পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আপনাকেও কিছ বলতে হবে।” খাব আনন্দে কাটল। ওখান থেকে বার হয়ে যাবার কথা ছিল সাহিত্য-সেবক সমিতির অধিবেশনের কিন্তু তা আর যাওয়া সম্ভব হল না। প্রমথবাবার সঙ্গে গলপ করতেই বেজে গোল নটা। অতুল গঞ্জ উপস্থিত ছিলেন--তিনি আমার বইখানার খাব প্রশংসা করলেন। তিনি আমার শিক্ষক ছিলেন ল’ কলেজে। তাঁকে বললাম সে-কথা। আজ একবার দাপরে কাজে গিয়েছিলাম। অক্ষয়বাবদের বাড়িতে। শীতল একখানা হাতের লেখা মাসিক পত্র বার করচে, তাতে লেখা দিতে বলচে। কাল সে আসবে বেলা তিনটের সময়। সেখান থেকে পাক সাকাসের ট্রামে ফিরলাম-বৈকাল ছটা। পািব্বদিকের আকাশ অন্ধকার হয়ে আসচে। শিয়ালদহের কাছটায় ট্রামটা এলেই আজকাল পািব্বদিকে চাই। অন্যদিনও চাই, এমন হয় না—আজি যে কী অপব্ব মনে হল।. মাকাল ফল, পিসিমা, পরনো বঙ্গবাসী, দাপরের রৌদ্র, মাকাল গাছ, ঘাঘ পাখী, বাঁশবন—কত কথা যে এক মহত্তে মনে এল! আমি এরকম আনন্দ একদিন মাত্র পেয়েছিলাম,-যেদিনটা স্কুলের ছাদ থেকে বহন্দরের আকাশটার দিকে চেয়েছিলাম এই সন্ধ্যা ছটার সময়ে। তার পরে সরি লেনের কাছে নেমে গোলাম রাজকৃষ্ণদের বাড়ি যাব বলে। আমি শােধ প্রার্থনা করি, আমাকে আগে নিয়ে চল হে ভগবান-যাতে সব্বদা মন গতিশীল থাকে। কিসে মন বন্ধিত হয়, আনন্দ বন্ধিত হয়, তার সন্ধান তোমার জানা আছে, আমাদের নেই-তা ছাড়া আমার শিলপী মন কি করে আরও পরিপািণটি হবে তার সন্ধান তুমিই জানো। তোমার যে দিকে ইচ্ছা সে দিকেই নিয়ে যেও। অবশেষে ঘরিয়া যাওয়াই ঠিক করে কালকার বম্বেব মেলে বার হয়ে পড়া গেল। দিনটা ছিল খব ভাল-বৈকালের দিকে ট্রেনটা ছাড়ল-বষাশেষে বাংলার এ অংশটায় শ্যামল-শ্ৰী দেখে বৰ্ব্বতে পারলাম, বাংলা বাংলা করি বটে, কিন্তু দেশের সমগ্র পরিপািণতাকে কখনো উপভোগ করি নি-কী অপব্ব অস্ত-আকাশের রঙীন মেঘসত্যুপ, কী অপরােপ সন্ধ্যার শ্যামছায়া!..কোলাঘাটের যে এমন রােপ, তা এর আগে কে ভেবেছিল ? --পিছন থেকে চেয়ে চেয়ে দেখলাম, দেশের ভিটা সেদিন দেখে এসেচি, তারই কথা মন হল—সেই ঝিকরে গাছগলো সন্ধ্যার ছায়ায় বাল্যের আনন্দ-ভরা এক অপরাহের ছায়াপাতে মধর হয়ে উঠেচে এতক্ষণ—এই তো পাজার সময়, বাবা এতদিন বাড়ি এসেচেন, আমাদের পাজার কাপড় কেনা হয়ে গিয়েচে এতদিন---কোজাগরী পণিমার রাত্রির উৎসবের সে সব আনন্দ-কি জানি কেন এই সব সময়েই তা বেশী করে। মনে আসে । সব সময় এই দেশের ভিটার ছবিটাই মনে উৎসাহ, আনন্দ ও প্রেরণা দেয়-এ অতি অদ্ভুত ইতিহাস। বিলাসপার নেমে ঝড় বন্টি। এখন একটি রৌদ্র উঠেচে—গাড়ির মধ্যে বসে বসে লিখচি-কিন্তু মেঘের ঘোর এখনও কাটে নি। . পরশ বৈকালটি সজনীবাব, সবলবাব ও গোপালবাবার সঙ্গে বেশ কেটেচে। প্রথমে রেস্টরেণ্টে কিছ খেয়ে মোটরে করে গেলাম লেকে—সেখান থেকে আউট্রাম ঘাট—সেখানে চা-পানের পর বাসা। ডঃ সশীল দে-র ওখানেও ঘণ্টা তিন-চার গলাপ করে ভারি আনন্দ হল। RS