পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আবার আসন পাতবো। বিহার অঞ্চলে দেখোঁচ শীতের শেষে বনে আগন দেয়, সব ঘাস একেবারে পড়িয়ে ফেলো-কি জন্যে ? যেই জ্যৈন্ঠের রৌদ্র পড়বে।-ওই দগধ ঝোপ-ঝাড়ের গোড়া থেকে আবার নবীন, শ্যামল, সবুকুমার তুণরাজি উচ্ছবাসিত প্ৰাণপ্রাচায্যে বেড়ে উঠতে থাকবে-হ-হ করে বাড়ে, পনেরো দিনের মধ্যে সারা কালো গোটা ঘাসের বন ঘন শ্যামশ্ৰী ধরে—এই তো জীবন, এই তো অমরতা। তাই ভাবি, মাস বছর ধরে মানষের বয়স ঠিক করা কত ভুল। ১৩৩৮ সাল পড়ে গেল। আজ, আমার বয়স এক বৎসর বেড়ে গেল বটে হিসেব মত-কিন্তু আমি কি দশ বৎসর কিংবা পনেরো বছর আগেকার সেই বালক নেই অলপ বিস্তর ?. সেদিন গেছলাম রাজপরে অনেক কাল পরে। খিনর সঙ্গে দেখা হল। আবার পরনো পকুরের পথটা ধরে হােটলাম-বাঁশগলো নীচ হয়ে পড়ে আছে—চড়কের সন্ন্যাসীর দল বাড়ি বাড়ি বেড়িয়ে বেড়াচ্চে। দটাের ট্রেনে ফিরে সাড়ে পাঁচটায় স্কুলের মিটিং করলাম। রসিদকে আজ তাড়ানো হল। পথে কোন জায়গায় ফটেন্ত মালতীলতার ফলের গন্ধ, জারমলীন আপিসের কাছে—গোয়াড়ী-কৃষ্ণনগরের সমিতিটা হঠাৎ মনে পড়ল। সেদিন বঙ্কু বলছিল— বাঁকি-করিমালি। পরিচিত নাম, বাবার মাখে ছেলেবেলায় শনেছিলাম কবে-ভুলে গেছলাম, যােগান্ত পরে যেন কথাটা আবার শািনলাম বলে মনে হল। অনেকদিন পরে আজ রবিবারটি বেশ কাটলো। শীঘ্রই গরমের ছটি হবে, কাল রাত্রে বাইরের বারান্দায় বন্টি পড়াতে বিছানা টানাটানি করে ভাল ঘািম হয় নি, উঠতে একটা বেলা হয়ে গেল। হাতমাখ ধয়ে কলেজ স্কোয়ারের দোকানটাতে খাবার খেতে গেলাম---ওরা বেশ হালয়া করে। তারপর গোলদীঘির মধ্যে বসে কামাতে লাগলম একটা নাপিতের কাছে। ওদিকে অনেকগলি গাছ, একটা গাছে সৌদালি ফল ফটেছে—এমন একটা অপরােপ আনন্দ ও উত্তেজনা এল মনে ফটেন্ত ফলেভরা গাছটা দেখে—মনে হল আর বেশী দেরি নেই, এক সপ্তাহ পরে ঐ রকম ফলে ভরা বন-মাঠে গিয়ে ‘অপরাজিত’-র শেষ অধ্যায়টা লিখবো।--সত্যি, জীবনে দেখোঁচি ভবিষ্যতের ভাবনায় সব সময়ই এত আনন্দ পাই! ফিরে এসে অনেকক্ষণ বই লিখলাম। দাপরে একটা ঘামবার চেষটা করা গেল-ঘােম আদৌ হল না। বেলা আড়াইটােক সময় দরজায় শব্দ শনে খালে দেখি নীরদবাব। তাঁর গাড়ি নীচেই দাঁড়িয়েছিল--দজনে উঠে একেবারে দমদমায় সশীলবাবার বাগানে। সত্যি, ওদের সাহচৰ্য্য এত সন্দির লাগে আমার—সত্যিকার প্রাণবন্ত সজীব মন ওদের। সেখানে বাইরের মাঠে চেয়ার পেতে বসে নানা বিষয়ের আলোচনা হল-চা-পান সমাপন হল। শান্তিনিকেতন থেকে অমিয় চক্ৰবত্তীর্ণ পথের পাঁচালী” সম্পবন্ধে লিখেচোন, ‘বই পড়ে গ্রামখানি দেখতে ইচ্ছা! হয়—আর লিখেচোন, শিলপীর সন্ট গ্রামখানি শাশবতকালের, জানি না ভৌগোলিক গ্রামখানা কি রকম দেখবো!” ছটার সময় নীরদবাবার গাড়ি করে ফিরলাম-কারণ রবিবাসর ছিল প্রেমোৎপলবাবার বাড়িতে। আজ খাব মেঘ করেছে, দমদমা থেকে আসতে মেঘালধকার পােবআকাশের দিকে চেয়ে আমার পরনো ভিটা ও বাঁশবনের কথা, মায়ের কড়াখানার কথা ভাবছিলাম-কি অদভুত প্রেরণাই দিয়েচে এরা জীবনে--সত্যি!..নীরদবাবও গাড়িতে বললেন, কড়াখানার দশ্য তাঁকে সেদিন একটা অদভুত উত্তেজনা ও অনভূতি এনে দিয়েছিল মনে—গত রবিবারে সেদিন যখন ওরা ওখানে গিয়েছিলেন। তারপর এলাম 94