পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিজের মধ্য দিয়ে সে শতাব্দীর সঞ্চিত অন্ধকারজাল ও জড়তাকে প্রতিভার ও দিব্যদটির আলোকে প্রসারিত করে দিয়ে যাবে। সেই সত্য-সত্য নিত্যকালের মশালাচি। সেদিন চার বিশ্ববাসের বাড়িতে অনেক রাত পয্যন্ত মিটিং হল। রাত দশটার পরে সেখান থেকে রওনা হয়ে আসতে গিয়ে লাউডন সন্ত্রীটের মোড়ে একটা টায়ার গোল ফেটে। মৌলালীর মোড়ে আবার মহররমের বেজায় ভিড়। অনেক কন্টে রাত্রে বাড়ি পৌঁছলাম। ভোরে সন্নান সেরে বসে আছি, নীরদবাবা গাড়ী নিয়ে এলেন। চা পান করে দমদম থেকে বেরনো গেল। বনগাঁর পথে এ গাড়িরও একখানা। টায়ার গেল । বনগাঁয়ে পৌছে বাজার করে বেলেডাঙ্গা পৌছতে বেলা নয়টা। বটতলায় গিয়ে কাঠ কুড়িয়ে সবাই মিলে রোধে খেলাম। শ্যামাচরণদাদাদের বাড়ি এলাম-সেখান থেকে নৌকা করে নিকু-দলের ঘাট পৰ্যন্ত বেড়ালম-সবাইপরের ঘাটে সনান করলাম। তারপরে সেদিন রাত্রে দমদমাতে ফিরে খেয়ে আবার এলাম বাসাতে। এবার বাড়ি গিয়ে বড় গোলমাল। কদিন বেশ কেটেছিল, শ্যামাচরণদাদার সন্ত্রীর স্নেহ বড় উপভোগ করেচি-বৌদি বড় ভাল মেয়ে—আমার শ্রদ্ধা হয়েচে । বর্ষাবাদলের দিনে পটিদিদির বাড়ি গর-বাছরের সঙ্গে একঘরে বাস করে মনটা খিচড়ে *।। ওখানে এবার তুফান ঠাকরান মারা গেলেন। আসবার আগের দিন তাঁর শ্ৰাদ্ধ হল। রোজ বিকেলে বকুলতলায় বসতুম। জগা ছড়া বলত “অশন বসন রণে সদা মানি পরাজয়, দািনয়নে বারিধারা গঙ্গা যমনা বয়— কথায় কথায় তুমি যেতে বল যমালয়,”-ইত্যাদি ছেলেমানষের মাখে বেশ লাগত। কিছদিন কলকাতা গিয়ে রইলাম-একদিন নীহার রায়ের ওখানে গেলাম, সেখানে তার অনেক বন্ধ বান্ধব বসে আছে, “অপরাজিত' সম্পবন্ধে অনেক কথাবাত্ত হল। নীহার বললে—“অপরাজিত একটা Great Book, আমি এদের সেই কথাই বলছিলাম, আপনি আসবার আগে। ধজন্টিবােবর বাড়িতে একদিন ‘অপরাজিত’ নিয়ে আলোচনা হল আমার সঙ্গে। ভদ্রলোক অনেক জায়গা দাগ দিয়ে পড়েচেন, মাক্তিজনে নোট লিখে। তারপর নীরদের বাড়িতে চা-পাটি উপলক্ষ্যে সনিীতিবাব ও রঙীন, হালদারের সঙ্গে সে সম্পবন্ধে অনেক কথা হল। রবিবারে গেছলাম, আবার পরের রবিবারে ফিরি। সেদিন রাণাঘাটে নেমে কি ভয়ানক বর্ষা। গোপালনগরে নােমলাম, অবিশ্রান্ত ব্যষ্টির মধ্যে দিয়ে। অতি কন্টে গাড়ি যোগাড় করে ফিরলাম। হাটবার, সশীলবাব একটা মোট পাঠিয়েছিলেন কাল খাব গমট হয়েছিল। বৈকালে জেলি, সরলা এরা পড়তে এল- বকুলতলায় চেয়ার পেতে বসে খকুর সঙ্গে খােব গলপ করলাম। রিমঝিম বর্ষার মধ্যে মেঘভরা আকাশের তলা দিয়ে কুঠীর মাঠে বেড়াতে গেলাম। ওপরে বর্ষস্রোত বয়, গাছপালা, সবজি তৃণভূমি-বন্টিতে চারিধারে ধোঁয়া-ধোঁয়া-তারপর গেলাম ওপাড়ার ঘাটে। জল গরম-নেমে সনান করতে করতে চারিদিকে চেয়ে সে কি আনন্দ পেলাম —মাথার উপর উড়ন্ত সজল মেঘরাশি, জলের রং কাকের চোখের মত, কি সন্দির কদম গাছটার রােপ—মনে হল ভাগলপরের সেই অপব্ব সবজি কাশীবনের চর-সাদরেপ্রসারী প্রান্তরের সেই সন্দর প্রাণ-মাতানো সমিতিটা-সেও এমনি বর্ষা-সন্ধ্যা, এমনি মেঘেভরা আকাশ-হাতীর পিঠে চড়ে আমীনের সঙ্গে সেই বেড়ানোটা। আমি জলে সাঁতার দিলাম। মনে হল যেন আমি পথিবীর কেউ নই-আমি দেবতা—এই মহত্তে 8S দিনলিপি/৩ তৃণাঙ্কুর-৪