পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আর আজ কেবলই মনে হচ্চে এই সময়ের পরে কলকাতা ছেড়ে দেশে গিয়ে সে কি অপব্ব জীবন-যাত্রা। কি বৈচিত্র্য! সে শােধ অনভূতিতে ভরা-নানা ধরনের বিচিত্র বাল্য অনভূতি!...আসল জীবনটাই তো হল এই অনভূতি নিয়ে, পালক নিয়ে, উচ্ছবাস নিয়ে। আজও সেই গ্রাম আছে, নদী আছে, কিন্তু সে অপােব অনভূতি আর নেই। বিভূতিদের বাড়ি থেকে যখন আসি তখনও কেমন একটা শান্যতার ভাব, যেন এদের বাড়ির সকলেই আছে—অথচ কি যেন নেই। সবাই কাছে এল, বসলে, গলপগজব করলে—কিন্তু কোথায় সেই ভাদ্রমাসের বৈঠকখানা ঘরের দিনগােলা, সেই মক্কামদিনা যাত্ৰী তাকিয়া-বালিশ, সে আনন্দের ঢেউ ? Where is that child ?... সিধবাবও নেই- কেমন একটা ফাঁকা ফাঁকা। পথে একটা মারামারি হচ্ছিল, পিকেটিং-কারী এক বালককে নাকি পলিসে খব মেরেচে, তাই নিয়ে। বাসে করে বায়সেম্বকাপ দেখতে গেলাম ও সেখান থেকে অনেক রাত্রে এলাম ফিরে। আজ রবিবাসরের অধিবেশনে নিমন্ত্রিত হয়ে গিয়েছিলাম, সেখানে রাজশেখরবাবার সঙ্গে আলাপ হল, "অপরাজিত’ তাঁর খব ভাল লেগেচে বলছিলেন। আজ ক'দিন থেকে মনে কেমন একটা অপব্ব ধরনের আনন্দ পাচ্ছি তা বলবার নয়, লিখে প্রকাশ করবার নয়- সে শােধ বৰ্ব্বতে পারি।--বোঝাতে পারি নে। এইমাত্র জ্যোৎস্নাপলাবিত বারান্দাটাতে একা বসে মেঘের ফাঁকে ফাঁকে আকাশেম দ'-একটা নক্ষত্রের দিকে চেয়ে এই অপব্ব ভাবটাই মনে আসছিল...আনন্দ মানষেকে এত উচ্চেও ওঠাতে পারে! অমত বলে মনে হচ্চিল নিজেকে, সত্য বলে মনে হচ্চিল, বিরাট ও শাশবত বলে মনে হচ্চিল...এক উন্মাদনাময়ী প্রাণশক্তির অভিব্যক্তি!.মগধ হয়ে গেলাম.. দ-একটা চরণ গান তৈরি করে গান গন করে গাইলাম ঃ মনে আবার রঙ ধরেচে। আবার সরের আসা-যাওয়া আজি ক'দিন থেকেই এরকমটা হচ্চে। দিনগালো যে ভয়ানক নিরানন্দ হয়ে উঠেচে এ কথায় কোনো ভুল নেই। এ শব্ধ। হয়েচে সকাল থেকে রাত দশটা পৰ্যন্ত খাটনির জন্যে। অনবরত পরের খাটনি, নিজের জন্য এতটকু ভাববার অবকাশ নেই, অবসর নেই, সকাল দশটা থেকে আরম্ভ করে রাত দশটা পযন্ত বারো ঘণ্টা। মনের অবকাশ মানষের জীবনের যে কত দরকারী জিনিস তা এই কম্পমব্যস্ত, যন্ত্রযাগের অত্যন্ত কম্পমাঠ, হিসাবী ও সময় জ্ঞানসম্পন্ন মানষেরা কিছ বঝবে কি ? এতে মানষেকে টাকা রোজগার করায়, ভাল খাওয়ায়, ভাল পর্যায়, ভাল গাড়ি-ঘোড়া চড়ায়-অর্থাৎ ব্যক্তিত্বকে আরও জাগিয়ে নাচিয়ে তোলে—শক্ত করে বাঁচিয়ে রাখে, বেশ সম্ঠভাবে ও কৃতীর সনামে বাঁচিয়ে রাখেকিন্তু ভারবাহী চোখে-ঠলি বলদের থেকে কোনো পার্থক্যের গন্ডী টেনে দেয় নাজীবনকে মরভূমি করে রেখে দেয়,-টাকার গাছের আবাদ। প্রকৃতির শ্যামল বন্য সম্পভার, নীল আকাশ, পাখীর কুজন, নদীর কলা মম্পমার অস্ত-দিগন্তের সান্ধ্যমায়া —এ সব থেকে বহন্দরে, এক জনহীন, জলহীন বাক্ষলতাহীন মর। এদের দেশভ্ৰমণেও যেতে দেখোঁচি ফাস্টক্লাস কামরায় চেপে, দশদিনের ভ্রমণে দই হাজার টাকা ব্যয় করে, মোটরে করে যাবতীয় স্থান এক নিঃশবাসে বেড়িয়ে, বিলাতী হোটেলে খানা RV)