পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রস্তাব করলেন, সবাই তাতে রাজী। কাল দাপরে সিদ্ধেশ্ববরবাবর ঠাকুরবাড়িতে ছিল নিমন্ত্রণ, সেখানে সকলের সঙ্গে গলপগজেবে বেলা হল তিনটা, সেখান থেকে গেলাম গৈরিক পতাকা দেখতে মনোমোহনে ৷ এ গেল কালকার কথা, কিন্তু আজ এমন অপব্ব আনন্দ পেয়েচি বৈকালের দিকে যে, মনে হচ্চে জীবনে ক—ত দিন এ রকম অদভুত ধরনের বিষাদের ও উত্তেজনার আনন্দ হয় নি। আমার। কিসে থেকে তা এল ? অতি সামান্য কারণ থেকে। ক্লাসে দেবব্রত নাকি ছোট একটা খড়ি নিয়ে পকেটে রেখেছে, ক্লাসে মনিটার তার হাত মচড়ে সেটা নিয়েচে কেড়ে। দেবব্রত এসে আমার চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে কোঁদে ফেললে, বললে, দেখন স্যার, ওরা এত বড় বড় খড়ি নিয়ে যায় বাড়িতে আর আমি এইটকু নিলাম। আমার হােত মচড়ে ও কেড়ে নিলে ?—হাতে এমন লেগেচে। ছোট ছেলের এ কান্না মনে বাজল। তখনি অবশ্যি মনিটারকে বকে খড়িটবুকু দেবব্রতকে ফেরত দেওয়ালাম, কিন্তু দঃখটা আমার মনে রয়েই গেল। সে কি অননভূত দঃখ ও বেদনা বোধ !...দপরের রোদে ছাদে বেড়াতে বেড়াতে মনে হল ভগবান আমাকে এক অপব্ব ভাব-জীবনের উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যেতে চান বঝি। তিনিই হাত ধরে আমাকে নিয়ে চলেছেন কোথায়, তাঁর কোন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য, তিনিই জানেন। অনন্ত জীবনের কতটকুে আমাদের শান্ত-দন্টির নাগালে ধরা দেয় ? মনে হল বহকাল আগে শৈশবে হরি ঠাকুরদাদা সন্ধ্যাবেলা আমাদের বাড়ির দরজা থেকে চাল চেয়ে না পেয়ে মলিন মখে ফিরে গিয়েচেন-সেইদিনটিতেই আমার এই ভাব-জীবনের বোধহয় আরম্ভ। তারও আগে মনে আছে।--মা যেদিন অতি শৈশবে ছোলা ও মাড়ি খেতে দিয়ে দিদিমার কাছে তিরস্কৃত হয়েছিলেন—তাঁর গাের এসেছিলেন, তিনি যে আমাদের জন্যে গরের পাতের মাছের ঝোল ও রাটি তুলে রেখে দিয়েছিলেন, মা তার খবর না জেনেই আমায় দিয়েছিলেন মাড়ি ও ছোলা ভাজা। —সেই ঘটনা থেকে মায়ের উপর এক অদভুত স্নেহ ও বেদনা-বোধ।--তার পরে জাহ্নবীর আমজরানো, পিসিমার শত দঃখ, কামিনী পিসির কন্ট, সেই যাত্রার দলের গান শেষ হওয়ার দিনগালো-কত কি – কত কি ; তারপর বিভূতির কত কম্পট! আজি আবার দেবব্রতের কন্ট—আমার সমগ্ৰ ভাব-জীবনের সমষ্টি এই সব দঃখ ও বেদনা, অবশ্য হয়তো অনেক দঃখ বাস্তব, অনেকটা কালপনিক--কিন্তু আমার মনে তাদের জন্য বেদনানাভূতি আদৌ কালপনিক নয়।-- তাদের সার্থকতা সেখানেই। যাক। তারপর স্কুলে এক অদ্ভুত ব্যাপার হল। সন্ধ্যা হয়ে গেল, আমি ছাদে নীরব সান্ধ্য আকাশের তলে প্রতিদিনের মত পায়চারি করতে লাগলাম—মনে এক অতীন্দ্ৰিয় আনন্দবোধ, সে আনন্দের তুলনা হয় না—ভেবে দেখলাম। এই আনন্দেই জীবনের সার্থকতা। কিসে থেকে তা আসে, সে কথা বিচারে কোনো সার্থকতা নেই আদৌ,--আনন্দ যে এসেচে, সেইটাই বড় কথা ও পরম সত্য। অনেক দিন পরে এ লেখা পড়ে। আমারই মনের নিরানন্দ ও ভাবশান্য মহত্তে আমার মনে হতে পারে যে, এ দিনের আনন্দ একেবারেই অবাস্তব ও মনকে চোখ-ঠারা গোছের হয়তো-নিরানন্দের দিনে এ কথা মনে হওয়া সম্পর্ণে সবাভাবিক বটে, কিন্তু এই খাতায় কালির অাঁচড়ে তা জানিয়ে দিতে চাই যে তা নয়, তা নয়। এ আনন্দ অপব্ব অননভূত অতীন্দ্ৰিয়, মহনীয়া!—এ ধরনের গভীর বেদনামিশ্রিত ভাবোপলবিধ জীবনে খািব কম করেচি। oš