—তাকে আমি মিথ্যা বলে ভাবতে পারি না। বিদায়, বিদায়—আর কখনো অজয়ের সঙ্গে দেখা হল না, গরজীর সঙ্গে দেখা হল না, কথক ঠাকুরের সঙ্গে দেখা হল না, দেবব্রতের সঙ্গে দেখা হল না—অনেকদিন পরে অজয়ের সেই শৈশবে-শোনা গানটা যেন কোথায় বসে গাচ্চে মনে পড়ে। 'চরণ বৈ মধ্য বিন্দতি—চলা-দবারাই অমাত লাভ হয়, অতএব চলো। দেশে থেকে এসে আজ একেবারেই ভাল লাগচে না। বৈকালগলির জন্যে মন কেমন করচে, কুঠীর মাঠের জন্যে, খাকীর জন্যে, ইছামতীর জন্যে, ফণিকাকার জন্যে -- সকলের জন্যেই মন কেমন হয়েচে। ছেলেবেলায় দেশ থেকে বোডিং-এ ফিরলে এমনটি হত, অনেক কাল পরে মানস ইতিহাসে তার পনরাবত্তি দেখা গেল। কাল কলকাতাটা যেন নতুন নতুন লাগছিল-যেন এ কোন শহর-এর কমব্যস্ত চেহারাতে আমিই কেমন অবাক হয়ে গেলাম, আনন্দবাজার পত্রিকার ওই গালিটি, কলেজ স্ট্রীট, ওয়েলিংটন সন্ট্রীট সব তাতেই লোকে একটা কিছ করচে-ব্যস্ত, ক্ষিপ্র, ছটাচে, বাস থেকে নামচে-দেশের মানষদের সে মতের মত জড়তা, অলস ও কৰ্ম্মম কুণ্ঠতার পরে এসব যেন নতুন লাগল। দিনটি কাটল বেশ ভালোই। সকালে উঠে সজনীর সঙ্গে গেলাম। কাঁচরাপাড়া, সেখান থেকে বড়-জগলে হয়ে মরিচা। এত ঘন বন যে কলকাতার এত কাছে থাকতে পারে, না দেখলে বিশ্ববাস করবার প্রবত্তি হয় না। সেখানে গিয়ে ঔষধ সংগ্রহ করে কাঁচরাপাড়ায় এলাম। বাস রিজাভ করে যাওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে আসা গোল কাঁচরাপাড়া মাঠের মধ্য দিয়ে মোহিত মজমিদারের কাছে। মোহিতবাব শোনা গোল শা'গঞ্জ গিয়েছেন। কাঁচরাপাড়া বাজারে একটা দোকানে কিছ খেয়ে নিয়ে বাসে করে এলম হালিসহর খেয়াঘাটে। এই ঘাটে অনেকদিন আগে দিদিমা থাকতে একবার সৰ্ব্বপ্রথম এসেছিলাম, কেওটা-হালিসহরে থাকতে । মোহিতবাবরে ওখানে খাওয়া-দাওয়া হল ; অনেকক্ষণ সাহিত্য সম্পবন্ধে, বিশেষ করে। বৰ্ত্তমান তরণ-সাহিত্য সম্পবন্ধে কথাবাৰ্ত্তা হল। ভদ্রলোক প্রকৃত কবি, সাহিত্যই দেখলাম ও’র প্রাণ, কবিতা পড়তে বসে যখন ছেলেমেয়েরা তাঁর কোল থেকে টানাটানি করে রসগোল্লা খেতে লাগিল—তখন সে কি দশ্যই হল! বেরিয়ে আমি আর মোহিতবাব, কেওটায় প্রসন্ন গরমশায়ের পাঠশালায় খাজতে খাজতে গেলাম। সে জায়গাটা এখন একটা পোড়ো ভিটে ও জঙ্গল—কোণের সুস জামরাল গাছটা এখনও আছে। সন্ধ্যার অন্ধকারে জামরাল গাছটা চেনা যাচ্ছিল না। —মোহিতবাবা কাছে গিয়ে বললেন--হ্যাঁ, এটা জামরাল গাছই বটে। জামরাল পেকে আছে । তারপর রাখাল চক্ৰবত্তীর সঙ্গে দেখা করলাম। পলিন তাঁর ছেলে। ছেলেবেলায় আমরা এক সঙ্গে বিপিন মাস্টারের পাঠশালায় পড়েচি—এখন ও হটস্পা লম্বা, কালো গোঁপ-দাড়িওয়ালা মানষি। ওর সঙ্গে কথা বললাম প্রায় ত্ৰিশ বছর পরে। শেষ RO