পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কারাগী রোডে পৌছে দেখলাম। কিছই আসে নি, অতি বর্ষণের ফলে বন্যা হওয়াতে রাস্তা ভেঙে গিয়েচে-গন্তব্য সস্থানে পৌছতে দাই-তিন দিন লাগবেআরও একটি সাহেব আমারই মত বিপন্ন হয়ে পড়েচেন-সতরাং প্রত্যাবৰ্ত্তনই যক্তিযক্ত মনে হল। একজন বাঙালী ওভারসিয়ার ছিলেন, তাঁর নাম সত্যরঞ্জন ভট্টাচাৰ্য্য —তিনি সঙ্গে করে তাঁর বাসায় নিয়ে গেলেন-বেশি লোক।-ঝিঙে ও ঢেড়স। ভাজা, UølG NS GRS ওধারকার রাঙা মাটির দেওয়াল, বেশ দেখতে। মনে হল ওরকম বাড়িতে আমি তো একেবারেই টিকতে পারবো না। সঙ্গে করে দেখালেন, পাশেই জমি কিনোচেন —সেখানে তারকারীর বাগান। একটি গালার কারখানায় নিয়ে গেলেন, গালা চোলাই হচ্চে—একটা অপ্রীতিকর গন্ধ। সেখান থেকে এসে খাওয়া-দাওয়ার পরে সামনের পাহাড়টাতে ওঠা গেল। ওপরে আর একটা পাহাড়-মধ্যে ঘন শাল পলাশের বনমহিষের গলায় একটানা ঘণ্টার ধবনি শোনা যাচ্চে। ওখানকার একজন খলটান ডাক্তার জানপান্নার বিবাহ গেল সেদিন, বিবাহ উপলক্ষে অনেকগলি সাহেব, মেম ও বাঙালী খািলটান মেয়ে এসেছিলেন—এই ট্রেনে যাচ্চেন। বিলাসপারে গাড়ি পেয়ে গেলাম ঠিক মত—ভিড় খাব বেশী ছিল না। বিলাসপরের ও রায়গড়ের মধ্যেকার আরণ্য ভূভাগের দশ্য অতি অপব্বা-কিন্তু দঃখের বিষয় সন্ধ্যার অন্ধকার চারিদিকে নামবার পরেই অধিকতর অপরােপ এমন আর এক বনভূমির ভিতর দিয়ে ট্রেন যেতে লাগল, যার তুলনায় পর্ক্সেব যতগলো দেখোঁচি সব ছোট হয়ে গেল, তুচ্ছ হয়ে গেল—সেটা হচ্ছে রায়গড় ও ঝারসাগদার মধ্যে—সে অপরােপ আরণ্যভূমির বর্ণনা চলে না। দিবাশেষের ঘন ছায়ায় অনতিস্পষ্ট সে দশ্যের মত গভীর অন্য কোনো দশ্য জীবনে দেখি নি কখনও-চন্দ্রনাথের পাহাড়েও নয়। কি প্রকান্ড পাহাড়টাই বরাবর সঙ্গে সঙ্গে একেবারে চক্ৰধরপর পযন্ত এলো!. ...মাঝে মাঝে সাদা মেঘগলো পাহাড়ের গায়ে লেগে আছে, যেন কুমোরেরা পণ পড়চ্চে নীল মেঘের মত পাহাড়টার শোভাই বা কি ! লোকে ভেবে দেখে না, মনের সতকতা কম, তাই সেদিন সেই লোকটা বললে, “মশাই এ অঞ্চলে সবই barren'.barren কোথায় ? তারা কি চক্ৰধরপরের পরের এই গম্ভীর-দশ্য বনানী দেখে নি ?. আমি মনে মনে বঝে নিলাম পিছনের ওই নীল পাহাড়টা, মেঘরাজি যার কোলে --সন্ধ্যাবেলাতে দন্ট ছেলের মত ঘামিয়ে পড়েচে-ওটা আর রেলের পিছনে মাঠগলো নিয়ে একটা প্রকান্ড ত্রিভুজ তৈরি হয়েচে-দেড়শত দইশত বগ মাইল পরিমাণের এই ত্রিভুজটার সবটাই বসতিবিরল, সন্থানে সথানে একেবারে জনহীন অরণ্য, পিছনে বরাবর ওই পাহাড়টা। এই অরণ্যভূমির ও শৈলমালার মধ্য দিয়ে রেলপথটা চলে গিয়েচে। সহসা একটা পাহাড়ের মেঘে ও কুয়াসায় ঢাকা শিখরদেশের কি অদম্পটপািব্ব শোভা ! গাড়ির সবাই বললে—দ্যাখো দ্যাখো—আমার তো হৃদয় বিস্ফারিত হল, চারিধারে এই অপব্ব বনভূমির শোভা দেখে অন্ধকার পব্বত-সানস্থিত অরণ্যের মধ্যে কোথা থেকে সদ্য ফোটা শেফালি ফলের সবাস পেলাম—ট্রেনটাও Rock Cutting-টা ভেদ করে ঝড়ের বেগে ছাঁটেচে—চারিধারে রহস্যাবতে অন্ধকারে ঢাকা সেই শৈলপ্ৰস্থ ও অরণ্য-ভূভাগ-জীবনে এ ধরনের দশ্য কটাই বা দেখোঁচি !...রাত আটটায় এসে বম্বেব মেলা ঝারসাগদাতে দাঁড়াল। এখানে চা ও খাবার খেয়ে নিলাম। সেদিনকার মত উদার-হৃদয় সহচর তো আজ সঙ্গে নেই যে খাবার খাওয়াবেন। ঝারসাগদা থেকে সম্পবিলপরে এক লাইন গিয়েচে। রাত্রে ট্রেনে বেশ ঘািম হল, সকালে এসে কলকাতায় উঠলাম—দপারটা ঘাম হল খাব। ԾO