পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কবে ওর সঙ্গে কথা বলেছিলাম কে জানে ?. রাখাল চক্ৰবত্তীর বাড়ির ভিতরের রোয়াক দিয়ে ওদের রান্নাঘরের রোয়াকে বসে মাসিমার সঙ্গে কথা বললাম। শেষ কবে কথা বলেছিলাম, কবে ওদের রোয়াকে পা দিয়েছিলাম, হয়তো তখন আমরা কেওটাতে ছিলাম--তারপর হয়তো শীতলের মায়ের গলপ বলা, কি আতুরীর কাছে ধামা-কুলো বেচার ঘটনাটা—যা আমার কেওটা সম্পকে মনে আছে, ঘটেছিল। তারপরে এক বিরাট আনন্দ, আলাপ, রহস্য, উল্লাস, দঃখ, হষ, শোক, আলোক-পাণ—বিরাট জীবন কেটেচে-পটপটি তলার মেলায়, বকুলতলার দিনগালোতে, পােব-মাখো যাওয়ায়, ইছামতীর ধারের সে অপব্ব শৈশবের আনন্দময় দিনগলি—সেই কতদিন স্কুল থেকে সপ্তাহ পরে ফিরে এসে মায়ের হাতে চৈত্র মাসের দিনে বেলের পানা খাওয়া, তারপর স্কুল কলেজ, বাইরের জীবনে যা কিছ ঘটেচে সবই ওর পরে। কালকার দিনটিতে আবার এতকাল পরে পা দিলাম, রাখাল চক্ৰবত্তীর বাড়ির ভিতরকার রোয়াকে বা পলিনের সঙ্গে কথা কইলাম। জীবনের অপব্বত্ব এই সব মহত্তে কি অদভুত, অপরােপ ভাবেই ধরা পড়ে যায়। করুণা মামার বাবা যোগীনবাব জানলা খালে কথা কইলেন। তিনি আমাকে খব চেনেন দেখলাম। রাত আটটার বাসে হগলী ঘাট এলাম। খাব পরিস্কার আকাশ, খাব নক্ষত্র উঠেচে। রাত এগারোটায় কলকাতা ফেরা গেল। সেই সকাল ছাঁটায় বেরিয়ে কোথায় বড়-জাগালে, মরিচা, দধারের ঘন জঙ্গল, কাঁচরাপাড়া বাজার, বাঁশের পল, হালিসহরের খেয়াঘাট, কেওটা, হগলী ঘাট, নৈহাটী —সব বেড়িয়ে ঘরে আবার কলকাতা ফিরলাম সাড়ে এগারোটা রাত্রে। মোটর বাস ছিল বলেই একদিনে এত ঘোরাঘরি, এমন সব অপব্ব অভিজ্ঞতা সম্পভব হল। রাখাল চক্রবত্তীর বাড়ির পৈটীয় বসে মোহিতবাব, ‘পথের পাঁচালী’ সম্পবন্ধে অনেক কথা বললেন। কেওটায় সেই অশবখ্য গাছটার কাছে রাত আটটার সময় দাঁড়িয়ে ভবিষ্যৎ সাহিত্যমন্ডলী গঠনের ও “শনিবারের চিঠি” অন্যভাবে বার করার জন্য খানিকটা পরামর্শ করা হল। কাজে কতদার হয় বলা যায় না। কাল মোহিতবাব কলকাতায় এসেচেন, সজনীবাব লিখে পাঠালেন। বৈকালে গেলাম প্রবাসী আপিসে। সেখান থেকে বার হয়ে সকলে মিলে প্রথমে যাওয়া গোল ডঃ সশীল দে-র বাড়ি। সেখানে ঢাকার বিত্তমান হাঙ্গামা ও ইউনিভাসিটির গোলযোগ সম্পবন্ধে অনেক কথাবাত্তা হল। সজনীবাবর ব্যক্তিগত কথাও অনেক উঠল। --অনেকক্ষণ বসে সেখানে হাসি-গলপ হল, বেশ উপভোগ করা গেল-ডঃ দে আমার ঠিকানা চাইলে বিপদে পড়লাম-এ বাসাটা যদি না বদলাই তবে, বদলে ফেললে এ ঠিকানাটা দিয়েই বা লাভ কি ? সেখান থেকে বার হয়ে সবাই গেলাম কবি যতীন বাগচীর বাড়ি। মনোহরপকুর রোড তো প্রথমে খাঁজেই বার করা দায়। ট্যাক্সি ছেড়ে দিয়ে বালিগঞ্জ এ্যাভিনিউ বেয়ে আমরা রাত ন’টার সময় একবার। এদিক, একবার ওদিক-সে। মহামশকিল। অনেক কলেট রাত দশটার সময় বাড়ি বেরল। যতীনবাব আমাদের দেখে খাব খশী হলেন। মোহিতবাব আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন ; বললেন, “অলপদিনের মধ্যেই ইনি যশস্বী হয়ে উঠেচেন একখানা বই লিখে, luck আছে বলতে হবে।” আমি মনে মনে খব খশী হয়ে উঠলাম, যা-ই বলি। তারপর জল-টল খাওয়ার পরে সেখান থেকে অনেক রাত্রে বাসায় ফেরা গেল । R8